নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারি৷৷ নিরাপত্তার প্রশ্ণে জম্পুইজলায় গণনা কেন্দ্র বদলের দাবি জানিয়েছে সিপিআইএম৷ কারণ, সিপিআইএম মনে করছে, টাকারজলা এবং জম্পুইজলা মহকুমায় আইন হৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, তাতে গণনা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়৷ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের কাছে টাকারজলা এবং জম্পুইজলা মহকুমায় গণনার দিন আইপিএফটি(এনসি) দুসৃকতিদের হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিএম৷ কারণ, সিপিআইএম চিন্তিত, ভোটের আগে থেকেই যেভাবে আইপিএফটি(এনসি)’র দুসৃকতিদের হামলা হুজ্জুতি হয়েছে, তা গণনা দিনও একইরকম থাকবে৷ এদিকে, স্ট্রং রুমে ব্যবহৃত ইভিএমের বদলে অব্যবহৃত ইভিএম রাখার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় মিলেছে৷ রিটার্নিং অফিসার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন৷ তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী গৌরী দাস গণনার দিন এই ইভিএমের ভোট সবশেষে গণনার দাবি জানিয়েছেন৷
বুধবার টাকারজলা এবং গোলাঘাটি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীরা নিজ নিজ রিটার্নিং অফিসারের কাছে গণনা কেন্দ্র বদলের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন৷ তাতে, ভোটের আগে থেকেই আইপিএফটি(এনসি)’র দুসৃকতিদের হামলার প্রসঙ্গ এনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন৷ বিভিন্ন সময়ে সিপিএম প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ তাদের বুথে ঢুকতে না দেওয়া, এমনকি এপিক কার্ড কেড়ে নেওয়ারও অভিযোগ জানিয়েছেন টাকারজলা কেন্দ্রের প্রার্থী রমেন্দ্র দেববর্মা এবং গোলাঘাটি কেন্দ্রের প্রার্থী কেশব দেববর্মা৷ তাঁদের মূল অভিযোগ আইপিএফটি’র বিরুদ্ধেই৷ সাথে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এখন পর্যন্ত যেভাবে হামলা হুজ্জুতি চালিয়েছে আইপিএফটি(এনসি)’র দুসৃকতিরা, গণনার দিনও একইভাবে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করে রাখা হবে৷ তাতে নিরাপত্তা নিয়ে সিপিএমের দুই প্রার্থী প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাই, তাঁরা গণনা কেন্দ্র বদলের দাবি জানিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার তাঁদের দাবি সনদ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের কাছে পাঠিয়ে জম্পুইজলায় গণনা কেন্দ্র বদলের দাবি জানিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ তাঁর কথায়, সুষ্ঠ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবের মেজাজে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও, টাকারজলা এবং জম্পুইজলা মহকুমায় নিরাপত্তা নিয়ে সিপিআইএম চিন্তিত৷ ভোটের আগে থেকেই যেভাবে হামলা হুজ্জুতির ঘটে চলেছে, গণনার দিনও একই পরিস্থিতি থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ এধরনের পরিস্থিতির জন্য সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক আইপিএফটি(এনসি)’কে দায়ী করেছেন৷ তাঁর কথায়, সিপিআইএমের টাকারজলা এবং গোলাঘাটি কেন্দ্রের প্রার্থীরা নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ণ তুলেছেন, তার প্রতি বিবেচনা করে জম্পুইজলায় গণনা কেন্দ্র বদল করা হোক৷ কারণ, সিপিআইএম মনে করছে, টাকারজলা এবং জম্পুইজলা মহকুমায় আইন শৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি তাতে গণনা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়৷
এদিকে, নির্বাচনে ভোট পর্বে ব্যবহৃত ইভিএম পাওয়া গেছে স্ট্রং রুমের বাইরে৷ একই সঙ্গে অব্যবহৃত ইভিএম রাখা হয়েছে স্ট্রং রুমের ভেতরে৷ ঘটনাটি ঘটেছে তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসকের অফিসে৷ এই ঘটনায় যেমন চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, তেমনি প্রশ্ণচিহ্ণ দেখা দিয়েছে মহকুমা শাসকের কার্যকলাপে৷
জানা গেছে, ভোটের দিন সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হতেই ২৮ তেলিয়ামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিবেকানন্দ দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের ৪৫ নম্বর বুথে ইভিএমে গোলযোগ দেখা দেয়৷ ফলে ইভিএম পরিবর্তন করা হয়েছিল৷ পরবর্তীতে নেওয়া হয় ভোট৷ এরপর অন্য বুথের মতো এখানেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ভোট পর্ব৷ জানা গেছে, ভোটকর্মীরা যথাসময়ে ইভিএম মহকুমাশাসকের অফিসে জমা দিয়ে যান৷ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সামনে ইভিএমগুলি স্ট্রংরুমে রাখাও হয়৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের দুদিন পর বৃহস্পতিবার মহকুমা শাসকের নজরে আসে ২৮ তেলিয়ামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ৪৫ নম্বর বুথে ব্যবহৃত ইভিএমটি নির্ধারিত স্ট্রংরুমে না রেখে পার্শ্ববর্তী রুমে রাখা হয়েছে৷ আর অব্যবহৃত ইভিএমটি স্ট্রংরুমে রাখা আছে৷
এই ঘটনা নজরে আসতেই রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক জয়ন্ত দে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন৷ খবর দেওয়া হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এবং প্রার্থীদের৷ বসে আলোচনা করে স্ট্রংরুমের সিল ভেঙে ইভিএমগুলি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ব্যবহৃত ইভিএমটি বিশেষ একটি স্ট্রং রুমে রাখা হয়েছে৷ এবিষয়ে তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণী রায় বলেন, মানুষ মাত্রেই ভুল হয়৷ তাই বিষয়টি নিয়ে আর জলঘোলা হোক তা তিনি চাইছেন না৷ তবে, ভোটের কাজে প্রশাসনের আরো যত্নবান হওয়া উচিৎ ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ সিপিআইএম প্রার্থী গৌরী দাস বলেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে৷ অভিযোগের প্রতিলিটি তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রের অবজারভার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে৷ সাথে তিনি এই ইভিএমটির গণনা সবশেষে হোক, সেই দাবি জানিয়েছেন৷

