নিজস্ব প্রতিনিধি, আমবাসা, ২২ ডিসেম্বর৷৷ কুলাই দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করল সুকলের এলামনি এসোসিয়েশন৷ শনিবার এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব৷ অনুষ্ঠানে এলামনির পক্ষ থেকে অতীত দিনের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্মরণিকা ‘আজকের আন্তর’ প্রকাশ করা হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী এই স্মরণিকার আবরণ উন্মোচন করেন৷ তিনি এই স্মরণিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন৷ এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, সব সমস্যার সমাধান সম্ভব একমাত্র প্রকৃতি শিক্ষার মাধ্যমেই৷ এক্ষেত্রে এলামনিকেও বিরাট ভূমিকা নিতে হবে৷
শিক্ষামন্ত্রী এদিন পরিতোষ বিশ্বাসের সম্পাদনায় আজকের আন্তর স্মরণিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধের উল্লেখ করে অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয়৷ যারা অতীত ভুলে যান তারা নিশ্চিহ্ণ হয়ে পড়েন৷ আজকের আন্তর স্মরণিকায় কুলাই দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের অতীতের স্মৃতি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন৷ কারণ, স্মরণিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধে বলা হয়েছে অতীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কত নিবিড় সম্পর্ক ছিল৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারা কতটা ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ভীষণ আন্তরিক ছিলেন৷ সমাজ গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই৷ তেমনি শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন সমাজের মেরুদন্ড৷ কিন্তু, রাজ্যে বর্তমান সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা করুণ দশায় পরিণত হয়েছে৷ ড এ পি জে আব্দুল কালামের উদ্বৃতি দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আরম্ভর কিংবা প্রাচুর্য্য শিক্ষার ক্ষতি করে৷ রাজ্যের অবস্থাও হয়েছে ঠিক তেমনি৷ শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকাঠামোর কোন ঘাটতি নেই৷ কিন্তু গুণগত শিক্ষার ভীষণ ঘাটতি রয়েছে৷ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শিক্ষক পদে নিয়োগ করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ ১৪ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য পড়ে রয়েছে৷ কিন্তু লোক খঁুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কারণ, শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অনেকেই সফল হতে পারছেন না৷ তাঁর মতে, রাজ্যে প্রকৃত শিক্ষার ভীষণ অভাব রয়েছে৷ বিদ্যালয়গুলিতে সঠিকভাবে পড়াশোনা হয়নি৷ তাই এখন শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী খঁুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তিনি স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব৷
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর শিক্ষার হাল
দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল শিক্ষকরা যোগ্য নন৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ৯৫ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকারাই যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন৷ তা সত্ত্বেও রাজ্যের শিক্ষার হাল এত করুণ কেন তার কারণও বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তাঁর কথায়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এক বিরাট অংশের স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে৷ বিদ্যালয়গুলিতে শুধুই চাঁদা সংগ্রহ এবং মিছিল মিটিংয়ের তোড়জোড় চলত৷ তাঁর বক্তব্য, সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বলেছি শুধু ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়ে তুলুন৷ তাদের সঠিক পাঠ দিন৷ তবেই রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন সম্ভব৷
ডা এ পি জে আব্দুল কালামকে আবারও স্মরণ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত বদলানো সম্ভব নয়৷ কিন্তু স্বভাব পরিবর্তন সম্ভব৷ তাই স্বভাব পরিবর্তন করলে এমনিতেই ভবিষ্যত পরিবর্তন হয়ে যাবে৷ তবে, এই কর্মযজ্ঞে এলামনিকেও ভূমিকা নিতে হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন, রাজ্যে শিক্ষার হাল পরিবর্তনে এলামনির বিরাট ভূমিকা রয়েছে৷ শুধু বিদ্যালয়স্তরে সীমিত থাকলে চলবে না৷ কলেজগুলিতেও এলামনির শক্তিশালী ভূমিকার নজির স্থাপন করতে হবে৷
এদিন শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, কুলাই দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ৭০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান তখনই সফলতা লাভ করবে যখন এই সুকলে একটিও সমস্যা থাকবে না৷ সুকলের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে পরিচালনার ক্ষেত্রেও এলামনির অংশীদারিত্ব থাকতে হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন, এলামনির সদস্যরা প্রতিদিন সুকলের প্রতি নজর রাখলে পঠনপাঠনে এবং পরিচালনার দিকে সমস্যা থাকা সম্ভব নয়৷ কারণ, প্রাক্তনী হিসেবে রাজ্যে বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জনে অংশীদার হওয়া ভীষণ গর্বের বলেই মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী৷
শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ এদিন সাফ জানিয়েছেন, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেওয়ার জন্য তিন বছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি৷ ঘুণে ধরা এই শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়মানে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছি৷ তাঁর বিশ্বাস, রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থা তিন বছরেই জাতীয়স্তরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে৷ তাঁর বক্তব্য, বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষাকে৷ তাই রাজ্যে এনসিইআরটি সিলেবাস চালু হচ্ছে৷ আগামী শিক্ষাবর্ষে এপ্রিল থেকেই নতুন সিলেবাস চালু হবে৷ সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত৷ গত সপ্তাহে এনসিইআরটির আটজন বিশেষজ্ঞ রাজ্যে
এসে মডিউল ঠিক করে দিয়ে গেছেন৷ আগামী ২৬ ডিসেম্বর আরো ১৫ জন বিশেষজ্ঞ রাজ্যে আসবেন৷ তাঁরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নয়া পাঠ্যক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন৷ শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, এনসিইআরটির সিলেবাস চালু হলে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় অধিক সাফল্য অর্জন করতে পারবেন৷ এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী কুলাই দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এলামনির জন্য একটি পৃথক রুম বরাদ্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
এদিন অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী মনোজকান্তি দেব এলামনির এই উদ্যোগের প্রশাংসা করেছেন৷ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এলামনিকে ভূমিকা নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান রেখেছেন৷ এদিকে, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পরিতোষ বিশ্বাস বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, স্মরণিকা আজকের আন্তর এই অঞ্চলের শিক্ষার ইতিহাসের দলিল হিসেবে থাকবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সমাজের প্রতি এলামনির অনেক দায়িত্ব রয়েছে৷ আগামী দিনে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ এদিন এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মৃদুল দত্ত৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তন শিক্ষক প্রাণতোষ কর্মকার ও কাশীনাথ দাস, প্রবীণ নাগরিক গোসিয়া মগ চৌধুরী, আমবাসা মহকুমা শাসক জে বি দোয়াতি, ধলাই জেলা শিক্ষা আধিকারিক রুবেন দোরাই প্রমুখ৷ দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান রবিবার সন্ধ্যায় সমাপ্ত হবে৷ আগামীকাল সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী সংগঠিত করবে এলামনি এসোসিয়েশন৷
2018-12-23

