বিজেপির বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রণ্ট গঠন করাই মূল লক্ষ্য ঃ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ এপ্রিল৷৷ কৌশলি রাজনীতিতে বরাবই উস্তাদ বামেরা৷ তাই কংগ্রেসের সাথে বোঝাপড়া করলেও কোনও রাজনৈতিক

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদ বিজন ধর৷ সাথে রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া৷ ছবি নিজস্ব৷

সমঝোতায় যাবে না সিপিএম৷ বিজেপির বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রণ্ট গঠন করাই মূল লক্ষ্য৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা সাফ জানালেন, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ তাঁর কথায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রণ্টে কোনও বুর্জুয়া দলের স্থান থাকবে না৷ পাশাপাশি এদিন তিনি বিজেপি – আইপিএফটি জোট সরকারকেও একহাত নিয়েছেন৷ সন্ত্রাস ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্বেও পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিজন বাবু৷

সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের কথায়, হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক লাইন স্থির হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রণ্ট গঠন করাই সিপিএমের এখন একমাত্র লক্ষ্য৷ কারণ, বিজেপি ও আরএসএস দেশের জন্য মারাত্মক বিপদ হয়ে দাড়িয়েছে৷ বিজেপির মোকাবিলায় ফ্রণ্ট গঠন করেই এগোতে হবে৷ তবে, এই ফ্রণ্টে বুর্জুয়া কোন দলের স্থান থাকবে না৷ তাঁর সাফ কথা, কংগ্রেস এই ফ্রণ্টে থাকবে না৷ এই রাজনৈতিক লাইন ধরেই বিজেপিকে মোকাবিলা করতে চাইছে সিপিএম, বলেন বিজন ধর৷

তাঁর কথায়, বিজেপিকে হঠাতে অধিকাংশ বিজেপি বিরোধী ভোট এক জায়গায় একত্রিত করার উপর জোড় দেওয়া হবে৷ এক্ষেত্রে যে রাজ্যে সিপিএম দুর্বল সেখানে অন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সমঝোতা করা হবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, কংগ্রেসের সাথেও নির্বাচনে বোঝাপড়া করা হবে৷ কিন্তু, কংগ্রেসের সাথে কোনও রাজনৈতিক সমঝোতায় যাবে না সিপিএম৷ কারণ, নীতির প্রশ্ণে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনও ফারাক নেই৷ বিজনবাবুর বক্তব্য, বিজেপি বিরোধীতায় সংসদের ভেতরে কংগ্রেসের পাশে থাকবে সিপিএম৷ কিন্তু, সংসদের বাইরে একাই লড়বে সিপিএম৷

এদিকে, রাজ্যের চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন বিজন ধর৷ তিনি সন্ত্রাস ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না৷ তাঁর কথায়, গত ১৪ এপ্রিল বামপ্রতিনিধি দলকে সন্ত্রাস ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণ হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে তাদের৷ এবিষয়ে বিজন ধরের যুক্তি, পার্টির দুই যুবনেতা অজেন্দ্র রিয়াং ও রাকেশ ধর খুন হয়েছেন৷ অথচ আসামী এখনও গ্রেফতার হয়নি৷ এই রাজ্যে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে সম্প্রতি চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন৷ অমরপুর কলেজের অধ্যক্ষকে দৈহিক ভাবে লাঞ্ছনার পাশাপাশি তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে৷ শিক্ষক আক্রান্ত হচ্ছেন৷ কয়েক হাজার সিপিএম কর্মী সমর্থক ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না৷ পার্টি অফিসের দখল একই ভাবে চলছে৷ সবচেয়ে উদবেগের বিষয় হলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরে চাপ দিয়ে দলত্যাগ এবং পদত্যাগ করানো হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা সভাধিপতি হিমাংশু রায়কে জোড় করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ তেমনি উদয়পুর পুরপরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত দেবও চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে সারা রাজ্যেই চাঁদার জুলুম কংগ্রেস – টিইউজিএস জোট আমলকেও হার মানাচ্ছে৷

এদিন বিজনবাবু আইপিএফটিকেও একহাত নিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, পৃথক রাজ্যের দাবিতে পুরোনো কায়দায় মোহচ্ছন্ন করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে৷ কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল রাজ্য সরকার এ বিষয়ে নিরব অবস্থান নিয়ে রেখেছে৷ অবশ্য আইপিএফটি পৃথক রাজ্য ইস্যুতে মর্ডালিটি কমিটি গঠনের দাবিতে বিজেপিকে ৩ মাসের সময় দিয়েছে৷ এই সময়সীমার মধ্যে কমিটি গঠন না হলে তাঁরা আন্দোলনে যাবে বলে হুমকি দিয়েছেন৷ বিজন বাবু এদিন বিদ্রুপের সুরে বলেন, পৃথক রাজ্য নিয়ে যারা আওয়াজ তুলছেন তাঁরা নিজেরাও জানেন এই দাবি পূরণ হওয়া সম্ভব নয়৷ সাথে তিনি যোগ করেন, আইপিএফটি আলাদা রাজ্য না হলে এডিসি এলাকায় কাউকে থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দিচ্ছে৷ বিজন বাবুর সাফ কথা, এমন পরিস্থিতি রাজ্যবাসীর জন্য ভয়ঙ্কর৷

এদিকে, পঞ্চদশ অর্থকমিশন নিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকষণ করে তিনি বলেন, কিছু বিষয় ক্ষতিয়ে দেখার জন্য কমিশনকে বলা হয়েছে৷ তা রাজ্যের স্বার্থে আঘাত আনতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *