![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/HS-2-1024x576.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ আগস্ট৷৷ আমরা সকলে ডিম খেয়ে তার খোসা ফেলে দেই ডাস্টবিনে৷ কারণ এটি আমাদের কোনও কাজে লাগে না৷ কিন্তু ফেলে দেওয়া এই ডিমের খোসা দিয়ে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করা যায় তা করে দেখালেন আগরতলার অঙ্কিতা ভৌমিক৷ খোসার উপর কারুকার্য করে সবাইকে শুধু অবাকই করেননি, তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এখন পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক ও একটি জাতীয় স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি৷ তবে আগামী দিনে তাঁর পুরস্কারের তালিকা আরও দীর্ঘ হবে বলে আশাবাদী তিনি৷
রাজধানী আগরতলার রামনগর এলাকার বাসিন্দা অঙ্কিতা ভৌমিক, পেশায় ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব দফতরের একজন কর্মচারী৷ তবে তাঁর নেশা নানান রকম শিল্পকর্ম করা৷ তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে ঁকা, ঘরের ফেলে দেওয়া সামগ্রী কেটে রং করে নানান গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করাই তাঁর নেশা৷ তবে এই সব নিয়ে তিনি কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেননি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন হঠাৎ একদিন তিনি টিভি-র একটি অনুষ্ঠানে দেখেন ডিমের খোসা দিয়ে নানান গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে৷ তা দেখে তাঁর নিজের মনে ইচ্ছে হয় ডিমের খোলস দিয়ে কিছু তৈরি করার৷
এর পর তিনি নিজেই ডিমের খোসা দিয়ে সামগ্রী তৈরির চেষ্টা করেন৷ একে একে তিনি ডিমের খোলস দিয়ে তৈরি করতে থাকেন আনারস, উড়োজাহাজ, গিটার, মাকড়সা, মাছ, সুকটার, মোটরবাইক, ক্যামেরা, জাহাজ ইত্যাদি৷ আবার ডিমের খোসার গায়ে সুক্ষ্ম ও নিপুণ করে কেটে তৈরি করেছন লতা মঙ্গেশকর, কাজি নজরুল, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নানা মনীষীর ছবি৷ এমন-কি একটি ডিমের খোসার উপর তিনি তৈরি করেছেন একাধিক মহান ব্যক্তিত্বের মুখাবয়ব, ছবি ইত্যাদি৷ এখানেই শেষ নয়, ডিমের খোলস দিয়ে তৈরি করেছেন আস্ত একটা তাজমহল৷ আবার তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছে হালের ভারতের চন্দ্র অভিযানের চিত্র৷
কীভাবে তৈরি করেন ও কী কী সামগ্রী লাগে এমন সুক্ষ্ম কাজ করতে? তিনি জানান, তেমন বেশি কিছু সামগ্রীর প্রয়োজন হয় না৷ ডিমের খোলস, ছোট্ট কাটার মেশিন, কাঁচি, আঠা ও রং, এই সব উপকরণ দিয়েই তৈরি হয় তাঁর শিল্পকর্ম৷ কী ধরনের ডিমের খোলস দিয়ে এগুলি তৈরি করেন? উত্তরে তিনি বলেন, চড়ুই পাখির ডিম থেকে শুরু করে রাজহাঁস, চিনা হাঁস, মুরগি, কচ্ছপের ডিমের খোসা দিয়ে তিনি এই সামগ্রীগুলি তৈরি করেছেন৷ টিভিতে দেখার পর নিজের চেষ্টায় এবং কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করছেন এই সব সামগ্রী৷
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ বছর (২০১৯) দুটি পুরস্কার পেয়েছেন৷ এগুলি ’বজ্র বিশ্ব রেকর্ড অ্যাওয়ার্ড’ এবং অপরটি ’ইন্ডিয়া স্টার প্রাউড অ্যাওয়ার্ড’৷ আগামী দিনে তিনি তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে অন্যান্য আরও প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন বলে জানান৷
এই শিল্পকর্ম নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা কী? এমন এক সুক্ষ্ম ও সুন্দর শিল্পকর্মের কী তিনি বাণিজিকীকরণের চিন্তা ধারা নিচ্ছেন? তিনি জানান, আপাতত বাণিজ্যিকীকরণের কোনও চিন্তাভাবনা নেই৷ নেহাৎ শখের বশে এ সব করছেন৷ তাঁর ইচ্ছা এই সামগ্রীগুলি দিয়ে আগরতলায় একক একটি প্রদর্শনী করার৷ তবে কেউ তাঁর কাছ থেকে এই শিল্পকর্ম শিখতে চাইলে তিনি শেখাতে রাজি, জানান অঙ্কিতা৷