BRAKING NEWS

লহরীর আত্মহত্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের পাঁচ লক্ষ টাকা সহায়তা ও সিআইডি তদন্তে জল ঢেলে দিলেন পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মে৷৷ অপমানে আত্মহত্যা, নাকি লহরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ খোদ পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিং এই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে লহরি দেববর্মার আত্মহত্যা মামলায় তিনি কার্য্যত বিগ বাজার এবং অক্সিলিয়াম কর্তৃপক্ষকে ক্লিনচিট দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, লহরিকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এমন কোন প্রমাণ মিলেনি৷ তাঁকে অত্যাচারেরও কোন প্রমাণ আপাতত পাওয়া যায়নি৷ তবে, তদন্ত চলছে৷ তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এমন আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়৷ কিন্তু, তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগেই অক্সিলিয়াম কর্তৃপক্ষ এবং বিগ বাজার কর্তৃপক্ষকে পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের সার্টিফিকেট, মামলার গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ণ তুলেছে৷ রাজ্য সরকার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মামলাটি সিআইডিকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তা সত্বেও, পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের বয়ানে রাজ্য সরকারের সাথে দ্বিমত রয়েছে বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল৷ বিগ বাজার ও অক্সিলিয়াম কর্তৃপক্ষের হাতে লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণে লহরীর আত্মহত্যা প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারও এই হতভাগ্য পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা সাহায্য ঘোষণা করেছে৷ এই মামলা সিআইডিকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সরকার যখন প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত লহরীর মৃত্যুর কারণ অপমান ও লাঞ্ছনা, তখন পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারের রিপোর্ট রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন দিল না৷

আগরতলাস্থিত অক্সিলিয়াম সুকলের ছাত্রী লহরী দেববর্মার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিএর উপর ন্যস্ত করার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ মঙ্গলবার মহাকরণের প্রেস কনফারেন্স হলে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷ তাঁর কথায়, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক৷ তিনি জানিয়েছেন, সিধাই থানার অন্তর্গত বীরমোহন চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা লহরী দেববর্মা৷ ২৫ মে লহরী দেববর্মার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথীভূক্ত করে এবং সোমবার রাত্রি ৭৩০ মিনিটে লহরীর মা দীপালী দেববর্মা সিধাই থানাতে একটি মামলা দায়ের করেন৷ মামলায় লহরীর মা তাঁর মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে দায়ী করে আগরতলাস্থিত অক্সিলিয়াম সুকলের প্রিন্সিপাল এবং বিগ বাজারের ম্যানেজার ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন৷ ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০৬ ধারায় মামলা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে উপ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷

উপ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আজ সকাল ৯টায় রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মা এবং শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ সহ তিনি লহরী দেববর্মার বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, লহরীর বাবা অনেক আগেই মারা  গেছেন৷ বর্তমানে তার মা ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত৷ তিনি একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ে মাসে চার হাজার টাকার বেতনে কাজ করেন৷ লহরীর একটি ১২ বছরের ছোট ভাই রয়েছে৷ আর্থিকভাবে দুর্বল এই পরিবারের আর্থিক সাহায্যার্থে রাজ্য সরকার এককালীন ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষনা দিয়েছেন৷ পরবর্তীতে পরিবারটিকে কিভাবে সরকারিভাবে সাহায্য করা যেতে পারে সেই বিষয়ে রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে উপ মুখ্যমন্ত্রী জানান৷ ঘটনার পুরোপুরির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মামলাটি সিআইডির উপর দায়িত্বভার দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপ মুখ্যমন্ত্রী৷

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মা বলেন, এটা একটা মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ তাঁর কথায়, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী আগরতলা সহ অন্যান্য এলাকার ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ এবং সাধারণ নাগরিকগণ দু,খিত৷ তার প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে৷ তাঁর বক্তব্য, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের কঠোর শাস্তি প্রদানে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ তিনি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার জন্য এবং রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷

সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, রাজ্য সরকার চায় সুনির্দিষ্ট এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে লহরী দেববর্মার এই দুঃখজনক পরিণতির প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হোক৷

এদিকে, বিকেলে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, গত ২৫ মে বাড়িতেই অক্সিলিয়াম সুকলের দ্বাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগে ছাত্রী লহরী দেববর্মা আত্মহত্যা করেন৷ তার মা এই খবর পুলিশকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে সিধাই থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়৷ পাশাপাশি পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়ে তদন্তও শুরু করে৷ কিন্তু, গত ২৮ মে প্রয়াতার মা দিপালী দেববর্মা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পূনরায় তদন্ত শুরু হয়৷ পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০৬ ধারায় মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷

পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিংহের বক্তব্য, এখন পর্যন্ত এই মামলায় তদন্তে বিগ বাজারের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখার পর তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ এদিকে, বিগ বাজার এবং অক্সিলিয়াম সুকলের কর্তৃপক্ষকেও এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ পুলিশ প্রয়াতার মোবাইল এবং ঘটনার দিন ব্যবহৃত ব্যাগটি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ ওই সমস্ত কিছু ফরেন্সিকে পাঠানো হবে৷ শুধু তাই নয়, কয়েকজন প্রতক্ষ্য দর্শীদেরও বয়ান লিপি বদ্ধ করা হয়েছে৷ অজিত প্রতাপ সিংহের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ কিংবা মোবাইল এবং বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি৷ প্রয়াতাকে ওই দিন বিগ বাজার কিংবা অক্সিলিয়াম সুকলের অত্যাচার করা হয়েছে এমনও কোনও প্রমাণ আপাতত পাওয়া যায়নি৷ শ্রী সিংহের বক্তব্য, লহরীর ব্যাগ থেকে কাপড় উদ্ধার হয়েছে৷

এদিন পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারের কথায়, আত্মহত্যায় উৎসাহ দেওয়ার মামলা হয়েছে৷ প্রয়াতার সুইসাইড নোটটিও উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে৷ তবে, তার বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনও অসঙ্গতি মিলেনি৷ ঘটনার দিন লহরীর সাথে তার আরো তিন বন্ধু ছিলেন৷

পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্যে, আত্মহত্যার ঘটনা রহস্যজনক বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, এদিন তিনি কার্যত্য অক্সিলিয়াম সুকল কর্তৃপক্ষ এবং বিগ বাজার কর্তৃপক্ষকে এই মামলায় ক্লিনচিট দিয়েছেন৷ তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি, এই বক্তব্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ এদিন রাজ্য সরকার এই মামলা সিআইডিকে হস্তান্তরের  ঘোষনা দিয়েছে৷ নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন উপ মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের এই মামলা সম্পর্কে দেওয়া সার্টিফিকেট রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে ফারাক রয়েছে বলেই মনে করছে তথ্যবিজ্ঞ মহল৷ তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়েই পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার এই মামলায় কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি বলে যে আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিচ্ছেন, তাতে মামলার গতিপথ কোন দিকে গড়াবে সেই প্রশ্ণ উঠাই স্বাভাবিক বলে অনেকেই মনে করছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *