নয়াদিল্লি, ১০ এপ্রিল (হি.স.) : দলিত সংরক্ষণ নিয়ে ডাকা ভারত বন্ধে সারা দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া | তবে কয়েকটি রাজ্যে প্রভাব পড়ল এই বন্ধে|
মূলত, জাতি ভিত্তিক সংরক্ষণের প্রতিবাদেই এই বনধ। শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের প্রতিবাদেই মঙ্গলবার বনধ-এর ডাক দিল একাধিক সংগঠন। বিহারের আরায় ট্রেন অবরোধ করা বন্ধ সমর্থনকারীরা। মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ ও মোরেনায় বিক্ষোভ, এলাকায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে বিক্ষোভের জেরে স্কুল বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেয় প্রশাসন। রাজস্থানের জয়পুরে স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। প্রভাব পড়ল রেল চলাচলে |
শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে জাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরোধিতায় আজ কয়েকটি অনামী সংগঠনের ভারত বনধের ডাকে নানা জায়গা থেকে অশান্তির খবর এসেছে। বিহারের আরায় বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন গুলি চলেছে, জখম হয়েছেন ৯ জন পুলিশকর্মী। এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
জানা যাচ্ছে, ২ তারিখের বনধের পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই সংরক্ষণ বিরোধী বনধের ডাক দেওয়া হয়। রাজস্থানের সর্ব সমাজ নামে একটি অনামী সংগঠন বনধের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছে। মধ্য প্রদেশে নির্দেশ এসেছে আজ স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার। ভিন্দ, গোয়ালিয়র ও মোরেনায় দলিত বনধে ৬ জন মারা যান, এই তিন এলাকায় আজ জারি থাকবে কারফিউ। গুজরাত থেকে রাস্তা রোখার খবর এসেছে। মঙ্গলবার বিহারের বারহ্–এ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বন্ধ সমর্থকরা। এছাড়া আরা, পাটনা, বেগুসরাই, লখিসরাই, মুজাফ্ফরপুর, ভোজপুর, শেখপুরা, দ্বারভাঙা সহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রেন এবং সড়ক অবরোধে বিপর্যস্ত পরিবহন পরিষেবা।
এদিকে পূর্ব রেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়, ১২৩৩২ ডাউন হিমগিরি এক্সপ্রেস ফতুয়া স্টেশনে আটকে থাকে সকাল ৮.২২ থেকে ৩টে পর্যন্ত। ১২৩৬৮ ডাউন বিক্রমশীলা এক্সপ্রেস চৌসা স্টেশনে আটকে থাকে সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা ১টা ৪৬ পর্যন্ত। ২২৪০৬ ডাউন আনন্দ বিহার-ভাগলপুর এক্সপ্রেস কারাউটা স্টেশনে আটকে থাকে সকাল পৌনে ন’টা থেকে ১৪.৫২ পর্যন্ত। ১২৩১৬ ডাউন অনন্যা এক্সপ্রেস দিলদারনগর স্টেশনে আটকে থাকে সকাল সাড়ে দশটা থেকে ১৩.৫০ পর্যন্ত। বেলা পৌনে দুটোর পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ভারত বনধের জন্য মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আপ ও চারটি ডাউন ট্রেন আটকে যায়। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন ও পূর্ব মধ্য রেলের কিছু অংশে আটকে যায় ট্রেনগুলি। নাজেহাল হন যাত্রীদের একটা বড় অংশ। ওড়িশার সম্বলপুরে একটি সংগঠনের সদস্যরা রেল অবরোধ করেন। ফলে আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন। অন্যদিকে, মঙ্গলবার বেলা সওয়া এগারোটা থেকে ১৩৩৩১ আপ ধানবাদ-পটনা এক্সপ্রেস জসিডি স্টেশনে আটকে থাকে। সেটিকে সেখান থেকে ১৩৩৩২ ডাউন পটনা-ধানবাদ এক্সপ্রেস হিসাবে ছাড়া হয়। ১২৩০৩ আপ হাওড়া-নয়াদিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেস জসিডিতে আটকে থাকে ১২.৩৮ থেকে ১৬.৪৯ পর্যন্ত। ১৮১৮৩ আপ টাটানগর -দানাপুর এক্সপ্রেস বেলা সওয়া তিনটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত মধুপুর স্টেশনে আটকে থাকে। রাজগীর থেকে দিল্লিমুখী শ্রমজীবী এক্সপ্রেস আটকানো হল নালন্দায়।
এদিকে বনধের প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রদেশেও| মধ্যপ্রদেশের মোরেনা এবং ভিন্দে জারি কারফিউ। দেশের বিভিন্ন স্থানেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা সকাল ৯টা থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে সংবেদনশীল এলাকায়। উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদে আগের দিনই স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছিল প্রশাসন। তবে মিরঠে এদিন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ।
গত সোমবার দলিত নিপীড়ন আইন শিথিল করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরোধিতায় ভারত বন্ধ ডেকেছিল দলিতরা। তার বিরোধিতাতেই মঙ্গলবারের ভারত বন্ধ। তবে আজকের সংরক্ষণ বিরোধী বনধ নিয়ে দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে তেমন প্রভাব পরেনি| যেমনটা নেই এ রাজ্যে। যদিও সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র, নিরাপত্তা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার তপশিলি জাতি-উপজাতি সংরক্ষণ আইন শিথিল করার প্রতিবাদে সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল ভারত বনধ৷ বনধের ডাক দিয়েছে একাধিক দলিত সংগঠন৷ বনধকে সমর্থন জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম মিশন এবং অল ইন্ডিয়া আদি ধর্ম সমাজ৷ এর জেরেই ওদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটে৷ ঘটে একাধিক হতাহতের ঘটনা | গোলমালের আশঙ্কায় পাঞ্জাবে সিবিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পঞ্জাবের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ব্যঙ্ক এবং যানবাহন পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়৷ রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইন্টারনেট পরিষেবাও৷