![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/362841-article-370.jpg)
নয়াদিল্লি, ৫ আগস্ট (হি.স.): জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির প্রস্তাবে সায় জানাল রাজ্যসভা। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন প্রস্তাবেও সায় জানানো হয়েছে। বিষয়টিকে দেশের ইতিহাসের মাইলফলক বলে চিহ্নিত করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর। এর আগে সোমবার রাজ্যসভায় সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই প্রস্তাবে আগেই সই করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের। প্রস্তাবে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে লাদাখকে। ফলে নতুন করে সূচনা হতে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস| জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই নিয়োগ করা হবে দু’জন লেফটেন্যান্ট গর্ভনরকে| কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা থাকবে, তবে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা থাকবে না| জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল (বিজেডি), শিবসেনা এবং বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)| তবে, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড), ডিএমকে, এমডিএমকে এবং শিবসেনা| কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘বেদনাদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা| যা নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা উত্তাল ছিল দিনভর | এই আবস্থায় সোমবার ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে গেল জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠনের প্রস্তাব | এ দিন সন্ধ্যায় ১২৫-৬১ ভোটে পাশ হয়ে যায় বিলটি । কেন্দ্রের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বহিন্দু পরিষদ। দিল্লির রাজনীতিতে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে খ্যাত। কিন্তু ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি প্রসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়াল আম আদমি পার্টি। সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি নিয়ে কেন্দ্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি। দেশের একতাকে শক্তিশালী করতে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হল বলে জানিয়েছেন তিনি। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি নিয়ে বড় শরিক বিজেপির পাশেই দাঁড়াল জোটসঙ্গী শিবসেনা। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে আখ্যা দিয়ে শিবসেনা প্রধান উদ্ভব ঠাকরে দাবি করেছেন এই দিনটির জন্য বহু মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে স্বপ্ন দেখেছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশেষ মর্যাদা প্রসঙ্গে বিজেপি সঙ্গে মতবিরোধ হলেও ৩৭০ ধারা ক্ষেত্রে বিজেপি পাশেই দাঁড়ালেন তেলেগু দেশম পার্টির সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু। অন্যদিকে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বুদ্ধিদ্বীপ্ত সিদ্ধান্ত নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী সোলি সোরাবজি। সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের ক্রীড়া মহল।
গৌতম গম্ভীর থেকে শুরু করে সুরেশ রায়না সকলেই কেন্দ্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ৭ আগস্ট দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখাবে বামপন্থী দল সিপিআই(এম)। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে ভিন্ন সুর দুই মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। একদিকে যখন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ অন্যদিকে এই বিষয়ে কেন্দ্রের নিন্দায় সরব পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং। দশকের পর দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা থাকার ফলে রাজ্যে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক অগ্রগতির দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়েছে রাজ্য। সোমবার রাজ্যসভায় এমনই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল রাজ্যসভার সাংসদ সমর্থন জানিয়েছে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ভবিষ্যতে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে ফের রাজ্যের মর্যাদা পাবে জম্মু ও কাশ্মীর বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ। এদিন ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে চিন, আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে সংসদে যে প্রসঙ্গে বর্তমানে আলোচনা হচ্ছে তা পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
