নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ নভেম্বর৷৷ আজ বিধানসভায় তারকা চিহ্ণবিহীন অপর এক প্রশ্ণের জবাবে অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজ্যে মোট ২৩টি দেশী মদের এবং ৮১টি বিলাতী মদের দোকান আছে৷ বিদেশী মদ বিক্রির জন্য লাইসেন্স প্রদান করে রাজ্য সরকারের বাৎসরিক ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ২৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৪০ টাকা শুল্ক আদায় হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, বর্তমানে রাজ্যকে নেশামুক্ত করার জন্য দেশী ও বিলাতী মদের দোকানগুলি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করার কোন পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই৷ শুধু তাই নয়, উপজাতিদের দ্বারা তৈরি করা দেশী মদকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোন লাইসেন্স প্রদানের পরিকল্পনাও আপাতত রাজ্য সরকারের নেই৷ মূলত, বিধায়ক রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ এবং বিধায়ক রাম পদ জমাতিয়ায় লিখিত প্রশ্ণের জবাবে অর্থ দপ্তরের মন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা এই তথ্য দিয়েছে৷
এদিকে, রাজ্যে মদের দোকান খোলার সময়সীমাও রাজ্য সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ জেলা সদরগুলিতে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ও জেলা সদরগুলি ছাড়া বাকি জায়গায় সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিলেতী মদের দোকান খোলা থাকবে৷ অন্যদিকে দেশী মদের দোকানের ক্ষেত্রে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা রাখার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে রাজ্য সরকার৷ প্রশ্ণ উঠছে, একদিকে রাজ্য সরকার নেশা বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছে, অন্যদিকে মদের দোকান বন্ধ করার কোন পরিকল্পনা নিচ্ছে না৷ এনিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ণ উঠছে৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্য মদ বিক্রি ও সরবরাহ নিষিদ্ধ করেছে৷ ঐসব রাজ্যগুলির সরকার রাজ্যকে নেশামুক্ত করার শপথ নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন৷ কিন্তু, ত্রিপুরায় নতুন জোট সরকার নেশা বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে৷ নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার জন্য৷ মূলতঃ নেশার চোরাচালানের বিরুদ্ধেই রাজ্য সরকারের এই জেহাদ৷ তাতে করে বৈধ লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের দোকানগুলির বিক্রি বাড়ানোই মূল লক্ষ্য৷ যাতে করে রাজ্য সরকারের রাজস্ব আরও বাড়তে পারে, এটাই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি৷
অন্যদিকে, বিলাসী দামি কারে করে প্রায় সত্তর লক্ষ টাকার মাদকদ্রব্য পাচার করতে গিয়ে গোয়েন্দা ও পুলিশের জালে ধরা পড়েছে চার নেশা কারবারী৷ ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উত্তর জেলার চুড়াইবাড়িতে৷ মাদকদ্রব্যগুলি শিলচরে চামড়াগুদাম থেকে পাচার হয়েছিল বলে ধৃতদেহ স্বীকারোক্তির উদ্বৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ধর্মনগরের এসডিপিও জ্যোতিষ্মান দসচৌধুরী৷
পুলিশ সূত্রের খবরে প্রকাশ, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এদিন দুপুরে চুড়াইবাড়ি থানা সংলগ্ণ অসম ত্রিপুরা আট নম্বর জাতীয় সড়কে দলবল নিয়ে ওত পেতেছিলেন গোয়েন্দা শাখার ডিএসপি বিক্রমজিৎ শুক্লদাস৷ এক সময় দূরন্তগতিতে অসম থেকে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে টিআর-০১-বিবি- ০৭৭১ নম্বরের ইকো স্পোর্টস কার৷ পুলিশ গাড়িকে দাঁড় করিয়ে তাতে তল্লাশি চালিয়ে বহু লক্ষ টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট এবং হেরোইন উদ্ধার করেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির আরোহীদের নামিয়ে বামাল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ পুলিশি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা নাকি জানিযেছে নেশাদ্রব্যগুলির মূল মালিক তারা নয়৷ তারা শুধু এগুলি অন্যত্র পাচারের কাজে নিয়োজিত হয়েছিল৷ ইয়াবা ও হেরোইনের প্রকৃত মালিকের নাম এই খবর লেখা পর্যড়ত ধৃতদেহ মুখ থেকে পুলিশ বের করতে পারেনি বলে জানা গেছে ধৃতদেহ আগরতলার নিকটবর্তী আমতলীর জনৈক সত্যরঞ্জন সরকারের ছেলে শংকর সরকার (৩৭), শ্রীনগরের জওহরলাল দত্তের ছেলে সৈকত দত্ত (৩১), রানীরবাজারের হীরালাল ঘোষের ছেলে লিটন ঘোষ (৪৬) এবং অসমের কাছাড় জেলার অন্তর্গত শিলচরের নিকটবর্তী শিলিকুড়ির বাসিন্দা জনৈক রামলাল দাসের ছেলে সুজিত দাস (২৮) বলে পরিচয় পাওয়া গিয়েছে৷ তবে, ধৃত যুবকরা নাকি বলেছে, নেশা সামগ্রীগুলি শিলচর শহরে অবস্থিত চামড়াগুদাম থেকে সংগ্রহ করে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং পরে বাংলাদেশে পাচারের কথা ছিল৷ তারা পুলিশকে জানিয়েছে, গন্ধশূন্য নেশাদ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা বাংলাদেশে৷ তাই সেখানে ভারতের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি দামে বিক্রি হয় এগুলি৷
এদিকে, বৃহৎ নেশা কারবারীর দল ধরা পড়েছে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চুড়াইবাড়িতে ছুটে গিয়েছেন ধর্মনগরের এসডিপিও জ্যোতিষ্মান দাসচৌধুরী৷ গোটা বিষয় তিনি এবং উত্তর জেলার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী খতিয়ে দেখছেন৷ এসডিপিও জানিয়েছেন, নেশার প্যাকেটগুলি খুলে তা থেকে ১২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ৩৬ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়েছে৷ এগুলির বাজারমূল্য কমপক্ষে ৭০ লক্ষ টাকা হবে বলে জানিযেছেন এসডিপিও জ্যোতিষ্মান দাসচৌধুরী৷