নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ মে৷৷ রাজ্যে শাসক দল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত কুৎসার জবাব দিয়েছে বিজেপি৷ সাথে বিরোধীদের হুশিয়ারী দিতে ভুলেনি পার্টি৷ আজ বিশাল মিছিল শেষে পথসভায় রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য রতন লাল নাথ বলেন, গত এক বছরে ২৫৬টি জনমুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি জোট সরকার৷ তাই, বিরোধীদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে৷ এজন্যই রাজ্য সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছেন বিরোধীরা৷ তিনি সিপিএম ও কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন৷ নইলে, মানুষ আইন হাতে তুলে নিলে আমরা দায়ী থাকব না, সতর্ক করে বলেন রতন লাল নাথ৷ পাশাপাশি তিনি মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে চক্রান্তের নায়ক বলে তুলোধুনা করেছেন৷
শাসক দল বিজেপি ষড়যন্ত্রের শিকার, এই ইস্যুতে বৃহস্পতিবার আগরতলায় সদর জেলা কমিটির উদ্যোগে মিছিলের আয়োজন করেছে শাসক দল৷ রাজধানী আগরতলায় রবীন্দ্র ভবনের সম্মুখ থেকে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে প্যারাডাইস চৌমুহনীতে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে৷ সেখানে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
পথ সভায় প্রদেশ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন৷ সবশেষে বক্তব্য রাখেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য রতন লাল নাথ৷ তিনি শুরু থেকেই সিপিএম এবং কংগ্রেসকে নিশানা করে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন৷ তাঁর কথায়, বিজেপি জোট সরকার এক বছরে ২৫৬টি জনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ শুধু তাই নয়, ৪ লক্ষ ২৩ হাজার মুদ্রা লোন দেওয়া হয়েছে৷ তাতে, ১৭৮৮ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি জানান, বিএড অনুপ্রেরণা যোজনায় ৫ হাজার জন ছাত্রছাত্রীদের বিএড কোর্সের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা সহ সুদ এবং দায়ভার রাজ্য সরকার বহন করছে৷
রতন লাল নাথ আজ গত এক বছরে জনগণের জন্য কাজের লম্বা ফর্দ তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, জাতীয় সড়কে ৯টি চার লেন রাস্তা অনুমোদন, পিপিপি ৭টি ডিগ্রি কলেজ, ৪টি বিএড কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গত এক বছরে নেওয়া হয়েছে৷ ৮৩৮৯ কোটি টাকা জনজাতি কল্যাণে বিশেষ প্যাকেজ কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্র দপ্তরে চাকুরীতে মহিলাদের জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি জোট সরকার৷ তিনি তুলনা টেনে বলেন, বামফ্রন্ট জমানায় মাত্র ৪টি একলব্য সুকল স্থাপন হয়েছে৷ কিন্তু, গত এক বছরে ১৮টি একলব্য সুকল স্থাপনের অনুমোদন মিলেছে৷ তাছাড়া, ৩টি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় স্থাপনেরও অনুমোদন মিলেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ওটিপিসি-র শেয়ার ৫ শতাংশ বেড়ে ২৬ শতাংশ কিনেছে রাজ্য সরকার৷
এই হিসাব তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করেন, নতুন চিন্তাধারা নিয়ে যখন বিজেপি জোট সরকার কাজ করে চলেছে তখনই বিরোধীরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে৷ রাজনীতির মান এতটাই নীচে নামিয়েছে, যে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে৷ রতন লাল নাথ বলেন, ত্রিপুরাতে অনেক আগেই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারত৷ কিন্তু, দিল্লির সাথে গোপন বোঝাপড়ায় এরাজ্যে দীর্ঘকাল সিপিএম শাসন করেছে৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, এখনো কেউ কেউ মনে করেন অন্য চিন্তা করতে হবে৷ তাঁদের উদ্দেশ্যে রতন লাল নাথ বলেন, মানুষকে অযথা বিভ্রান্ত করবেন না৷ এরাজ্যে কংগ্রেসের একটি আসনও নেই৷ সরকার গঠনের দুঃস্বপ্ণ দেখবেন না৷
রতনের কথায়, দেশ আজ যোগ্য নেতার হাতে রয়েছে৷ শক্তিশালী ভারত গঠন করতে পারবেন শুধু নরেন্দ্র মোদী৷ রতনের দাবি, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মোদি আসার আগে ভারত ১১তম স্থানে ছিল, এখন কয়েক ধাপ উপরে উঠে হয়েছে ৫ম স্থান৷ তাঁর আরও দাবি, ২০২৩ পর্যন্ত মোদি ক্ষমতায় থাকলে ভারত আর্থিক দিক দিয়ে সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌছে যাবে৷ সাথে যোগ করেন, যদি ২০২৮ পর্যন্ত মোদি ক্ষমতায় থাকেন তাহলে বিশ্বের এক নম্বর আর্থিক শক্তিশালী দেশ হতে ভারতকে কেউ আটকাতে পারবে না৷
আজ রতন লাল নাথ বিজেপি জোট সরকারের সাফল্য তুলে ধরেই থেমে থাকেননি৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণকে উদ্দেশ্য করে তাঁর কড়া হুশিয়ারী, চক্রান্তকারীরা সতর্ক হোন৷ কারণ, মানুষ এখন ভীষণ সচেতন, জাগ্রতও৷ তাঁর কথায়, আমরা আই হাতে নেব না৷ বিজেপি কর্মীদেরও বলব আইন হাতে নেবেন না৷ কিন্তু, মানুষ আইন হাতে নিলে আমরা দায়ী থাকব না৷ রতন লাল নাথের সাফ কথা, চক্রান্ত ধরা পড়লে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না৷ নোংরা রাজনীতির বদলে গঠনমূলক আলোচনা এবং শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টিতে সাহায্যের জন্য বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন তিনি৷
সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুুখি হয়ে রতন লাল নাথ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের বিরুদ্ধে চাচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন৷ তিনি মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে চাক্রান্তের নায়ক বলে বিঁধেছেন৷ রতন লাল নাথের কথায়, ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নেমেছেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরুণীকান্তি৷ তিনি মনে করেন, সিপিএম ও কংগ্রেসের সাথে গোপন আতাত রয়েছে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের৷ নইলে, পুনঃ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরী হওয়ার কথা নয়৷ তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, নির্বাচনের ইতিহাসে পূনঃ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত এতদিন ঝুলে রয়েছে তা খঁুজে পাওয়া যাবে না৷