প্রত্যাশা মতো অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম থাকায় আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর হতে চলেছে রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ১৪ জুন৷৷ প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম থাকায় আর্থিক শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনায় কঠোর হতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ কারণ, কোষাগারের যা অবস্থা তাতে রাজ্য পরিচালনায় হিমসিম খেতে হবে৷ এর পেছনে যুক্তি, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের মেয়াদের অন্তিম বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই কম৷ তাছাড়া, সপ্তম বেতন কমিশনে অতিরিক্ত টাকা এবছর পুরোটাই বহন করতে হবে রাজ্যের কোষাগার থেকে৷ গত বছরের মতো কেন্দ্রীয় সহায়তার প্রাপ্তির সুযোগ নেই বললেই চলে৷ তবে, প্রতিকূলতা কাটানোর রোডম্যাপও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি সূত্রের৷


আগামী ২১ জুন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন প্রাক্ বাজেট বৈঠকের ডাক দিয়েছেন৷ সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রিদের সাথে তিনি বৈঠক করবেন৷ ওই বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা যোগ দেবেন৷ বৈঠকে রাজ্যগুলি প্রয়োজনীয়তার খতিয়ান তুলে ধরবেন৷ সূত্রের খবর, রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা বাজেটে বরাদ্দের আবেদন জানাবেন অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷


প্রসঙ্গত, চতুর্দশ অর্থ কমিশন থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, প্রতিবার অর্থ কমিশনের মেয়াদের অন্তিম বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ প্রাপ্তি হয় না৷ কারণ, পাঁচ বছর আগের অনুমান অন্তিম বছরে প্রয়োজন থেকে সব সময় অনেক কম হয়৷ তাই, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের মেয়াদের অন্তিম বছরে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশার থেকে অনেক কম প্রাপ্তি হবে বলে অনুমান করছেন প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকরা৷ সূত্রের দাবি, অন্তত ১২০০ কোটি এবছর কম মিলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷


অবশ্য, অর্থ কমিশন থেকে কম প্রাপ্তির পেছনেও কারণ রয়েছে৷ সূত্রের কথায়, জিএসটি বাবদ কর আদায় কম হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই, কেন্দ্রীয় শেয়ার থেকে জিএসটি খাতে যে অর্থ প্রাপ্তি হওয়ার কথা ছিল, তাতে টান পড়েছে৷ ফলে, অর্থ কমিশনও কম দেবে৷ তাছাড়াও, আরো কিছু বিষয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কেন্দ্রের কোষাগারে জমা পড়েনি৷ ফলে, রাজ্যগুলিও প্রভাবিত হওয়া স্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে৷


এবছর, অন্যতম চিন্তার সপ্তম বেতন কমিশন বাবদ অতিরিক্ত অর্থের বন্দোবস্ত করা৷ কারণ, গত বছর সপ্তম বেতন কমিশনের অতিরিক্ত টাকা বহন করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সহায়তা মিলেছে৷ এবছরও সেই অতিরিক্ত অর্থ বহন করতে হবে৷ কারণ, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে সপ্তম বেতন কমিশনের অতিরিক্ত অর্থ মিলবে৷


তবে, সমস্ত প্রতিকূলতার রোডম্যাপও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি সূত্রের৷ ব্যয় সংকোচন নীতি পর্যালোচনার জন্য রাজ্য সরকার কমিটি গঠন করতে চলেছে বলে সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে৷ সূত্রের কথায়, ওই কমিটি রাজ্য এবং সরকার পরিচালনায় ব্যয় সংকোচের বিভিন্ন দিক খঁুজে বের করবে৷ তাছাড়া, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজন নেই এমন পদ বাতিল করারও চিন্তাভাবনা চলছে৷ তাছাড়া, কর্মসংস্থানে আউটসোর্সিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও সূত্রের খবর৷ এদিকে, বিভিন্ন দপ্তরের অব্যয়িত অর্থ সুদের বিনিময়ে বিভিন্ন খাতে খরচ করার পরিকল্পনায় ইনফ্রাসট্রাকচার এন্ড ইভেস্ট ফান্ড বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ মহাকরণ সূত্রে দাবি, রাজ্য পরিচালনায় আর্থিক প্রতিকূলতায় কোনভাবেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না৷ সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে৷ সূত্রের দাবি, ৫টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ তাতে, ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা মিলবে বলে নিশ্চিত রাজ্য সরকার৷ ফলে, অর্থ প্রাপ্তি প্রত্যাশা মতো না হলেও রাজ্য পরিচালনায় কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা৷