নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ জুলাই ৷৷ শুক্রবার ও শনিবার প্রবল বর্ষণে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজ্যের সবগুলি জেলাতেই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ তার মধ্যে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে পশ্চিম জেলা ও খোয়াই জেলা৷ নদীগুলির জলস্ফীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ হাওড়া নদী বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে৷ অন্য নদীগুলি বিপাদ সীমা অতিক্রম না করলেও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে৷ আগরতলা শহরে রবিবার দুপুর বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬৫.৪ মিলিমিটার৷ সরকারী রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিম ত্রিপুরা ও খোয়াই জেলায় মোট ১১৫৮টি পরিবারের ৩৯৩৪ জন ২৮টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন৷ সিপাহীজলা জেলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং গোমতী জেলার কিছু অংশ প্রভাবিত হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন৷ ত্রাণ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারীকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন৷ সেই মোতাবেক এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স সহ মহকুমা প্রশাসনের দূর্যোগ মোকাবিলা টিম দূর্গতদের প্লাবিত এলাকা থেকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছানোর কাজ করছে৷ ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছানো হচ্ছে৷
জানা গিয়েছে, পশ্চিম জেলার হাওড়া নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে৷ হাওড়ার বিপদ সীমা হচ্ছে ১০.৫০ মিটার৷ বর্তমানে হাওড়ার জল বইছে ১০.৭৩ মিটারে৷ আগরতলা পুর নিগমের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ প্রতাপগড়, শ্রীলঙ্কাবস্তি, বনমালিপুর, শিবনগর, ঋষি কলোনী, পেরাডাইস চৌমুহনী, আরএমএস চৌমুহনী, বিদুরকর্তা চৌমুহনী, চন্দ্রপুর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ মহকুমা প্রশাসন, টিএসআর, আসাম রাইফেলস এবং এনডিআরএফ এর কর্মীদের উদ্ধার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ বুটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৮৩৮ পরিবারের ২৮২৬ জন মানুষকে ২০টি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে৷ রাজধানী আগরতলা শহরের জল নিস্কাশনের জন্য তেরটি পাম্প রবিবার সকাল থেকে কাজ করছে৷ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারীকরা হাওড়া এবং কাটাখালের দিকে নজর রেখে চলেছেন বলে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে৷
এদিকে, খোয়াই নদীর জল বিপদ সীমার নীচেই রয়েছে৷ বিপদ সীমা হচ্ছে ৪৫ মিটার৷ বর্তমানে এই নদীর জল প্রবাহিত হচ্ছে ৪৩.১০ মিটারে৷ খোয়াই জেলার দুটি মহকুমার ৩৪৭টি পরিবারের ১১০৮ মানুষকে ৮টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷
সিপাহীজলা জেলার মোহনভোগ ব্লকে দুটি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ গোমতী নদীর জল বিপদ সীমার নীচে রয়েছে৷ জাতীয় সড়কের বিবেকানন্দপল্লী এলাকায় জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ সাতটি মাম্প কাজ করছে উদয়পুর পুর এলাকায়৷ দক্ষিণ জেলার মুহুরী ও ফেনী নদীর জলও বিপদ সীমার নীচে দিয়ে বইছে৷ ঊনকোটি জেলার মনু নদীর জলও বিপদ সীমার নীচেই বইছে৷ তবে কৈলাসহর শহরাঞ্চলে কিছু এলাকায় জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গিয়েছে, আগামীকাল রাজ্যের সর্বত্রই ভারী বৃষ্টিপাত হবে৷ সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া বইবে৷
