নিজস্ব প্রতিনিধি, সাব্রুম, ২২ জুন ৷৷ প্রশাসনিক ব্যর্থতার নগ্ণ নজীর স্থাপন হয়েছে রাজ্যে৷ পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুরো ফিল্মি কায়দায় জেলের পাচিল টপকে এক কয়েদী নিজেও পালিয়েছে৷ সাথে আরেক কয়েদীকেও নিয়ে গিয়েছে৷ দুইজনই অস্ত্র তৈরির পান্ডা৷ এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশকে আবারও কলঙ্কিত করেছে৷

পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ জেলার সাব্রুম মহকুমায় জেলের পাচিল টপকে পালিয়েছে ছোট শাকবাড়ীর বাসিন্দা স্বর্ণ কুমার ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সোনাইছড়ির বান্দরবন এলাকার বাসিন্দা জুয়েল ত্রিপুরা৷ শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে৷ পুলিশের কথায়, পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণ কুমার ত্রিপুরা তার সাথি জুয়েল ত্রিপুরাকে সঙ্গে নিয়ে জেলের পাচিল টপকে পালিয়েছে৷
এ-বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলের রক্ষী জানিয়েছেন, পুরো ফিল্মি কায়দায় পাচিল টপকে পালিয়েছে দুই কয়েদী৷ তিনি বলেন, জেলে কড়া নিরাপত্তা সত্বেও সকলের চোখে ধুলো দিয়ে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে৷ তাঁর কথায়, কয়েদীদের জন্য ব্যবহৃত কম্বল ছিড়ে তা দড়ির মতো পাঁকানো হয়েছিল৷ ওই দড়ি জেলের একটি বালতির তোড়া খুলে তা দিয়ে হুক বানিয়ে জেলের উচু পাচিলের উপর বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে সেই হুক আটকে সম্পূর্ণ সিনেমার কায়দায় পালিয়ে গেল দুই কয়েদী৷
প্রসঙ্গত, গত ১ জুন শাকবাড়ি এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে পুলিশ পিস্তল, কার্তুজ এবং বিভিন্ন আপত্তিকর জিনিষ সহ তাদের গ্রেপ্তার করেছিল৷ স্বর্ণ কুমার ত্রিপুরা ও জুয়েল ত্রিপুরার সাথে আরো একজন অস্ত্র তৈরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল৷ তার নাম বাহাদুর ত্রিপুরা৷ আজ অবশ্য, তাদের সাথে বাহাদুর ত্রিপুরা জেল থেকে পালাতে পারেনি৷
পুলিশ জানিয়েছে, স্বর্ণকুমার ত্রিপুরার এক পুলিশ কর্মী খুনের সাথে যুক্ত থাকার ঘটনায় ২০১৪ সালে ধরা পড়েছিল এবং বিচারে তার জেল হয়েছিল৷ কিন্তু, ২০১৬ সালে স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিল৷ ওই সময়ও তার সাথে এক জন আসামী ছিল৷ প্রায় আড়াই বছর পর ঘটনাচক্রে শাকবাড়িতে অস্ত্র তৈরির কারখানায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ কিন্তু, ফের হাত ফসকে বেরিয়ে গেল স্বর্ণকুমার ত্রিপুরা৷ এই ঘটনায় জেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ণ উঠেছে৷ কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দিয়ে কয়েদী কিভাবে পালিয়ে গেল তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ জেল পুলিশরা আদৌ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ণ উঠেছে৷
প্রসঙ্গত, রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার বহু নজীর রয়েছে৷ পুলিশের হাত ফঁসকে বিভিন্ন সময়ে কয়েদিদের পালানোর ঘটনা রাজ্যের পুলিশী ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে বারে বারে৷ তদন্তে গাফিলতি এবং দুর্বল চার্জশিট তৈরির হাজারো অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যে সাজার হার সারা দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা পুলিশী ব্যবস্থা সর্বাঙ্গে দায়ি৷ সাব্রুমের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে পুলিশ কতটা অসর্তক হয়ে দায়িত্ব পালন করেন৷ কারণ, সাব্রুম জেল থেকে কয়েদিদের পালানোর ঘটনা দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনার ফল তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই৷ জেলরক্ষীর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে কয়েকদিন ধরেই জেলের ভেতরে কয়েদিরা পরিকল্পনা করছিল৷ অথচ, জেল পুলিশ ঘুনাক্ষরেও তা টের পাননি, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয়৷ জেলের উচু দুর্গ ভেদ করে কয়েদিরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, জেল পুলিশকে ফাঁকি দেওয়া কঠিন কাজ নয়৷ সমালোচকদের মতে, পূর্বে পালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কয়েদি স্বর্ণ ত্রিপুরার দিকে নজরদারিতে জেল পুলিশের গাফিলতির ঘটনায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত৷ কারণ, জননিরাপত্তায় নিয়োজিত রক্ষকদের এ ধরনের খামখেয়ালিপনা মাশুল গুনতে হবে সাধারণ নাগরিকদের৷ সমালোচকরা মনে করেন, এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য৷ ফলে, স্বরাষ্ট্রদপ্তর এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে৷

