নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ নভেম্বর৷৷ আরও বেশি সংখ্যায় বিদেশী পর্যটকদের ত্রিপুরার পর্যটন স্থানগুলির প্রতি আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের কুমিল্লাতে ভারতীয় দূূতাবাসের একটি শাখা কার্যালয় গড়ে তোলার জন্য বিদেশ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে৷ আজ বিধানসভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাসের জনস্বার্থে আনা একটি বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেন৷ বিধায়কের আনা মূল প্রস্তাবটি হলো রাজ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে এবং আরও বেশি সংখ্যায় বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের কুমিল্লায় একটি ভারতীয় ভিসা অফিস স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে ত্রিপুরা বিধানসভা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছে৷ আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়৷ বিধাসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্থে আলোচনার জন্য বিষয়টি উত্থাপন করেন বিধায়ক বিয়ন ভূষণ দাস৷
বেসরকারি প্রস্তাবটির উপর আলাচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এই বিষয়টি ত্রিপুরায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রস্তাব৷ এমন একটি প্রস্তাব বিধানসভায় উত্থাপন করার জন্য বিধায়ককে তিনি অভিনন্দন জানান৷ ইতিপূর্বে এরকম প্রস্তাব বিধানসভায় উত্থাপিত হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বক্সনগর গ্রামটি আগরতলা থেকে ৮৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ এখানে কিছু বৌদ্ধস্তুপ পাওয়া যায়, যা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয়৷ পিলাকও একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল যা প্রত্নতাত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ এটি আগরতলায় থেকে কিছু দুরে দক্ষিণ ত্রিপুরার জোলাইবাড়িতে অবস্থিত৷ পিলাকে বেশ কিছু বৌদ্ধস্তুপ আবিষৃকত হয়েছে, যেগুলি ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়েছিলো বলে প্রত্নতত্ববিদরা মনে করেন৷ তাছাড়া বাংলাদেশের কুমিল্লাতে বৌদ্ধস্তুপও পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান৷ এই তিনটি স্থানকে কেন্দ্র করে একটা উল্লেখযোগ্য পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে অচিরেই গড়ে উঠতে পারে, যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়৷ এছাড়াও ত্রিপুরার পর্যটনক্ষেত্রগুলির্ মধেও নীরমহল, মাতাবাড়ি, ছবিমুড়া, জম্পুইহিল, ঊনকোটি এগুলি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য স্থান৷ প্রতি বছরই প্রচুর সংখ্যক দেশি ও বিদেশি পর্যটক এইসব পর্যটনস্থানগুলিতে ভ্রমণ করতে আসেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৭ নভেম্বর থাইল্যান্ডের রাজকুমারী ত্রিপুরার অন্যতম পর্যটনস্থল ঊনকোটি পরিদর্শনে আসছেন, যা বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে ত্রিপুরাকে একটি বিশেষ স্থান দেবে৷ এই উপলক্ষে ত্রিপুরার পর্যটনস্থলগুলিকে বিদেশি পর্যটকদের কাছে আরও বেশি করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে৷ এছাড়াও ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে এক গভীর ও সুদৃঢ় ভাষাগত ও সাংসৃকতিক সম্পর্ক রয়েছে৷ ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত তথা ত্রিপুরা অবদান অনস্বীকার্য৷
উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভাষাগত, জাতিগত একটা মিল থাকায় দুদেশের মধ্যে মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের একটা বাতাবরণ রয়েছে এবং সাংসৃকতিক মেলবন্ধন রয়ে গেছে৷ সীমান্তের উভয়দিকে ছড়িয়ে আছে উভয়দেশের নাগরিকদের আত্মীয়স্বজন৷ তাই দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যেই যাতায়াতের প্রবণতা রয়ে গেছে৷ কুমিল্লাতে ভারতীয় দূতাবাসের শাখা গড়ে উঠলে দুদেশের জনগণের সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থা সহজ হলে উভয় দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারের একটা বিশাল সুযোগ তৈরি হবে৷ আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মালপত্র আমদানি রস্তানি করা হয়৷ এছাড়া সাব্রুম ফেনী নদীর উপরে সেতু তৈরি করার কাজ চলছে৷ এই সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেলে ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্ব ভারতের জন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বার খুলে যাবে৷ এতে শিল্পক্ষেত্রে ত্রিপুরা উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাবে এবং ত্রিপুরাবাসীর আর্থিক উন্নতির সুযোগ খুলবে৷ এরই মধ্যে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে রেলপথের কাজ চলছে৷ এই কাজ সম্পন্ন হলে দুদেশের মধ্যে রেলপথের যোগাযোগ স্থাপন হবে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়ে উঠবে৷ নদীপথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দরও ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে সময়োপযোগী এই প্রস্তাব রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে কল্যাণকর হয়ে থাকবে৷ এই সভার পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবটি ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷
প্রস্তাবটির উপর আলোচনার সূত্রপাত করে বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস রাজ্যের পর্যটনস্থল এবং পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিতে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ আগরতলায় অনুষ্ঠিত ট্যুরিজম মার্টের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের সদস্য রতন ভৌমিকও৷