কলকাতা, ২৬ জুলাই (হি. স.) : হইচই, চেঁচামেচি, বিতন্ডার মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার এ রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া
হল। এদিন বিধানসভা অধিবেশনে ঠিক হয়, বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম হবে বাংলা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা একটা ছোট্ট ব্যাপার। আড়াই বছর আগে আমরা রাজ্যের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকরও করতে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। ওডিশা, গুজরাত, চেন্নাই, মুম্বাই— এ রকম অনেক রাজ্য বা শহরের নাম বদল হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, তিন ভাষায় একটা রাজ্যের তিনটে নাম রাখা যাবে না। তাই আমরা এই সংশোধনী আনছি। এ বাংলা রবীন্দ্রনাথের বাংলা। নজরুলের বাংলা। জীবনানন্দের বাংলা।দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাংলা।
এর আগে ২০১৬-র ২৯ আগস্ট বিধানসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে এই রাজ্যের নাম হবে বাংলা, বেঙ্গল ও বঙ্গাল। পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন অধিবেশনে জানান,আমরা প্রথা মেনে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র আমাদের জানায়, একই রাজ্যের তিন ভাষায় তিন রকম নাম না রেখে একটাই নাম রাখা হোক। তাই এ দিন অধিবেশনে তিন ভাষায় একই নাম রাখার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বাম আমলেও রাজ্যের নামবদল নিয়ে বিধানসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দিন সিপিএমের প্রদীপ কুমার সাহা তার বিশদ আলোচনা করে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। এর প্রতিবাদ উঠতে থাকে শাসক পক্ষ থেকে।
প্রদীপবাবু অধিবেশনে বলেন, ১৯৯৯-এর ২০ সেপ্টেম্বর এ রাজ্যের নাম বদলের আলোচনা হয়েছিল বিধানসভায়। সেই অধিবেশনে সৌগত রায় একটা সংশোধনী দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের নাম ‘বাংলা‘করা হোক। সেই সময় এ রাজ্যের বর্তমান শাসকদল কেন্দ্রের এনডিএ-র শরিক ছিল। তখন কিন্তু এঁরা রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করতে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।
এর পর ২০১১-র ২ সেপ্টেম্বর ফের রাজ্যের নাম বদলের প্রক্রিয়া হয় বিধানসভা অধিবেশনে। তখন ঠিক হয় বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি— তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ‘। সেটাও কার্যকরী হয় নি। ২০১৬-র ২৯ আগস্ট অধিবশনে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী যে যুক্তিপূর্ণ সংশোধনী এনেছিলেন, সেটাকেও উপেক্ষা করা হয়।
প্রদীপবাবু তাঁর ভাষণে একাধিকবার সুজনবাবুর নামোল্লেখ করায় রেগে যান স্পিকার। স্পিকার বলেন, “আপনি আপনার কথা বলুন। বার বার সুজনবাবু সুজনবাবু করছেন কেন?“ প্রদীপবাবু এবং সুজনবাবু দু‘জনই এর প্রতিবাদ করে বলেন, আমি যা বলব, আমার ব্যাপার। আপনি কেন ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন এর মধ্যে? যেটা বলতে চাইছি, সেই সময়ে আমাদের সুপারিশ, সংশোধনীতে আপনারা গুরুত্ব দিলে এই অবস্থা হত না। ওই যে বলে না, কে যেন সেই জল খায়, ঘুলিয়ে খায়!
এ সব নিয়ে প্রদীপবাবুর, সিপিএমের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর এবং তন্ময় ভট্টাচার্যর সঙ্গে শাসক
পক্ষের সোনালি গুহ, পরশ দত্ত প্রমুখের তুমুল বচসা শুরু হয়। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের নিরস্ত করতে না পেরে সুজনবাবুকে ভর্ৎসনা করেন। বলেন, “আপনি একটা দলের নেতৃত্ব দেন। কেন সব সময় দাঁড়িয়ে বাধা দেন? এটা শোভা পায় না! সুজনবাবু বলেন, বাধা তো আমরা দিচ্ছিনা। আপনারা দিচ্ছেন।এর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রমুখ বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার বলেন।