সোমবার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র সরকার | জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দিল কেন্দ্র সরকার। যার জেরে এর অন্তর্গত ৩৫-এ ধারাও বাতিল হয়ে গেল। সোমবার, এই ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপের জন্য অবশ্য আলাদা করে বিল পাশ করাতে হয়নি মোদী সরকারকে। যেভাবে এই ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ঠিক সেইভাবেই এই ধারাকে সংবিধান থেকে ছেটে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জুটি | সোমবার প্রথমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত এরপর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ স্বাক্ষর করেন বিলে | এদিন রাজ্যসভায় সেই নির্দেশনামাই পড়ে শোনান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী |
কিছুদিন আগেই আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অমরনাথ যাত্রা, পুন্যার্থীদের পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছিল পর্যটকদেরও| এরইমধ্যে কাশ্মীরে বাড়ানো হয় আধাসেনার বহর| উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যেই রবিবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জম্মু ও কাশ্মীরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা| জম্মু ও কাশ্মীরের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও, শুধুমাত্র লাদাখ রিজিওনের ১৪৪ সিআরপিসি ধারা জারি করা হয়নি| তার আগে রবিবার রাত থেকেই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়| গৃহবন্দি করা হয় প্রাক্তন বিধায়ক সাজ্জাদ লোহ-কেও| গ্রেফতার করা হয় সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে| এরপর কী হবে এই উদ্বেগের মধ্যেই ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষজন| ভূস্বর্গের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন দেশের অন্যান্য রাজ্যের মানুষজনও|
সোমবার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই| জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করল কেন্দ্রীয় সরকার| সোমবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পরই উত্তাল হয় রাজ্যসভা| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, বিরোধীদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন| কী হতে চলেছে কাশ্মীরে, তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছিল| এই আবহেই সোমবার সকালে ৭ লোক কল্যাণ মার্গে বিশেষ বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা| সোমবার সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে ৭ লোক কল্যাণ মার্গে শুরু হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক| বৈঠক শেষে ৭ লোক কল্যাণ মার্গ থেকে সোজা সংসদে চলে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| এরপর বেলা এগারোটা নাগাদ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ|
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এদিন রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে| কাশ্মীরে এখন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি, তাই এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত|’ এরপরই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘সমস্ত ধরনের আলোচনার জন্য আমি প্রস্তুত রয়েছি| কাশ্মীর ইসু্যতে সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে আমি প্রস্তুত রয়েছি| সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতেও প্রস্তুত রয়েছি|’ কিন্তু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পরই উত্তাল হয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা| বিরোধীদের তুমুল হই হট্টগোলের মধ্যেও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সই করা নির্দেশনামা পড়ে শোনান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| সংশোধিত কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল পেশ করে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী| স্বাভাবিকভাবেই এই ধারার অধীনে ৩৫-এ ধারাও বিলুপ্তি হতে চলেছে| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য ৩৭০ ধারা বিলোপ করার প্রস্তাব| তুলে নেওয়া হল জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা| আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর| জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা থাকবে| লাদাখও পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে| রবিবার পর্যন্তও জম্মু ও কাশ্মীর ছিল বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাজ্য। কিন্তু, সোমবার থেকে সেটাই পাল্টে গিয়ে হয়ে গেল আর পাঁচটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করল কেন্দ্র। এই ধারায় জম্মু কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল ভারতীয় সংবিধান, তার বিলুপ্তি ঘটল। উপত্যকাবাসীও ঢুকে পড়লেন আম ভারতীয়দের তালিকায়।