কর্ণাটকে সরকার গঠনের দাবী বিজেপি ও জেডিএসের

বেঙ্গালুরু, ১৫ মে (হি.স) ৷৷ কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে টি-২০ ক্রিকেটের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে৷ মঙ্গলবার দিনভর বারবার রং বদলাল বেঙ্গালুরু৷ দিনের শুরুতে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এগিয়ে যায় বিজেপি৷ তবে বেলা বাড়তেই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি৷ বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার আগেই থেমে যাচ্ছে অনুমান করে বিজেপিকে ঠেকাতে জেডিএসকে সমর্থনের ঘোষণা করে জাতীয় কংগ্রেস৷ কংগ্রেসের দেওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় জেডিএস৷ কিন্তু একক বৃহত্তম দল হয়ে ওঠা বিজেপির তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরাপ্পা সবার আগে রাজভবনে পৌঁছে সরকার গড়ার দাবি পেশ করলেন৷ বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কুমারস্বামীও রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি পেশ করেছেন৷

লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটকে সম্ভবত ফুটতে চলেছে পদ্মফুল৷ তবে, বিজেপিকে আটকাতে কংগ্রেসও ঘঁুটি সাজিয়েছে৷ গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় পিছিয়ে থেকেও সরকার গড়ে নেয় বিজেপি৷ তাই, কর্ণাটকে সেই সুযোগ বিজেপিকে দেয়নি কংগ্রেস৷ বিজেপিকে আটকাতে এদিন বিনা শর্তে জেডিএসকে সমর্থন জানায় কংগ্রেস৷ ফলে, বিজেপি ও জেডিএস উভয়েই এদিন রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে৷ তবে, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরিয়াপ্পার দাবি, রাজ্যপাল বিজেপিকেই বিধানসভায় আস্থাভোটে শক্তিপরীক্ষার সুযোগ দিয়েছেন৷

নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহ জুটির কাছে আবারও নাস্তানাবুদ হল কংগ্রেস৷ মঙ্গলবারের ভোট গণনায় ২২২ আসনের কর্ণাটক বিধানসভায় ১১২ টি আসন পেলে তবে সরকার গড়তে পারবে কোন দল৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বৃহত্তম দল হিসাবে বিজেপি পেয়েছে ১০৪টি আসন৷ কংগেস পেয়েছে ৭৮ টি আসন ও জনতা দল পেয়েছে ৩৮টি আসন এবং বিএসপি ১টি, কেপিজেপি ১টি ও নির্দল ১টি আসন৷ এদিনের ভোটে দুটি আসনের একটিতে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া৷ একটি আসনে লড়াই করে জয়ী  হয়েছেন বিজেপির তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরাপ্পা৷ অন্যদিকে এদিনের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন কংগ্রেসের তরফে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আবেদন পাওয়া জেডিএসের কুমারস্বামীও৷

ভোটের হারে বিজেপির তুলনায় কংগ্রেস ভোট বেশি পেয়েছে৷ কংগ্রেস ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ বিজেপি পেয়েছে ৩৬.২ শতাংশ ভোট৷ কিন্তু, আসনের নিরিখে বিজেপি কংগ্রেসের তুলনায় ২৬টি আসন বেশি পেয়েছে৷

এদিন সকাল থেকে প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতির বদল হয়৷ গণনা শুরু হতেই হাসি ফুটে গেরুয়া শিবিরে৷ গণনা শেষের দিকে যেতেই কংগ্রেস সমর্থিত জেডিএস সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়৷ সরকার গঠনের কাছাকাছি পৌঁছলেও ম্যাজিক ফিগারের থেকে সামান্য দূরে রয়েছে বিজেপি৷ কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে ঠিকই৷ তবে দুপুরের দিকের এই পরিস্থিতিতে দেবগৌড়ার দল জেডিএস কে নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগেরস ঘটনার গতিমুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে৷ জেডিএস সুপ্রিমো দেবগৌড়া এবং তার ছেলে কুমারস্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন সোনিয়া গান্ধী৷ কংগ্রেসের ফর্মুলা, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়া হবে জেডিএস কে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন কংগ্রেসের কোনও দলিত নেতা৷ কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে জেডিএস৷ এরপরই কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ জানান, জেডিএস এবং তাদের সম্মিলিত আসন সংখ্যা বিজেপির চেয়ে বেশি হওয়ায় রাজ্যপালের কাছে তাঁরা সরকার গঠনের দাবি জানাবেন৷ সেই মতো লিখিত সমর্থনপত্র নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয় তারা৷ কিন্তু বেঙ্গালুরুর রাজভবনে প্রবেশের অনুমতিই পেল না কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল৷ যদিও পরে রাজ্যপালের কাছে কুমারস্বামী সরকার গঠনের দাবি পেশ করেন৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিদ্দারামাইয়া, মল্লিকার্জুন খাড়্গে ও গুলাম নবি আজাদের মতো কংগ্রেস নেতারা৷

এদিকে, সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ কর্ণাটকে সরকার গড়তে তৎপরতা শুরু হয়ে যায় বিজেপিতে৷ বিশেষ বিমানে বেঙ্গালুরু উড়ে আসেন প্রকাশ জাভড়েকর, জে পি নাড্ডা ও ধর্মেন্দ্র প্রধান৷ বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানালেন ইয়েদুরাপ্পা৷ এদিন রাজভবনে রাজ্যপালকে তিনি বলেন, বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হোক৷ এরপরই কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান, উনি আমাদের বিধানসভায় আস্থাভোটে শক্তি পরীক্ষায় অনুমতি দিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *