নয়াদিল্লি, ১২ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): ঘুমের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ল বিধ্বংসী আগুন| সেন্ট্রাল দিল্লির করোল বাগ-এ অবস্থিত অর্পিত প্যালেস হোটেলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারালেন ১৭ জন| মৃত ১৭ জনের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে| এছাড়াও অন্ততপক্ষে ৩৫ জন কমবেশি জখম হয়েছেন| তাই প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা হয়তো আরও বাড়তে পারে| দিল্লি পুলিশ ও দমকল-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ভোররাত ৩.৩০ মিনিট নাগাদ সেন্ট্রাল দিল্লির করোল বাগ অঞ্চলের গুরুদ্বার রোডে অবস্থিত অর্পিত প্যালেস হোটেলের দোতলায় ভয়াবহ আগুন লাগে| সেই সময় ৪৫ রুম বিশিষ্ট ওই হোটলে ৫৩ জন অতিথি ঘুমিয়েছিলেন| আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্পিত প্যালেস হোটেলের বিভিন্ন রুমে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা| এরই মধ্যে আগুন-আতঙ্কে প্রাণে বাঁচাতে হোটেলের বহুতল থেকে ঝাঁপ দেন বেশ কয়েকজন| বহুতল থেকে ঝাঁপ দেওয়ায় মৃত্যু হয় দু’জনের| স্থানীয় বাসিন্দাদের তত্পরতায় খবর দেওয়া হয় দিল্লি দমকল বিভাগে| খবর দেওয়া হয় নিকটবর্তী থানায়ও| খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে আসে দমকলের ৩০টি ইঞ্জিন| ততক্ষণে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়| দমকল কর্মীদের তত্পরতায় প্রথমেই হোটেলের নিচ থেকে প্রায় ৩৫ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়|
একইসঙ্গে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ| যদিও প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি ১৭ জনকে| আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে এবং ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শিশু-সহ ১৫ জনের| দু’জনের মৃত্যু হয় বহুতল থেকে ঝাঁপ দেওয়ার কারণে| পদস্থ এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, ‘মৃত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে| তাঁদের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি কেরলে এবং দু’জন মায়ানমারের নাগরিক|’ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (নিউ দিল্লি) মধুর বর্মা জানিয়েছেন, ‘আগুনে জখম হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জন| শরীরের ৪৩ শতাংশ জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ৪৩ বছর বয়সি একজন মহিলা| রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৩টি দেহ, দু’টি দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে লেডি হার্ডিঞ্জ হাসপাতালে এবং বিএলকে হাসপাতালে আরও একটি দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে|’

দিল্লি দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোর তখন ৪.৩৫ মিনিট হবে, দমকল বিভাগে ফোন করে জানানো হয়, সেন্ট্রাল দিল্লির করোল বাগ অঞ্চলের গুরুদ্বার রোডে অবস্থিত অর্পিত প্যালেস হোটেলে ভয়াবহ আগুন লেগেছে| অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ৩০টি ইঞ্জিন| ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে হোটেলের রুমগুলিতে| দমকল কর্মীদের তত্পরতায় প্রথমেই প্রায় ৩৫ জনকে উদ্ধার করা হয়| তবে, তাঁরা প্রত্যেকেই কমবেশি জখম হয়েছেন| একইসঙ্গে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ| যদিও প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি ১৭ জনকে| দমকল অফিসার (ডেপুটি চিফ) সুনীল চৌধুরী জানিয়েছেন, অর্পিত প্যালেস হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে| আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে| আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে| দমকল আধিকারিক বিপিন কেন্তাল জানিয়েছেন, ‘দিল্লির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে| দমকলের ৩০টি ইঞ্জিনের প্রচেষ্টায় আয়ত্তে এসেছে আগুন| হোটেলের করিডরে কাঠের প্যানেলিং ছিল, সেই কারণে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য কেউ করিডোর ব্যবহার করতে পারেননি| প্রাণে বাঁচতে দু’জন বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন|’ অর্পিত প্যালেস হোটেলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে দিল্লির মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, ‘বিধ্বংসী আগুনে ১৭ জনের মৃতু্য হয়েছে এবং দু’জন জখম হয়েছেন| ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার কারণেই অধিকাংশ মানুষের মৃতু্য হয়েছে| যদি কারও বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়, তবে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে| ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট|’ এদিকে, দিল্লি হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি বালন মনি জানিয়েছেন, ‘আগুন দ্রুত হোটেলের রুম গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে| সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছিল| পরিদর্শনের পরই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছিল| দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কোনও বাড়ির ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে|’
অর্পিত প্যালেস হোটেলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার মারফত শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘দিল্লির করোল বাগ-এ বিধ্বংসী আগুনে প্রাণহানির ঘটনায় ব্যথিত| মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা|’ দিল্লির হোটেলে ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যথিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও| শোকজ্ঞাপন করে কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, ‘১৭ জনের মৃত্যুতে আমরা ভীষণ দুঃখিত| মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে|’