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের জন্য এক সেকেন্ডেরও বিলম্ব হওয়া উচিত নয়|’ কংগ্রেসকে তিরস্কার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটাই প্রথম নয়, ১৯৫২ এবং ১৯৬২ সালে অনুরূপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩৭০ ধারা সংশোধন করেছিল কংগ্রেস| তাই প্রতিবাদ করার পরিবর্তে, দয়া করে আমাকে কথা বলতে দিন এবং আলোচনার সুযোগ দিন| আপনাদের সমস্ত সন্দেহ ও বিভ্রান্তি পরিষ্কার হয়ে যাবে| আমি আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত রয়েছি|’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘৩৭০ ধারার ছাতার তলায় থেকে তিনটি পরিবার বহু বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরকে লুট করেছে| বিরোধী নেতা (গুলাম নবি আজাদ) বলছেন, ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছে, এটা মোটেও সঠিক কথা নয়| ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীর ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন সই করেছিলেন মহারাজা হরি সিং, কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা এসেছিল ১৯৫৪ সালে|’
সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই প্রস্তাবের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কংগ্রেস, পিডিপি-সহ বিরোধী সাংসদরা| সর্বাধিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-র সাংসদ মীর মহম্মদ ফায়াজ এবং নাজির আহমেদ লাবাই| তাঁরা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যে, সংবিধানের কপি ছিঁড়ে ফেলেন| তখনই বিক্ষুব্ধ পিডিপি সাংসদদের রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নাইডু| রাজ্যসভা থেকে বেরোনোর পর নিজের পরণে থাকা কুর্তাও ছিঁড়ে ফেলেন পিডিপি সাংসদ মীর মহম্মদ ফায়াজ| পিডিপি সাংসদদের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেস| রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, ‘সাংসদদের (পিডিপি-র দু’জন সাংসদ) এই আচরণের তীব্র নিন্দা করছি আমি| ভারতীয় সংবিধান রক্ষার স্বার্থে নিজেদের জীবনও উত্সর্গ করব আমরা, কিন্তু আজ সংবিধানের হত্যা করল বিজেপি|’
প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় সরকার| এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে পিডিপি, কংগ্রেস, জেডি (ইউ), এমডিএমকে ও ডিএমকে-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল| তবে, মায়াবাতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে| বিএসপি-র রাজ্যসভার সাংসদ সতীশ চন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, ‘আমাদের দল পূর্ণ সমর্থন করবে| আমরা চাই এই বিল পাশ হোক| আমাদের দল ৩৭০ ধারা বিল অথবা অন্য কোনও যে কোনও বিল নিয়ে বিরোধিতা করবে না|’ বিএসপি ছাড়াও সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল-সহ বেশ কয়েকটি দল| এআইএডিএমকে-র রাজ্যসভার সাংসদ এ নবনীতাকৃষ্ণণ জানিয়েছেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন আম্মা (জয়ললিতা)| তাই পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন করবে এআইএডিএমকে|’ রাজ্যসভায় বিজু জনতা দল (বিজেডি)-এর সাংসদ প্রসন্ন আচার্য্য জানিয়েছেন, ‘প্রকৃত অর্থে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ| আমাদের দল এই প্রস্তাবকে সমর্থন করবে| আঞ্চলিক দল হলেও, আমাদের কাছে দেশই সর্বাগ্রে|’ শিবসেনার রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, ‘আজ জম্মু ও কাশ্মীর নেওয়া হয়েছে, কাল বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নেওয়া হবে| আমার বিশ্বাস দেশের প্রধানমন্ত্রী অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে পূরণ করবেন|’
তবে, এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)| জেডি (ইউ) নেতা কে সি ত্যাগী জানিয়েছেন, ‘জে পি নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া ও জর্জ ফার্নান্ডেজের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমাদের প্রধান নীতীশ কুমারজী| তাই রাজ্যসভায় আমাদের দল এই বিলকে সমর্থন করবে না| আমাদের ভিন্ন চিন্তাভাবনা| ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার না করা হোক, এটাই আমরা চাইছি|’ ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এআইএডিএমকে, এ প্রসঙ্গে এআইএডিএমকে-কে তীব্র ভ্যত্সর্না করে ডিএমকে প্রেসিডেন্ট এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষজনের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হচ্ছে| আজ গণতন্ত্রের হত্যা করা হল| এআইএডিএমকে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়|’
এদিকে, রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ৩৭০ প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করার পরই ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ভারতীয় বায়ুসেনাকে অ্যালার্ট করা হয়েছে| পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ, ওডিশা, অসম ও দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় পাঠানো হচ্ছে প্রায় ৮,০০০ আধা সেনা|
