নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর৷৷ উজান অভয়নগরে আইনজীবি খুনের ঘটনায় রাজধানী আগরতলায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পেছনে একটি জলের ড্রামের ভেতরে মৃত্য অবস্থায় উদ্ধার হন আইনজীবি প্রদীপ মোদক৷ এটি একটি খুনের ঘটনা বলে নিশ্চিত হলেও কারণ খঁুজছে পুলিশ৷
উজান অভয়নগরের দুই বোনকে নিয়ে থাকতেন আইনজীবি প্রদীপ মোদক৷ তাঁর অবিবাহীত জীবনে পরিবারের সদস্য বলতে ছিল দুই বোনই৷ বড় বোন রামু মোদক এবং ছোট বোন জবা মোদক তাঁর খুনের পেছনে কোনও কারণ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না৷ তবে, প্রাথমিক ভাবে জমি সংক্রান্ত বিবাদ এই খুনের পেছনে কারণ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হওয়ার পর পুলিশের হাতে চাঞ্চল্যকর একটি বিষয় উঠে এসেছে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের ছোট বোন জবা বণিকের বালিশে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে৷ তবে, সন্দেহের তালিকায় আরও জন রয়েছে বলে দাবি পুলিশের৷
এ ঘটনা সম্পর্কে বিবরণ দিতে গিয়ে রামু মোদক জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ তাঁর ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয়েছে৷ কারণ, খাওয়া দাওয়া পর সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ এই খুনের ঘটনায় তাঁরা টের পাননি বলে দাবি করেছেন৷ তবে, মৃতের ছোট বোন জবা মোদকের বক্তব্য অনুসারে ভোর ৪টা নাগাদ ঘুমের তন্দ্রায় বাড়ির বাইরে কিছু শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন৷ তিনি জানান, সকাল আনুমানিক ৫টা/৫১০ নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ঘড়ের বাইরে গিয়ে তাঁর ভাইয়ের মৃতদেহ দেখতে পান৷ পাশে রক্তের দাগ ও একটি ভাঙা কড়াই পড়ে রয়েছে বলে দেখেছেন তিনি৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয়৷
এই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে ফরেন্সিক এবং ডগ স্কোয়ার্ডকেও খবর দেওয়া হয়৷ পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের পাশে প্রচুর রক্তের দাগ পাওয়া গেছে৷ তাছাড়া পাশে একটি ভাঙা কড়াই উদ্ধার হয়েছে৷ পুলিশের অনুূমান, প্রদীপ মোদককে খুন করে জলের ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে রাখে দুষৃকতিকারীরা৷ তবে, এই খুনের পেছনে কি কারণ তা খঁুজে পাইনি পুলিশ৷ প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, জমি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে হয়তো বা এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে৷
এই ঘটনায় রহস্য উসকে দিয়েছেন মৃতের বোন জবা মোদক৷ তাঁর দাবি, তাদের বড় ভাই ও তাঁর স্বামী সন্দেহের উর্দ্ধে নয়৷ তিনি জানান, ২০০৮ সাল থেকে স্বামীর সাথে আদালতে তার মামলা চলছে৷ স্বামী তাকে কোনও খরপোষ দিচ্ছেন না, তাই ওই মামলা চলছে৷ তাঁর কথায়, তাদের বড় ভাইয়ের সাথে তাঁর স্বামী কাজল মোদকের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক৷ প্রায়ই তাঁর স্বামীকে তাদের বড় ভাইয়ের বাড়িতে আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়৷ তবে, তারা দুজনে মিলে খুন করেছে কিনা তা স্পষ্ট করে বলেননি জবা মোদক৷
এই ঘটনায় রহস্য আরও বেড়েছে যখন পুলিশী তদন্তে মৃতের বোন জবা মোদকের বালিশে রক্তের ছাপ পাওয়া যায়৷ পুলিশ ওই বালিশটি হেপাজতে নিয়েছে৷ পাশাপাশি জবা মোদককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় সন্দেহভাজন সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷
এদিকে, প্রদীপ মোদকের খুনের ঘটনায় শোকস্তব্ধ রাজ্যের আইনজীবি মহল৷ এদিন বার এসোসিয়েশনে আইনজীবিরা শোক পালন করেছেন৷ পাশাপাশি, আইনজীবিদের এক প্রতিনিধি দল রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সাথে দেখা করে এই খুনের ঘটনা কিনারা করার দাবি জানিয়েছে৷ সম্ভবত রাজ্যে এই প্রথম কোন আইনজীবি খুন হয়েছেন৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই খুনের ঘটনা রাজধানী আগরতলায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ নিজ বাড়ির পেছনে আইনজীবিকে খুনের ঘটনায় স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷
2018-11-30