ভয়াবহ বন্যার কবলে রাজধানী আগরতলা শহর সংলগ্ণ নিম্নাঞ্চলগুলি৷ প্রতাপগড়, চন্দ্রপুর বদলাখাল, শ্রীলঙ্কাবস্তী সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ গতকাল রাত থেকেই জলবন্দী৷ প্রশাসনের তরফ থেকে জলবন্দী মানুষজনকে উদ্ধার ও শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ গত দুদিনের বর্ষণে জল মগ্ণ রাজধানী আগরতলা শহর সংলগ্ণ নিম্নাঞ্চলগুলো৷ টানা বর্ষনের ফলে হাওড়া সহ অন্যান্য নদী ও ছড়া, খালগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে প্রতাপগড়, চন্দ্রপুর, বলদাখাল, শ্রীলঙ্কাবস্তী সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার কবলে পড়েছে৷ মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কবার্তা জারী করে মানুষজনকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে চলে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু মানুষ সহজে ধন সম্পদ গৃহপালিত পশু ইত্যাদি ফেলে বাড়িঘর ছেড়ে আসতে চাননি৷ রবিবার সকাল থেকে প্রশাসনের তরফে জলবন্দী মানুষকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে৷ আগরতলা শহর ও শহরতলী এলাকার জনগণকে কম করেও ২০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এনডিআরএফ সহ অন্যান্য উদ্ধারকারী দল উদ্ধার কাজে শামিল হয়েছেন৷ সদরের এসডিএম জানান, তিনি নিজে ১৫-২০টি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছেন৷ বিপন্ন মানুষজনকে উপযুক্ত ত্রাণ সাহায্য প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ কোন কোন স্থানে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়ে কেউ হতাহতের খবর নেই৷ প্রশাসন পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছে৷
এদিকে, টানা কয়েক দিনের বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত গোটা তেলিয়ামুড়া মহকুমা জুড়ে৷ এই ভারী বর্ষণে মাঠ ঘাট, কৃষিক্ষেত্র, পুকুর, ছড়া সহ সব কিছুই জলমগ্ণ৷ এই বর্ষণে তেলিয়ামুড়া মহকুমার মোহরছড়া, হদ্রাই, নেতাজীনগর, শান্তিনগর দশমীঘাট সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জলের কলরব৷ বিশে, করে তেলিয়ামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা কল্যাণী রায় ররিবার জলমগ্ণ এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন৷ জলমগ্ণ এলাকাগুলি পরিদর্শনকালে বিধায়িকার সাথে ছিলেন তেলিয়ামুড়া বিজেপি মণ্ডল সভাপতি রঞ্জিত সরকার, তেলিয়ামুড়া পুরপিতা নীতিন সাহা, তেলিয়ামুড়া মণ্ডল সম্পাদক জয়ন্ত সাহা সহ অন্যান্যরা৷ এই ভারী বর্ষণে হদ্রাই-তেলিয়ামুড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ তীব্র জলের স্রোতে হদ্রাই তেলিয়ামুড়া সড়কটি তলিয়ে গেছে৷ পরিদর্শন শেষে বিধায়িকা কল্যাণী রায় জানান৷
জলমগ্ণ এলাকাগুলিতে বসবাসকারীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, জীবনের ঝুঁকি না নিতে৷ বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তেলিয়ামুড়া মণ্ডলের কর্মীরা তৈরি রয়েছে৷ প্রয়োজনে শরণার্থী শিবির খোলা হবে৷ আর্ত মানুষজন যাতে শিবিরে আসে প্রয়োজনে৷ অন্যদিকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা প্রশাসনও তৈরি বিপর্যয় মোকবিলার জন্য৷
অন্যদিকে, শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির ফলে রাধাকিশোরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ রবিবার সকালে জলমগ্ণ এলাকা পরিদর্শনে যান এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায়৷সাথে ছিলেন জেলাশাসক,মহকুমা শাসক এবং উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন সহ অন্যান্যরা৷ জলমগ্ণ এলাকা পরিদর্শনকালে জলের পাম্পের মাধ্যমে এলাকা থেকে দ্রুত জল নিষ্কাশণের নির্দেশ দেন বিধায়ক তথা মন্ত্রী প্রণজীত সিংহ রায়৷ এছাড়াও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সব ধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দেন তিনি ৷ মন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত জলমগ্ণ এলাকা থেকে জলের পাম্পের মাধ্যমে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