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা ভারতীয় সংবিধানের একটি অস্থায়ী সংস্থান (‘টেম্পোরারি প্রভিশন’)। এই ধারায় জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ স্বায়ত্ত্বশাসন দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সংবিধানের ধারাগুলি অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকি, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত।
৩৭০ ধারার অধীনেই ছিল ৩৫-এ ধারা। এই ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাও বিশেষ সুবিধা পেতেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন না। কিনতে হলে অন্তত ১০ বছর জম্মু ও কাশ্মীরে থাকতে হত। এ বার যে কোনও রাজ্যের বাসিন্দা সেখানে জমি কিনতে পারবেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। কে স্থায়ী বাসিন্দা এবং কে নয়, তা নির্ধারণ করার অধিকার ছিল রাজ্য বিধানসভার উপরেই ন্যস্ত। এই ধারা অনুযায়ী রাজ্য অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভাই ঠিক করতে পারত, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কারা এবং তাঁদের বিশেষ অধিকার কী ধরনের হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। অর্থাৎ তাঁর সম্পত্তিতে আর কোনও অধিকার থাকত না। এমনকি, তাঁর উত্তরাধিকারীরাও ওই সম্পত্তির মালিকানা বা অধিকার পেতেন না।
দিল্লির রাজনীতিতে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে খ্যাত। কিন্তু ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি প্রসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়াল আম আদমি পার্টি।
সোমবার নিজের ট্যুইট বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল লিখেছেন, জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সমর্থন করছি। আশা করব রাজ্যে সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিয়ে আসবে এই সিদ্ধান্ত।
নিজের ট্যুইটবার্তায় অরুণ জেটলি লিখেছেন, ঐতিহাসিক ভুলকে সংশোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অভিনন্দন জানাই। একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে এদিন সংশোধন করা হল। সংবিধানের ৩৬৮ ধারাকে অগ্রাহ্য করে পেছনে দরজা দিয়ে ৩৫(এ) ধারা নিয়ে আসা হয়েছিল। নিশ্চত ভাবেই এই ধারা অবলুপ্তি হত। অপর আরও একটি ট্যুইট অরুণ জেটলি লিখেছেন, পৃথক মর্যাদা বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে নিয়ে যায়। কোনও প্রগতিশীল রাষ্ট্রের পক্ষে এটি বরদাস্ত করা অসম্ভব ছিল। অস্থায়ী ধারা চিরস্থায়ী হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। এই ধারাগুলি নিশ্চিত ভাবেই বিলুপ্ত হত।
সংবিধানের নির্মাতার যখন সংবিধান তৈরি করেছিলেন তাতে ৩৫এ ধারা ছিল না বলে দাবি করে নিজের ব্লগে অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, মূল সংবিধানে কখনই ৩৫এ ছিল না। ১৯৫৪ সালে সংবিধানে রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫এ যুক্ত করা হয়। বিষয়টিকে অজাতে উভয়কক্ষের সম্মতি ছাড়াই সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে বিজেপির বর্ষীয়ান লৌহপুরুষ জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি করার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আমি খুশি। জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করতে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনসঙ্ঘের সময়কাল থেকে বিজেপির ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির দাবি মুখ্য আদর্শ হিসেবে চলে এসেছে। ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অভিনন্দন জানাই। জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করছি।
এই প্রসঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, আজ আমরা পূর্ণ রূপে স্বাধীন হলাম। যে কয়েকটি শৃঙ্খল ছিল, তা এদিন খসে পড়েছে। যারা এর বিরোধিতা করছে তাদের উচিত রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখা। দেশের অখণ্ডতাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেশের জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ এটি। যারা সমস্য তৈরি করবে তাদের মোকাবিলা করার জন্য সরকার তৈরি।
কাশ্মীর প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে কটাক্ষ করে উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, আমেরিকা কখনই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিচাড় পাওয়া কাশ্মীরবাসীদের অধিকার।
উদ্ধব ঠাকরের পাশাপাশি তাঁর ছেলে আদিত্য ঠাকরেও কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। ট্যুইটবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখে পুনর্গঠনের ফলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ফলে উপকৃত হবে।
