নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ ফেব্রুয়ারী৷৷ সমাজে প্রতিটি মানুষের জীবনই অমূল্য৷ এই ধারণাটি সবার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে৷ পাশাপাশি জীবন সুুরক্ষায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে৷ আজ স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে ৩০তম রাজ্যভিত্তিক সড়ক সুুরক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৭ দিন ধরে রাজ্যব্যাপী সড়ক সুুরক্ষা সপ্তাহ পালন করা হবে৷ কিন্তু এই কর্মসূচির সার্থকতা তখনই আসবে যখন মানুষ সড়ক সুুরক্ষা ও সড়ক আইন সর্ম্পকে পুরোপুরি সচেতন হবেন৷ পরিবহণ দপ্তর সড়ক সুুরক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা রোধ করতে যানবাহনে স্পিড লিমিটিং ডিভাইস লাগানো বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
গাড়ি চালকদের সড়ক সুুরক্ষা আইন সর্ম্পকে সচেতন করতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে পি পি পি মডেলে ইনস্টিটিউট অব ড্রাইভিং ট্রেনিং এণ্ড রিসার্চ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রক’ত কারণ নির্ধারণ করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য জেলাস্তরে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এই কমিটিতে পূর্ত দপ্তর, আরক্ষা দপ্তর এবং পরিবহণ দপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন৷ আগরতলা শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে রুট সিস্টেম অটো ব্যবস্থার বদলে মিটার অটো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ শহরের সাধারণ মানুষের সুুবিধার্থে উদয়পুর ও ধর্মনগরে টাউন বাস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে প্রকৃত অটো চালকরাই যাতে অটোর পারমিট পায় এবং এক ব্যক্তির নামে যাতে একাধিক পারমিট ইস্য না হয় সেই বিষয়ে পরিবহণ দপ্তরকে বিশেষ নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে৷ দ্বিচক্র যান বিক্রেতাদের বলা হয়েছে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের কাছেই বাইক, সুকটি ইত্যাদি দ্বিচক্র যান বিক্রি করতে৷ তাছাড়া হেলমেট বিহীন দ্বিচক্র যান চালকদের কাছে পেট্রোল বিক্রি না করার জন্যও বলা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রতি অনুযায়ী আগরতলা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের নামে নামকরণ করা হয়েছে৷ যাত্রীদের বিশেষ করে দেশ ও বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের সুুবিধার্থে বিমানবন্দর থেকে প্রি-পেইড অটো সার্ভিস চালু করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যে এই প্রথম ই-রিক্সা পরিবহণ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শীঘই ই-রিক্সা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে৷ শুধু তাই নয়, জনগণের সুুবিধার্থে সম্পতি অনলাইন বাহন সিটিজেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে৷
এই পরিষেবার মাধ্যমে যানবাহন মালিকগণ ঘরে বসেই ১৯ ধরণের পরিষেবা পাবেন৷ এখন কাউকেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বিভিন্ন কাগজ বের করার জন্য অফিসে গিয়ে হয়রানি হতে হবে না৷ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে তারা এগুলি করতে পারবেন৷ যাত্রী সুুরক্ষা ও স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য এইসব ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন ছিলো বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে পরিবহণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার সড়ক সুুরক্ষা সচেতনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে৷ এই লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সড়ক সুুরক্ষা সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে৷ রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের সড়ক সুুরক্ষা আইন সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিটি সুকল-কলেজেও এই ধরণের সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যের সমস্ত ই-রি’াগুলিকে ট্রাফিক আইনের আওতায় আনার জন্য ইতিমধ্যেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ দুর্ঘটনা রোধে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে যানবাহন চালকদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান পরিবহণ মন্ত্রী৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক রাজীব সিং, ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপক মজমদার, পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিব এল এইচ ডার্লং এবং স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান কাজল দাস৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন টি এস আরের প্রথম বাহিনী, ত্রিপুরা ট্রাফিক পুলিশ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ, এন সি সি বয়েজ ও গার্লস এবং এন এস এস-এর ছাত্র-ছাত্রীরা৷ অনুষ্ঠানে সড়ক সুুরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে একটি মরণিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নববোধন সাংস্ক’তিক সংস্থার শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সাংস্ক’তিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন৷