সন্ত্রাস ইস্যু, নগরোন্নয়ন বিল ও দোকান বন্ধ নিয়ে পালাবদলের পর জড়তা কাটিয়ে বিরোধীদের বিধানসভায় একই দিনে তিনবার নিষ্প্রভ ওয়াকআউট

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ নভেম্বর৷৷ পালাবদলের পর বিধানসভায় বিরোধীরা জড়তা কাটিয়ে তুলছেন, সোমবার শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে এমনটাই লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ ট্রেজারি বেঞ্চের বিরুদ্ধে আক্রমণ ততটা তেজি রূপ ধারণ করাতে না পারলেও দফায় দফায় বিধানসভা অধিবেশনে ওয়াক আউট করে বিরোধীরা শাসকদলকে চাপে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু, এদিন বিরোধীদের মধ্যে অনেকেই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না৷ ফলে, বিরোধীদের সরকার পক্ষকে চাপে ফেলার প্রচেষ্টা খুবই নিস্প্রভ বলে মনে হয়েছে৷ সোমবার অধিবেশনে প্রথম বেলায় একবার এবং দ্বিতীয়ার্ধে দুই বার বিরোধীরা ওয়াক আউট করেছেন৷

এদিন শূণ্যকালে বিরোধী বিধায়ক সুধন দাস সন্ত্রাস ইস্যুতে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন এই বিষয়ে আলোচনার সুযোগ দেননি৷ সুধনবাবু সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকজন বিধায়ক আক্রান্ত হয়েছেন, এই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বারবার উপাধ্যক্ষের কাছে আলোচনার জন্য সুযোগ দিতে দাবি জানিয়েছেন৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়েননি৷ তাই, বিরোধীরা উপাধ্যক্ষের এই ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সভা ছেড়ে বেড়িয়ে যান৷

এদিকে, দোকন বন্ধ রাখা ও খোলা রাখা নিয়ে এদিন বিধানসভায় ট্রেজারি ও বিরোধী বেঞ্চের মধ্যে বাদানুবাদ হয়েছে৷ বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে দোকন খোলা রাখা হলে শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে৷ এই প্রসঙ্গে বিধায়ক তপন চক্রবর্তীর দাবি, বিল মোতাবেক শ্রমিকদের কাজ করতে হবে বেশী এবং তাদের কাজের নিরাপত্তাও থাকবে না৷ ছোট ছোট ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে যেসব যুবকরা কাজ করছেন তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকেন মালিক তাদের চাকুরী থেকে ছাটাই করে দেবেন৷ তপন চক্রবর্তীর প্রসঙ্গ টেনে বিধায়ক ভানুলাল সাহাও একই কথা বলেন৷ তাঁর দাবি এই বিল পাশ হলে মালিক শ্রেণীর উপর পরোক্ষে ক্ষমতা দেওয়া হবে৷ তাছাড়া প্রতিটি শ্রমিকের যে ন্যায্য অধিকার রয়েছে তাও ক্ষুন্ন হবে৷ বিলের পক্ষে ও বিপক্ষে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে৷ শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বিলটির প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন বিলটি শ্রমিক স্বার্থেই করা হয়েছে৷ প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে৷ তিনি বলেন, দোকন খোলা রাখতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধ্যকতা নেই এই বিলে৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, শ্রমিকরা চাইলে কাজ করবেন না চাইলে করবেন না৷ সমস্ত বিষয় আলোচনার পর বিলটির বিরোধীতা করে বিরোধী বেঞ্চের সদস্যরা ওয়াকআউট করেছেন৷

একই অবস্থা দ্য ত্রিপুরা আরবান্তুিন প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিল নিয়ে৷ এক্ষেত্রেও বিরোধীরা বিলের বিরোধীতা করে সভা থেকে ওয়াক আউট করেনে৷