সোমবার ট্যুইটবার্তা অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু লিখেছেন, ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সমর্থন করছি। জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করছি। অন্যদিকে বর্ষীয়ান আইনজীবী সোলি সোরাবজি জানিয়েছেন, এতে যুগান্তকারী কোনও বিষয় নেই। পুরোটাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু একেবারেই বুদ্ধিদ্বীপ্ত সিদ্ধান্ত নয়। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির গৃহবন্দী করার বিষয়টিও অপ্রীতিকর আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর, সুরেশ রায়না, মহম্মদ কাইফ।
প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা পূর্ব দিল্লির বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীর ট্যুইট বার্তায় গোটা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হিন্দিতে লেখা নিজের ট্যুইট বার্তায় প্রাক্তন ক্রিকেটার লিখেছেন, আমরা যা করেছি। তা কেউ করে দেখাতে পারেনি। আমরাই কাশ্মীরে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছি। জয়হিন্দ। অভিনন্দন ভারত। কাশ্মীর মুবারক।
বিষয়টিকে মাইলফলক আখ্যা দিয়ে সুরেশ রায়না লিখেছেন, ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি মাইলফলক উদ্যোগ। একীকিরণ ও সুন্দর পথের দিকে দেশ এগিয়ে চলেছে।
মহিলা কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক নিজের হিন্দিতে লেখা ট্যুইটবার্তায় জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি করা দেশের জন্য গর্ব, অহংকার এবং আনন্দের মুহূর্ত। প্রাক্তন ক্রিকেটার মহম্মদ কাইফ নিজের ট্যুইটবার্তায় লিখেছেন, আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হলাম। ভাল ও শান্তি রইল।
সোমবার রাজ্যসভায় সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রস্তাবে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে লাদাখকে। কেন্দ্রের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দায় মুখর হন সিপিআই(এম)। এদিন দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি করে গণতন্ত্র এবং সংবিধানের উপর বড় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরকে স্বয়াত্তশাসন এবং বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল ভারত। ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত করে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হল। জম্মু ও কাশ্মীরবাসীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মোদী সরকার। ভারতের ঐক্য ও একতার জন্য এটি ক্ষতিকারক। বিজেপি ভারতের বিবিধতাকে মেনে নিতে পারছে না। রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে যে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান সম্ভব তাও মনে করিয়ে দিয়েছে বিজেপি। ৭ আগস্ট দেশজোড়া বিক্ষোভে সামিল হবে সবকটি বামপন্থী দল। গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদেরও এই বিক্ষোভে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এই দলটি।
এদিন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন, বিলটিকে সংসদে পেশ করার জন্য নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। এই বিলটি যখন পাশ হবে তখন কাশ্মীরকে ভারত থেকে পৃথক করার পাকিস্তানের ভাবনা কবরস্থ হবে। এই বিষয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা পেশ করে বড় ভুল করেছিল কংগ্রেস।
অন্যদিকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং। তিনি জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত পুরোপুরি অসাংবিধানিক। কাশ্মীরি মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না বলে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সংবিধান বিরোধী।
সোমবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিপদজনক ৩৭০ ধারা। ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার জন্য দুর্নীতি শিখড়ে পৌঁছিয়ে গিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়ায় বেদনাহত আমরা। রাজ্যের উন্নয়নে প্রধান বাধা ৩৭০ ধারা। সন্ত্রাসবাদের গুঁড়ি হচ্ছে ৩৭০ ধারা। এই ধারা নারী, দলিত এবং মহিলা বিরোধী। এদিন নাম না করে পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ দাবি করেন কয়েকটি রাজনৈতিক পরিবার ৩৭০ ধারাকে ব্যবহার করে দুর্নীতিতে লিপ্ত থেকেছে। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। ৩৭০ ধারার ফলে দারিদ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য পাঠানো হত তা দুর্নীতিতে খরচ করা হতো। কারণ ৩৭০ ধারার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে কোন দুর্নীতিদমন আইন ছিল না। উপত্যকায় শুধুমাত্র মুসলমানেরাই বসবাস করে না পাশাপাশি হিন্দু, জৈন, শিখেরাও বসবাস করে। এতদিন ৩৭০ ধারার ফলে শিক্ষার অধিকার আইন বলবত করা যায়নি।