রাজ্যের শিক্ষায় বেহাল দশা, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই কৌলিণ্য হারাচ্ছে, নামছে মান, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মার্কশিট প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ এপ্রিল৷৷ উচ্চ শিক্ষায় রাজ্যের অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগের, সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদত্ত র্যাঙ্কিংয়ে  তা প্রমাণিত হয়েছে৷ ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমশ কৌলিণ্য হারাচ্ছে৷ মান ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকড় দেশের বিশ্ববিদ্যায়গুলির মার্কশিট প্রকাশ করেছেন৷ তাতে দেখা গেছে, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়েছে ১৯৭তে৷ মোট ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিট প্রকাশিত হয়েছে৷ ফলে, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিদ্যার্থীমহল৷

অবশ্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্ক গতবছরও তালিকার শেষ পর্যায়েই ছিল৷ ২০১৭ সালে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্ক ছিল ১৯৬৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, এবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় আরো খারাপ ফলাফল করেছে৷

গত তিন বছরের র্যাঙ্কিংয়ের তথ্য ঘাটলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করতে পেরেছিল৷ ওই বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় স্কোর করেছিল ৪৯.৮৯ এবং র্যাঙ্ক ছিল ৮৮৷ কিন্তু, ২০১৭ সালেই একলাফে এই বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে পৌছায় র্যাঙ্কিংয়ে ১৯৬তে৷ এবছর আরো একধাপ নীচে নেমে স্থান হয়েছে ১৯৭তে৷

ক্রমশ র্যাঙ্কিংয়ে নীচে নেমে যাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা নিঃসন্দেহে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষার বেহাল দশার পরিচয় দিয়েছে৷

শিক্ষাঙ্গনে মুক্তমনের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হবে, তা খুবই স্বাভাবিক৷ রাজনীতি, কৃষ্টি, সংসৃকতি সহ নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা হওয়াও স্বাভাবিক৷ কিন্তু, মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেলেই একটি প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকারে ডুবে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার চর্চা ব্যতিত অন্য সবকিছুই পাল্লা দিয়ে চলছে৷

শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখা খুব সহজ নয়৷ কিন্তু, দূর্নীতিমুক্ত রাখা দুঃসাধ্য বলে মনে হয় না৷ অভিযোগ, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্বদ্যিালয়ের মান ক্রমশ খারাপ হওয়ার জন্য ‘দূর্নীতি’ অন্যতম কারণ৷ অবশ্য, অনিয়ম নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে৷ সম্প্রতি, ইউজিসি ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অডিটের নির্দেশ দিয়েছে৷ উপাচার্য অঞ্জন বসুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷

কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত যেখানে সম্পৃক্ত, সেখানে রাষ্ট্রশক্তিকেও সেদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরী৷ এক্ষেত্রে, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সমানভাবে দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করছেন অভিভাবকমহল৷

বুধবার ত্রিপুরার নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল নিয়েও বিরাট ঝামেলা হয়েছে৷ প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলে দেখা গেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল বা ব্যাক পেয়েছে৷ এই দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও নিতে হবে বলে দাবি উঠেছে৷ অভিভাবকমহলের মতে, শিক্ষা নিয়ে দায়িত্বশীল সরকার এবং শিক্ষাবিদদের কোন আপোষ করা  উচিৎ হবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *