বাসুদেব ধর (ঢাকা), ১৪ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : গণতন্ত্র কখনও একদলীয় হয় না । বহুদলীয় না হলে গণতন্ত্র পরিপূর্ণ রূপ লাভ করতে পারে না। এবারের সংসদ নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় তা কৌলিন্য হারিয়েছে | বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের আগে আবারও ঝড় তুললেন অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনে কোনও আত্মবিশ্লেষণমূলক আলোচনা হয়নি। এবারের সংসদ নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় তা কৌলিন্য হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র কখনও একদলীয় হয় না । বহুদলীয় না হলে গণতন্ত্র পরিপূর্ণ রূপ লাভ করতে পারে না । মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদে অনেক নির্বাচন হয়েছে । সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও সাতটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য । এসব নির্বাচনের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনারা সম্যক অবহিত। নির্বাচন কমিশনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণমূলক কোনও আলোচনা হয়নি । দেশে-বিদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরকারকে, তখন নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্য সরকারের জন্যে অস্বস্তির কারণ হবে ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি এরকম অস্বস্তিকর বক্তব্য আরও দিয়েছেন ।শুদ্ধ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও শুদ্ধ। বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কখনও কাম্য নয়। তিনি বলেন, আমরা সবাই বলি নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। কথাটার কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। নির্বাচন আইনানুগ হওয়ার অর্থ সবার সম অধিকার ও সবার প্রতি সম আচরণ নিশ্চিত করা। এ জন্য আপনাদের কঠোর নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে। কোনও প্রকার ভয়-ভীতি চাপ, লোভ বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে সাহসিকতার সঙ্গে আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যা আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকেই আপনাদের তা মোকাবেলা করতে হবে। আইন কখনও সমস্যা সৃষ্টি করে না, সমাধান দেয়। আইনের ব্যত্যয়ই সকল সমস্যার মূল কারণ। যারা নির্বাচনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তারা প্রতি পদক্ষেপে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা।
প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১) ধারা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে মেয়াদ শুরু হয়। এ হিসাবে আগামি মার্চই হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গতবারের মতো এবারও কয়েক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যেই আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচনে অংশ নেবে না, ইতিমধ্যেই তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।