নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ মে৷৷ আগরতলা পুর নিগমের মেয়র-ইন- কাউন্সিলাররা সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছিলেন, আজ তার জবাব দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ শুধু তা-ই নয়, নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর পুর নিগমের মেয়র-সহ অন্যান্য সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেননি, সে-বিষয়েও প্রমাণ-সহ অভিযোগ খণ্ডন করেছে সরকার ৷ আজ সচিবালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ ক্ষোভের সুরে বলেন, নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করার জন্যই পুর নিগম নানা মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছে ৷ ত্রিপুরা সরকার আগরতলা পুর নিগমের এই মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে৷

এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আগরতলা পুর নিগমের সদস্যরা দেখা করতে পারছেন না, তাঁদের এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷ তিনি এ-বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে জানান, গতবছর ১০ আগস্ট ও ৮ অক্টোবর এবং এ-বছর ৮ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুর নিগমের মেয়র-সহ অন্যান্য সদস্যদের বৈঠক হয়েছে ৷ তাঁর দাবি, গতবছর ১০ আগস্ট মেয়রের বাসভবনে, ৮ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে এবং এ-বছর ৮ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৷ এছাড়া আরও তিনবার পরিকল্পনার বাইরে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাঁরা বৈঠক করেচেন ৷ পাশাপাশি পুর এলাকার বিভিন্ন কাজকর্মের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আরও তিনবার পুর নিগমের মেয়র এবং অন্যান্য সদস্যদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, পুর নাগরিকরা পরিষেবা সঠিকভাবে পাচ্ছেন না৷ তাতে পুর নিগমের প্রতি মানুষের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে৷ তাই পুর নিগম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী৷
এদিন শিক্ষামন্ত্রী ত্রিপুরা সরকার পুর নিগমকে সাহায্য সহযোগিতা করছে না এই অভিযোগেরও খণ্ডন করেছেন৷ তাঁর দাবি, পূর্বতন সরকারের তুলনায় ত্রিপুরার বর্তমান সরকার পুর নিগমকে বেশি অর্থ প্রদান করেছে৷ তাঁর কথায়, চতুর্দশ অর্থ কমিশন ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে পুর নিগমকে দিয়েছে ১৮ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা৷ বর্তমান সরকারের আমলে তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ৷ তিনি আরও জানান, চতুর্দশ অর্থ কমিশন সমস্ত পুর ও নগর সংস্থাগুলিকে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে দিয়েছিল ৩৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ৷ সেই তুলনায় বর্তমান সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দিয়েছে ৩৯ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাস্তা সংস্কার হচ্ছে না বলে পুর নিগম যে অভিযোগ করেছে তা-ও সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ তাঁর কথায়, পূর্ত দফতরের ডিভিশন ওয়ান সাড়ে চার কোটি টাকা, ডিভিশন থ্রি চার কোটি টাকা এবং ডিভিশন ফাইভ পাঁচ কোটি টাকা রাস্তা সংস্কারে খরচ করেছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, আগরতলা পুর নিগমে কোনও হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা ভারতের সংবিধান রাজ্য সরকারকে দেয়নি ৷ কারণ, পুর নিগম স্বাধীন সংস্থা ৷ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই পুর এলাকার উন্নয়নে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, এটাই রেওয়াজ ৷ তাতে, রাজ্য সরকার শুধু পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ সংবিধান মোতাবেক সম্ভব নয়৷ তাই, মুখ্যমন্ত্রী পুর নিগমের কাজকর্ম নিয়ে তাঁদের ডেকে এনে কোনও বৈঠক করেননি ৷ শিক্ষামন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন, পূর্বতন সরকারের আমলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তদানীন্তন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী পুর নিগমের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতেন ৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকার নিয়মনীতি তৈরি করে দিতে পারে ৷ সেই নিয়ম প্রণয়নের দায়িত্ব পুর নিগমের ৷ এমন-কি, সেই নিয়ম মানতে পুর নিগম বাধ্য ৷ তাতে, পুর নিগমের গাফিলতি প্রমাণিত হলে রাজ্য সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে৷ ভারতের সংবিধান সেই ক্ষমতা রাজ্য সরকারকে দিয়েছে৷ তাঁর সাফ কথা, নাগরিক পরিষেবায় পুর নিগম গাফিলতি করলে রাজ্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে৷ তবে, ত্রিপুরা সরকারের আপাতত এমন কোনও উদ্দেশ্য নেই, বলেন শিক্ষামন্ত্রী৷
শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্র করে পুর নিগম রাজস্ব আদায়ে ঢিলেমি দিয়েছে৷ তাতে রাজস্ব আয় কমেছে৷ তিনি জানান, ২০১৫-১৬ অথবর্ষে পুর নিগমের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩০ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৮ কোটি ২৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা৷ কিন্তু, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে পুর নিগমের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫ কোটি ৭৭ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা৷ তাঁর দাবি, পুর নিগম এখন বামফ্রন্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে৷ তাই, ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ রাজস্ব আদায় কম করছে পুর নিগম৷
শিক্ষামন্ত্রী আজ কড়া ভাষায় বলেন, নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করার জন্য পুর নিগম মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার এবং আপত্তিজনক মন্তব্য করেছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর পুর এলাকায় নাগরিক পরিষেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ তাতে পুর নাগরিকরা ভীষণ অসন্তুষ্ট৷ তাই তিনি পুর নিগমের উদ্দেশে বার্তা দেন, পুর এলাকায় নাগরিক পরিষেবায় গুরুত্ব দিন৷ পুর নিগমের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা হোক৷ নয়তো-বা, ত্রিপুরা সরকারকে পুর নিগমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে৷ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আইন সেই ক্ষমতা রাজ্য সরকারকে দিয়েছে, পুর নিগম সঠিকভাবে কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