এদিকে, এদিন বিধানসভায় ৫টি বিল গৃহীত৷ রাজ্যের মানুষ যেন সমবায় সমিতিগুলোর সুযোগ সুবিধা সময়মতো পান এজন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ আজ বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে ‘দ্য ত্রিপুরা কো অপারেটিভ সোসাইটিজ (ফোর্থ এমেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮ (দ্য ত্রিপুরা বিল নং ১৩ অফ ২০১৮) বি লটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ বিধানসভায় বিলটি আজ গৃহীত  হয়৷ বিধানসভায় অনুমোদনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিলটি উত্তাপন করেছিলেন

আলেরাচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিলটি অনুমোদন হ লে রাজ্যের সাধারণ মানুষ উপকৃত হ বেন৷ সমবায় ব্যবস্থার সুযোগ আরও বালোভাবে মানুষ নিতে পারবেন৷ বিলে সমবায়ের সব অধিকার সুরক্ষিত থাকবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার সময়ের মধ্যে কাজ ক রতে চাইছে৷ বিলটি গৃহীত হলে সাধারণ মানুষ সময়মতো সুযোগ সুবিধাগুলি নিতে পারবেন৷ বিলটির বিরোধিতা করে আলোচনা করেন বিরোধী দলের সদস্য রতন ভৌমিক৷

দ্য ত্রিপুরা আরবান প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিল, ২০১৮ (দ্য ত্রিপুরা বিল নং ১৫ অফ ২০১৮) বিলটি আজ বিধানসভঊায় ােলোচনার পর ধবনিভোটে গৃহীত হয়৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ত্রিপুরার উন্নয়নে কাজ করছি৷ রাজ্যে ছোট ছোট টাউনশিপ গড়ে তোলার উদ্যোেগ নেওয়া হয়েচে এজন্য ত্রিপুরা আরবান প্ল্যানিং ডেভেলপম্যান্ট বে ার্ড গঠন করতে  হবে৷ র াজ্যের পুর সংস্থাগুলিকে নিয়েই উন্নয়নের কাজ করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাইছেন নতুন ভারত গড়ার৷ তেমনি আমরাও আধুনিক নতুন ত্রিপুরা গড়ার করতে চাইছি৷ গরীব মানুষরাও যেন ভাল বাড়িতে থাকতে পারেন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আধুনিক ও উন্নতমানের শহরের সুযোগ সুবিধা পেলে যারা রাজ্যের বাইরে থাকেন তারা রাজ্যে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত হবেন৷ বিলটি সমর্থন জানিয়ে আলোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন, বিধায়ক আশীস কুমার সা, সুশান্ত চৌধুরী দিলীপ কুমার দাস৷ অলোচনার  পর বিলটি ধবনি ভোটে গৃহীত হয়৷

বিধানসভায় অলোচার পর দ্য ত্রিপুরত্রা শপস্ এন্ড এস্টাব্লিসম্যােন্ট (ফোর্থ এমেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮ (দি ত্রিপুরা বিল নং ৯ অব ২০১৮) ধবনিভোটে গৃহীত হয় বিলটির বিষয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার শ্রমিকদের কল্যাণে এবং এদের স্বার্থ সুর৭ায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷

এই ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে হৃদ্যতা তৈরি করতে  হবে৷ দোকান খোলা বা না খোলা নির্ভর করবে মালিক পক্ষের ইচ্ছার উপর৷ এই বিলের সর্থনে আলোচনা করেন বিধায়ক বিশ্বকেতু দেববর্মা, বিধায়ক দিলীপ দাস, বিধায়ক অতুল দেববর্মা, বিধায়ক সুভাষ দাস, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া৷ এই বিলের বি রোধিতা করে আলোচনা করেন বি ধায়ক তপন চক্রবর্তী, বিধায়ক ভানুলাল সাহা৷

এই বিলগুলি ছাড়াও আজ বিধানসভায় দ্য ত্রিপুরা সিডিউল কাস্টস এন্ড সিডিউল ট্রাইবস্ রিজার্ভেশন (থার্ড এমেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৮ (দ্য ত্রিপুরা বিল নং ১০ অফ ২০১৮) এবং দ্য ক্রিমিন্যাল ল (ত্রিপুরা এমেন্টমেন্ট) বিল, ২০১৮ দ্য ত্রিপুরা বিল নং ১৬ অড ২০১৮) বিধানসভায় গৃহীত হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *