চেয়ারম্যানকে ঘুমে রেখে অবৈধ নিয়োগ, ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজে ভূমিকম্প

বিশেষ প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ মার্চ৷৷ রাজ্যের তরুণ মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জনগণকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেবেন৷ বাস্তবে রাম আর বাম আমল মুদ্রার এই পিঠ আর ঐ পিঠ৷ ইতর বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি বলেই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত৷

বাম আমলে হাপানিয়াস্থিত সরকারী মেডিক্যাল কলেজকে বেসরকারী কলেজের তকমা লাগিয়ে মেলারমাঠের মদতপুষ্ঠ একশ্রেণীর লুম্ফেনরা লুটে পুটে খেয়ে ছিবরে করে ছেড়েছিল৷
২০০৯ সালের ২৪শে জুন, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব, যশপাল সিং, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সচিব নরেশ দয়ালকে চিঠি No.F.3(2-299)-plan/ DHS/2008-09 মূলে জানিয়েছিলেন যে, টিএমসি একটি সরকারী কলেজ৷ তারপর, বাম আমলে টিএমসি সরকারী মালিকানা নিয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করেছিলেন বর্তমান বিজেপি নেতা ডাঃ অশোক সিনহা৷ এই মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন৷

কালের বিবর্তনে, এই মামলার ফলাফল নিয়ে রাজ্যবাসী আশার আলো দেখেছিল৷ নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং কর্মচারীদের মধ্যে একটি স্বপ্ণ জন্মেছিল, হয়তো কলেজটি সরকারী আঙ্গীকে আত্মপ্রকাশ করবে৷ কিন্তু, বাস্তবটা বলছে উল্টো কথা৷

নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর টিএমসিতে কৃষ্ণপুরের বিধায়ক ডাঃ অতুল দেববর্মাকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্তি দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি রাজদ্বীপ গাঙ্গুলিকে জেনারেল ম্যানেজার এবং যশধর বিকাশ সেনকে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) হিসাবে নিযুক্তি দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের অনুমোদন ক্রমে৷

এই নিযুক্তির পরই চেয়ারম্যানকে ঘুমে রেখে জেনারেল ম্যানেজার এবং সিইও তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে টিএমসিতে পুণরায় অবৈধ কার্য্যকলাপ জারি রেখেছেন বলে আমাদের হাতে প্রমাণ এসেছে৷

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪-০১-২০১৯ তারিখে টিএমসির সিইও জিবি হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ নার্স, দেবী চক্রবর্তীর নামে, ত্রিপুরা নার্সিং কলেজে সহকারী অধ্যাপকের পদের জন্য একটি নিয়োগপত্র/অফার অফ অ্যাপয়েন্টম্যান্ট ইসু করেন অবৈধ ভাবে৷ যারNo.F.1.HR/TAC-TCN-181/SFTMC/10-11/286-88,এই সংবাদ কলেজে চাউড় হতেই সকল কর্মচারী মহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷

এই অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের এক আরটিআই কর্মকর্তা গত ৩-০২-২০১৯ তারিখে টিএমসির জনতথ্য আধিকারীকের নিকট আবেদন করেন৷ তিনি জানতে চান যে, দেবী চক্রবর্তীর নামে ২৪-০১-২০১৯ তারিখে নিয়োগপত্রটি কিসের ভিত্তিতে ইসু করা হয়েছে, সমস্ত তথ্য সরবরাহ করতে৷

আরটিআইয়ের আবেদনের উত্তরে টিএমসির জনতথ্য আধিকারীক রাজদ্বীপ গাঙ্গুলী গত ২৩-০২-২০১৯ তারিখে আবেদনকারীকে জানান যে, দেবী চক্রবর্তী, টিএমসিতে এখনও কাজে যোগ দেয়নি৷ সেই কারণে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত সংশাপত্র এবং যাবতীয় তথ্য নার্সিং কলেজে সহজলভ্য না৷ তিনি আরও জানান যে, দেবী চক্রবর্তীই একমাত্র প্রার্থী ঐ ইন্টারভিউতে উপস্থিত ছিলেন৷

প্রশ্ণ হল, নিয়োগপত্র কিভাবে ইসু করল টিএমসি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সংশাপত্র ছাড়া? তাছাড়া প্রার্থী যদি তার বায়োডাটা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া আবেদন না করে থাকে তাহলে তাকে কিভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল? আরও প্রশ্ণ একজন সরকারী কর্মচারী দপ্তরের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়া কিভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হলেন? প্রার্থী যদি ইন্টারভিউ বোর্ডে তার যাবতীয় কাগজপত্র প্রদান না করে থাকেন তাহলে তাকে কিভাবে যোগ্য হিসাবে নির্বাচিত করে সহকারী অধ্যাপকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করল কর্তৃপক্ষ?

রাজদ্বীপ বাবুর উত্তর পাওয়ার পর আরটিই কর্মকর্তা গত ১১-০৩-২০১৯ তারিখে আরটিআই অ্যাক্ট এর ধারা ১৯ (১) মোতাবেক প্রথম অ্যাপিলেট অথরিটির নিকট আপিল করেন৷ আর এতেই হাপানিয়ার মেডিক্যাল কলেজে ভূকম্পন শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে৷ বলা বাহুল্য, দেবী চক্রবর্তীর নামে অবৈধভাবে এই নিয়োগপত্র ইসু করার কারণে কলেজের জেনারেল ম্যানেজার রাজদ্বীপ গাঙ্গুলী এবং সিইও শশধর বিকাশ সেন আইনী জালে ফেঁসে গেছেন৷

বিশ্বাস্ত সূত্রে জানা গেছে স্বজন পোষণ এবং দুর্নীতিগ্রস্থ এই দুই আধিকারীকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলেজের কর্মচারীরা৷