বিরোধী জোটের কাছে অন্যসব তুচ্ছ

সায়ন্তক চৌধুরী
অমিতজীর কোনও জারিজুরি টিকলো না৷ মোদি ম্যাজিক কার্যতঃ হাওয়ায় উড়ে গেল৷ ম্যাজিক কোনও লজিক ছিল না তাই এমন করুণ হাল হল মোদিজীর৷ কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচন তাই মোদিজি এবং শাহজিকে যেন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিল৷ কার্যত কর্ণাটকের বিরোধী জোট রুখে দিল শাহজীর অশ্বমেধের ঘোড়াকে৷ বুঝিয়ে দিল টাকাই জীবনে সব নয়৷ বিজেপির টাকার গরিমায় যেন প্রবলভাবে আঘাত হানলো কর্ণাটকের কংগ্রেস ও জেডিএস জোট৷ বুঝিয়ে দিল বিজেপির ঘোড়া কেনার খেলা কর্ণাটকে অচল৷ জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি যেন টাকার খেলায় মেতেছে৷ গোয়া, মণিপুর ও মেঘালয়ে বিজেপির সরকার গঠনে টাকা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত৷ যে রাজ্যে বিজেপির শক্তি কম, সে রাজ্যে বিজেপি উতরে যাচ্ছে টাকার জোরে৷ অমিত শাহের বুঝি ধারণা, বিরোধী বিধায়কদের বাগে আনার একমাত্র ওষুধ হল টাকা৷ কর্ণাটকেও অমিতজী সেই টাকার খেলা খেলতে চেয়েছিলেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেয়েও সরকার গঠনের স্বপ্ণ দেখেছিলনে৷ এ স্বপ্ণের পেছনে ছিল টাকার খেলা৷ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য বিজেপির প্রয়োজন ছিল আরও আটটি আসন৷ হয়তোবা অমিতজী ভেবেছিলেন টাকার জোরে এই আটটি আসন বাগিয়ে নিতে পারবে৷ কিন্তু, তা আর হল না৷
বিরোধী বিধায়করা বুঝিয়ে দিল জীবনে টাকার প্রয়োজন থাকলেও, টাকা জীবনের সব কিছু নয়৷ তাই শত চেষ্টা করেও অমিতজী পারলেন না টাকার খেলা খেলতে৷ কর্ণাটকে তাসের ঘরের মত উড়ে গেল অমিতের সব পরিকল্পনা৷ এর জন্য অবশ্য বাহবা দিতে হয় কংগ্রেস ও জেডিএসের বিধায়কদের৷ অমিতজীর, ঘোড়া কেনার হাট থেকে তারা ছিলেন যোজন মাইল দূরে৷ তারা বুঝিয়ে দিলেন- টাকার চেয়েও পার্টি বড়৷ তার চেয়েও বড় হল মানুষের বিশ্বাস৷ কর্ণাটকের বিধানসভায় যেসব গণদেবতা তাদেরকে জয়ী করেছেন তাদের সাথে কী করে বিশ্বাসঘাতকতা করা যায়৷ বিরোধী বিধায়করা এমন নীতিতে অনঢ় ছিলেন বলে কর্ণাটকে পদ্ম ফুটতে ফুটতে ঝরে পড়লো৷
তবে অস্বীকার করা যাবে না যে, এ বিরোধী হাওয়ার কিং মেকার হলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়াজি৷ তিনি ভোট গণনার দিন পরিস্থিতি বুঝে চটজলদি দেবগৌড়ার সাথে হাত মেলালেন৷ এবং বুঝতে পারলেন যে, জেডিএসেকে ছাড় না দিলে বিজেপিকে রুখা যাবে না৷ তাই দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড় দিলেন জেডিএসকে৷ সেই সাথে উল্টো গেল দাবার চালে৷ অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টও বিজেপিকে আর সময় দিলেন না৷ ফলে অমিতজির ভানুমতির খেলাও বন্ধ হল৷ ফলে কর্ণাটকে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিলেন যে বিরোধী জোট থাকার অর্থ ক্ষমতার শীর্ষে থাকা নয়, এর অর্থ হল কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হঠানো৷ না করে হুটহাট দপ্তরে গিয়ে টেন্ডার বাক্স খোলার জোর দেখানো এখন আর সম্ভব হচ্ছে না৷ এখানেও আরক্ষা দপ্তর সচেতন৷ পুলিশের উপস্থিতি আঁচ পেয়ে দুসৃকতিরা পালিয়ে যায়৷ প্রশ্ণ হল এভাবে কতদিন সরকার দমিয়ে রাখতে পারবে? চাঁদাবাজ ও ঠিকাদারদের উৎপাত বৃদ্ধি পেলে তা প্রশাসনের ক্ষেত্রে যেমন অমঙ্গল তেমনই জনমানসেও পড়বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া৷ কেননা, রাজ্যবাসী সরকার পরিবর্তন করছে অনেক আশা নিয়ে৷ আম জনতা চায় দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন৷ চায় চাঁদার উৎপাত থেকে বাঁচতে৷ সেই দিকে রাজ্যে সরকারকে তীক্ষ্ন নজর রাখতে হবে৷ তা না হলে এক মন দুধের মাঝে এক ফোঁটা চেনা দিলে যে অবস্থা হয় সেই অবস্থা হবে৷ নতুন সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন বলে রাজ্যবাসীর বিশ্বাস৷ এবং এ বিশ্বাসের উপর ভর করে রাজ্যের আম জনতা তাকিয়ে আছে রাজ্য সরকারে দিকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *