ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : ‘ফুল ফুটুক নাই-বা ফুটুক’ বাংলাদেশে ‘বসন্ত এসে গেছে’। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে বাংলাদেশে এসে দেখতে পেতেন, ফুলও ফুটেছে, বসন্তও এসেছে। বাংলাদেশের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ফাল্গুনের প্রথম দিন। মাঘ শেষ হতে না হতেই শীত বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতি রুক্ষতা দূর করে মেলে ধরছে বসন্তের চিরচেনা রূপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা কিংবা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে কানে আসছে কোকিলের কুহুতান, রাজধানীর এই এলাকায় কোকিলের রাজত্ব। কয়েকদিন ধরেই ডাকছে, কিন্তু এদিন কানে বাজছে বড় বেশি। বসন্ত এসেছে, আসছে ভালোবাসার দিনও।

গোটা রাজধানী জুড়ে এখন বসন্তের আনাগোণা রঙে, সজ্জায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বড় বেশি ব্যস্ততা তারুণ্যের মাঝে। আগামিকালকে এগিয়ে রাখতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি। হলুদের মেলা। তরুণ-তরুণী সবার পোশাকে হলুদ, কমলা ও বাসন্তী রঙ। শাড়ি-সালোয়ারকামিজ-পাঞ্জাবি। তরুণীদের মাথায় ফুল। অমর একুশের বইমেলা শুরু হয়েছে বিকেল তিনটে থেকে, কিন্তু ভিড়টা তৈরি হয়েছে সকাল থেকেই। গোটা রাজধানীতে অফিস-আদালতেও বসন্ত হাজির। বসন্তকে অভিবাদন জানাতে রাজধানীর ফুলের দোকান, বিপণিবিতান, এমনকি অন্দরের সাজসজ্জায় লাল-হলুদের আভা। বসন্ত বরণে প্রস্তুত রেস্তোরাঁগুলোও। খাবারেও বৈচিত্র্য – দেশি, ভারতীয়, চিনা ও থাই।
ঋতুরাজ বসন্ত বন্দনা চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। এদিন সকালে ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসব’ শ্লোগানে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে চারুকলায় বকুলতলায় বসন্ত উৎসবের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয় ভোরে শাস্ত্রীয় সংগীতের মাধ্যমে। সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বকুলতলায়। একে একে পরিবেশন করা হয় গান, আবৃত্তি এবং নৃত্য। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে চারুকলা প্রাঙ্গণ। চারুকলা জুড়েই হলুদ রঙয়ের ছোঁয়া। নারীরা নিজেদের বসন্তের সাজে সাজাতে খোপায়-গলায়-মাথায় পরেছে গাঁদা ফুলের মালা। হাতে রেশমি চুড়ি আর পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি। পুরুষদের পরনেও শোভা পাচ্ছে রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া। সব মিলিয়ে প্রকৃতি আর মানুষ বসন্তে মিলেমিশে একাকার। বারবার যেন ঘোষণা হচ্ছে, \”আজ বসন্ত\”। চারুকলা ছাড়াও রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর ও উত্তরার ৭ নম্বর পার্কের মাঠে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।