নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর/ আগরতলা, ২৪ জুলাই ৷৷ মিছিলে আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদয়পুরে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ঘটনা
মঙ্গলবার দুপুরে আনুমানিক দুইটায়৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বামেদের মিছিলটি বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান সহ সেন্ট্রাল রোডের মাঝামাঝি পৌঁছতেই ঘটনার সূত্রপাত৷ হঠাৎ কয়েকশো জনতা মিছিলটির দিকে ধেঁয়ে আসে৷ মুহূর্তের মধ্যে মিছিলটি দৃষ্টভঙ্গ হয়ে যায়৷ সংঘর্ষে কমপক্ষে দশজন আহত হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, অর্ধেকটা মিছিল সামনের দিকে এগিয়ে গেলেও বাকীরা এদিক ওদিক এলোপাথাড়ি দৌড়াতে শুরু করে৷ কিছু উত্তেজিত জনতার হাতে গণপিটুনি খেয়ে ঝান্ডা ফেলে পালাতে বাধ্য হয়৷ বাদল চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিলের সামনের অংশটিতে ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক মাধব সাহা, সুব্রত দেব (প্রাক্তন চেয়ারপার্সন), নিতাই বিশ্বাস, প্রাক্তন মন্ত্রী রতন ভৌমিক সহ অন্যান্য নেতৃত্ব৷ তারা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে৷ যদিও মহাদেব দিঘীর পশ্চিমপাড় চৌমাথায় পৌঁছতেই অন্তত তিন থেকে চারশ লোক তাদের ঘিরে ধরে৷ শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, মারধোর, পুলিশ কনস্টেবল সংখ্যায় ছিলেন হাতেগোনা৷ কোন রকম ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়৷ পরে খবর পেয়ে ছুটে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ আক্রমণ প্রতি আক্রমণের ফলে দু-পক্ষ থেকেই আহত হয়েছেন (বেশ কয়েকজন) তাদের গোমতী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ এ ঘটনার পরেই মামলা পাল্টা মামলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত৷ বামেদের অভিযোগ বিজেপির দুর্বৃত্তরাই পরিকল্পনা মাফিক ঘটনাটি ঘটিয়েছে৷ এদিকে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, মিছিল থেকে সিপিএমের ককেজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেপির কর্মীদের দিকে তাকিয়ে কটুউক্তি ও অঙ্গভঙ্গিমা করে৷ এতেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়৷ তবে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এদিনের বিক্ষোভ মিছিলের আবেদন জানালেও অনুমতি দেয়নি প্রশাসন৷ প্রশাসনকে এক প্রকার বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মিছিল সংগঠিত করেন বাদল বাবুরা৷ ফলে বাম শিবির এ ঘটনায় ব্যাকফুটে রয়েছে বলা যায়৷
এদিকে, বামফ্রন্ট রাজ্য কমিটির তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবাংলায় গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতা জবাই করার প্রতিবাদে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাতাবরণ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আজ ৫টি বামপন্থী দলের আহ্বানে দিল্লিতে সংসদ ভবনের সামনে গণধর্ণা সংগঠিত হয়েছে৷ তারই সমর্থনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবাংলার বামপন্থী আন্দোলন ও জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করা হয়৷
ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের উদ্যোগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মিছিল সভা গণবস্থান প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি প্রতিবালিত হয়৷
আজ মিছিল সংগঠিত করার সময় উদয়পুরে সশস্ত্র বিজেপি কর্মীরা অতর্কিতে মিছিলের ওপর হামলা চালায়৷ এই হামলায় গুরুতর আহত চারজনকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ আরও ২৪-২৫ জন আহত হয়েছেন৷ অতর্কিত আক্রমণে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়৷
পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ত্রিপুরা বিধানসভার বিরোধী দলের উপনেতা কমরেড বাদল চৌধুরী ও রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর আমন্ত্রিত সদস্য ও বিধায়ক কমরেড রতন ভৌমিক মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ তাঁরা সহ পার্টি কর্মীরা আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন৷ ঘটনার প্রায় আধঘন্টা পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে৷
ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি উদয়পুরে বামফ্রন্টের মিছিলে গেরুয়া বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা করছে এবং আক্রমণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে৷
মিছিলের ওপর গেরুয়া বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলার বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট আহুত আগরতলার সমাবেশ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে৷
ত্রিপুরায় বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে মত প্রকাশের অধিকারে কীভাবে পদদলিত হচ্ছে উদয়পুরের আজকের হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ৷ এই হামলার প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীন মত প্রকাশের সংবিধানসম্মত অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দলমত নির্বিশেষে সব অংশের শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণকে সোচ্চার হতে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটি আহ্বান জানাচ্ছে৷