নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুন৷৷ শুধু সরকারী চাকুরীর মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়৷ সেই ভাবনায় পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমে স্থায়ী রোজগারের পথ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব দিতে বলেছেনমুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের পৌরোহিত্যে সচিবালয়ের ২নং কনফারেন্স হলে স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই সভায় অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি পর্যটননে উন্নয়নের বিশেষ জোর দেওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলেছেন৷

এদিন সভায় কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, আরক্ষা, মৎস্য চাষ, বিদ্যৎ, প্রাণী সম্পদ বিকাশ, নগরোন্নয়ন ও গ্রামোন্নয়ন সহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সভায় বিভিন্ন তথ্যের পর্যালোচনা করে বলেন, রাজ্যের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আগামী তিন বছরের জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে৷ বহির্রাজ্য থেকে মাছ, ডিম, দুধ, মাছের খাদ্য এবং কৃষি বীজ আমদানি করতে গিয়ে আমাদের রাজ্য থেকে যে পরিমান অর্থ প্রতিবছর রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে তা বন্ধ করতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে৷
তাঁর কথায়, রাজ্যের উন্নয়নে পর্যটন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র৷ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে মাতাবাড়ি, ছবিমুড়া ও ডুম্বুর জলাশয় সহ অন্যান্য পর্যটনস্থলগুলিকে উন্নয়ন করার উপর বিশেষ নজর দিতে তিনি সভায় গুরুত্ব আরোপ করেন৷ এছাড়াও আগরতলা-সাব্রুম জাতীয় সড়কে পূর্তদপ্তরের চিহ্ণিত ৯ কিলোমিটার রাস্তার পাশে ত্রিপুরার হস্তকারু শিল্পের প্রদর্শনী স্টল খোলার ব্যাপারে পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি রাস্তার পাশে পর্যটকদের সুুবিধার্থে খাবারের দোকানের ব্যবস্থা রাখতেও সভায় মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন৷ তাঁর বক্তব্য, পর্যটনের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্থায়ী রোজগারের পথ সৃষ্টির উপরও গুরুত্ব দিতে হবে৷ স্টেট প্ল্যানিং বোর্ড আগামী তিন বছরের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা সঠিকভাবে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপায়ণ করার জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরগুলিকে কিছুদিন পর পর নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে পরবর্তী কর্মসূচী পর্যালোচনা ও নিরূপন করতে হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিকে, সভায় স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান তথা রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা আর কে মাথুর সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তথ্য সম্বলিত বিভিন্ন দপ্তরের তিন বছরের কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উচ্চ ফলনশীল বীজ ও হাইব্রিড বীজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দায়িত্ব নিতে হবে৷
সাথে তিনি যোগ করেন, রাজ্যে মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে৷ এজন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ পাশাপাশি ত্রিপুরায় ডেয়ারি কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলিকে শক্তিশালী করার উপরও সভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া, মৎস্য দপ্তরের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের মাছের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি সভায় আলোচিত হয়েছে৷
এদিকে, ত্রিপুরায় গুণগতমানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি, ত্রিপুরায় স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জনগণের নিকট আরও বেশি করে পৌঁছানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও বিদ্যুৎ, বন, পূর্ত, পঞ্চায়েত, নগরোন্নয়ন ইত্যাদি দপ্তরের কর্ম পরিকল্পনা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান আর কে মাথুর৷
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, মৎস্য মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা,পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, বিধায়ক তথা মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিবগণ এবং স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের অন্যান্য সদস্য-সদস্যাগণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ প্রদান করেন৷

