নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ এপ্রিল৷৷ ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এ রাজ্যের যুবক-যুবতীদের কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরাকে উন্নয়নের দিক দিয়ে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার উপর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গুরুত্বারোপ করেছেন৷ তিনি আজ সকালে প্রজ্ঞাভবনের ১নং হলে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা ( পি এম কে ভি ওয়াই)-র আওতায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরাতেই প্রথম এই প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার আওতায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়৷ তিনি বলেন, যোগাযোগ পরিকাঠামোর মূল ভিত্তি হচ্ছে সড়ক পথ, জল পথ ও বিমান পথ৷ কিন্তু ত্রিপুরাতে মূলত ঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সড়ক পথকে ভিত্তি করে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাস্তা তৈরী করার জন্য ত্রিপুরায় পাথরের অভাব থাকায় ইটের উপর নির্ভরশীল হতে হয়৷ যা মাটি দিয়ে তৈরী হয়৷ রাজ্যের ইট ভাট্টাগুলিতে দক্ষ আগুন মিস্ত্রি না থাকায় ইট ভাট্টাগুলিতে রাজ্যের বাইরে থেকে বেশি টাকা মজুরী দিয়ে দক্ষ কারিগর আনতে হচ্ছে৷ রাজ্যে ৩৫০ টির মতো ইট ভাট্টা থাকা সত্ত্বেও এর সুফল তেমন ভাবে পাওয়া যাচেছ না৷ যে অঞ্চলে ইট ভাট্টা স্থাপিত হয়েছে সেখানকার স্থানীয় লোকেরা যাতে আগুন মিস্ত্রির কাজটা দক্ষতার সাথে রপ্ত করতে পারেন তার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন৷
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধীন দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারী চাকরি কোনও দেশের বা রাজ্যের উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করতে পারে না৷ রাজ্যের উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করবে ছোট শিল্প, শিল্প কারখানা, কর্মদক্ষতার উন্নয়নে৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েল আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে অনেক ছোট হলেও এ দেশগুলি উন্নতশীল দেশের নিরিখে চরম শিখরে রয়েছে৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী গ্রাম উন্নয়ন, কুটির শিল্প উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন৷ কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তখনকার সময়ের সরকার জোর দিয়েছিলো বড় শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ওপর৷ কিন্তু দক্ষতার অভাবে ভারতবাসী সেই শিল্প কারখানার কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলোনা৷ যার ফলে ভারতের বাইরে থেকে দক্ষ কারিগর এনে সেই কারখানা চালানো হতো৷ প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার মাধ্যমে রোজগার এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ত্রিপুরা এগিয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷ ভবিষ্যতে রাজ্যে যে সমস্ত শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে তাতে এ রাজ্যের যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান যাতে হয় সেই জন্য তাদের আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবকে বলেন৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব এম নাগারাজু৷ অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা এস প্রভু৷ অনুষ্ঠানে সমস্ত অংশগ্রহণকারী যুবক – যুবতীদের দক্ষতার উন্নয়নের উপর শপথ বাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এছাড়া অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী একটি নিউজলেটার উন্মোচন করেন এবং দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুবক যুবতীদের হাতে শংসাপত্রও তুলে দেন৷ বিভিন্ন সেক্টর স্কীল কাউন্সিলের সাথে রাজ্য সরকারের মৌ স্বাক্ষর কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়৷
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার স্টেট কম্পোনেন্ট কর্মসূচি রূপায়ণে দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তর বর্তমানে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ১৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ১৮৩০ জন যুবক যুবতীদের ১৩ টি সেক্টরে প্রশিক্ষণ দেবেন৷ প্রথম অবস্থায় রাজ্যের ৫টি জেলায় এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ১২৩ জন যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৬২ জন যুবক যুবতীদের রাজ্য সরকার সেন্ট্রালি স্পনসর্ড স্টেট ম্যানেজমেন্ট কম্পোনেন্ট (সি এস এস এম)-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে৷