কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
রাজ্যে হলুদের গুঁড়োর মতো কিছু লোক রয়েছে৷ এই হলুদ লোকেদেরকে অনেকে চামচা বলেও চিহ্ণিত করে৷ সব তরকারিতে হলুদের গুঁড়ো যেমন অপরিহার্য তেমনই কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে সব কাজে অপরিহার্য বলে মনে করে থাকেন৷ এই হলুদ বাবুরা যুগ যুগ ধরে গিরগিটির মত রঙ পাল্টিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে পিছপা হন না৷ লোকে কি বললো তা তাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়৷ তাদের অভিষ্ট লক্ষ্য হল নিজ কার্যসিদ্ধির জন্য হলুদের মত বিচরণ করা৷ হলুদ গুঁড়োর সাথে হলুদ ব্যক্তির পার্থক্য অনেক৷ হলুদের গুঁড়ো তরাকারির রঙকে উজ্জ্বল করে তুলে৷ তার অর্থ হল হলুদ গুঁড়োর কাজ হল অন্যের শ্রীবৃদ্ধি করা৷ আর হলুদ ব্যক্তিদের অভিসন্ধি হল নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করা৷
এই হলুদ ব্যক্তিরা সভা সমিতিতে নিজেদের জাহির করতে ব্যস্ত থাকেন৷ তাদের কাছে স্থান কাল পাত্রের কোনও ভেদ থাকে না৷ জল যেমন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের রঙ ধারণ করে তেমনই হলুদ ব্যক্তিরাও রঙ ধারণ করতে ওস্তাদ৷ তারা নির্লজ্জের মত সবখানে নিজেদেরকে মিশিয়ে নিতে পারঙ্গম৷ তাই এই হলুদ ব্যক্তিদের কাছে সরকারে কে থাকলো আর কে আলো তা বিবেচনার নয়৷ তাই তারা হল চলতি হাওয়ার পন্থী৷ ডান-বাম তাদের কাছে নস্যিতুল্য৷ তারা সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করে নিতে জানে৷ আজ বাম হলে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা জামা পাল্টো ডান হয়ে নিজেদেরকে জনপন্থী হিসাবে জাহির করতেও কসুর করেন না৷
রাজ্যজুড়ে এখন চলছে তেমনই হলুদ ব্যক্তিদের ছড়াছড়ি৷ দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর যারা বাম সরকারের গুণকীর্তনে ব্যস্ত ছিলেন তারাই এখন ডানের ভজনে মত্ত৷ এখন আর বাম ভজনে কোনও লাভ হবে না৷ কেননা, রাজ্য জুড়ে বামের ঘর তাসের ঘরের মত উড়ে গেছে৷ বামেরা এখন অস্তিত্বের সংকটে৷ ১৮ এর বিধানসভার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের এভাবে শোচনীয় পরাজয় ঘটবে তা তারা ভাবতে পারেননি৷ কিন্তু বাস্তব যে বড় নিষ্ঠুর৷ যেসব লোক ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে গলা ফাটিয়েছিল আজ তারাই ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলছে৷ আর যেসব হলুদ ব্যক্তি বাম আমলে বাম সরকারের গুণগান গেয়ে ঝাড়া বত্তৃণতা দিয়েছিলেন আজ তারাই বামফ্রন্টের পতনের পর সিপিএমের সংশ্রব ত্যাগ করে পদ্মবনে সামিল হলেন৷ অথচ এক সময়ে তারা ডানপন্থী দলকে সাম্প্রদায়িক শত্রু বলতেও দ্বিধা করেননি৷ রাজ্যজুড়ে একমাত্র বাম সরকারই ছিল শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ বলে এই হলুদ ব্যক্তিরাই দাবি করেছিল৷ কিন্তু কী আশ্চর্য৷ ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে হলুদ ব্যক্তিরা যেন নিজেদেরকে নিমিষে পাল্টিয়ে নিল৷ তেমনই এক হলুদ ব্যক্তি বাম আমলেও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তেমনি বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবেরও ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যাচ্ছে৷ রাজ্যজুড়ে এই ব্যক্তির আলাদা পরিচয় রয়েছে৷ এ পরিচয় সম্ভ্রমের৷ এই পরিচয় রয়েছে শুভ্র চেতনার ছোঁয়া৷ রয়েছে একটি শান্ত সমাহিত ফল্গু ধারার আমেজ৷ রয়েছে পরহিতে কাজ করার এক অনির্বচনীয় আকর্ষণ৷ এমনই এক ব্যক্তি যিনি বামের আমলে বিভিন্ন সরকারী অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন সেই তিনি এখন বিজেপি সরকারেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছেন৷ শুধু সরকারী অনুষ্ঠানে নয়, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগটনগুলিতেও তিনি অতীব জরুরী ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন৷ বলা যেতে পারে সেই হলুদ ব্যক্তি বর্তমানে হলুদের সন্ধানে ব্যস্ত৷ তাকে দেখলে শ্রদ্ধায় অবনত হতে হয়৷ কিন্তু, সেই তিনি বর্তমানে বিজেপি সরকারের অতি কাছের লোক হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন৷ নতুন সরকারের চারিদিকে ছড়াচ্ছেন হলুদ রঙ৷ তাইতো বলতে ইচ্ছা হয় সত্যিই সেলুকাস! বিচিত্র এই দেশ৷ কাল যেভাবে ছিল আজ সে জনের ভজনে ব্যস্ত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *