ইভিএম বিভ্রাটের মাঝেও রাজ্যে অটুট ভোটের ঐতিহ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি৷৷ রাজ্যে মতদানের ঐতিহ্য প্রায় অটুট রয়েছে৷ কিন্তু, ইভিএম বিভ্রাট ভোটের উৎসবকে খানিকটা হলেও কলুষিত করেছে৷ বিধানসভা নির্বাচনে রবিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৭৮.৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ প্রায় ১০০টি বুথে তখনও ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে৷ ফলে ভোটের হার আরো বাড়বে, তা খুবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু, এদিন ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মিলিয়ে ৩৩৯টি ভোট যন্ত্রাংশ বিকল হয়েছে৷ ফলে, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটেছে৷ একাধিক ভোটারের ধৈর্য্যচ্যুতি হয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরে গেছেন৷ এদিন, এই ইভিএম বিভ্রাটের ফলে বহু ভোটারকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে৷ মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থতার দায় অকপটে স্বীকার করেছেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরো নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা যেত৷ কিন্তু, গলদের ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটেছে৷ এরজন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন৷ এদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে৷

রবিবার ৫৯টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাতে, ২৯২ জন প্রার্থীর ভাগ্য এখন ইভিএমে বন্দি হয়ে রয়েছে৷ এদিন, সকাল ৭টা থেকেই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ কিন্তু, ইভিএম ও ভিভিপ্যাটে গোলযোগের ফলে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়৷ নির্বাচন কমিশন ভোট যন্ত্রাংশ সারাই এবং বদলের চেষ্টা করলেও বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে অনেক দেরিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়৷ এই নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়৷ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই বাড়ি ফিরে যান৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছিল এদিন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আদৌ সম্পন্ন হবে কিনা৷

বেশ কয়েকটি বুথে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ভোট গ্রহণ শুরু হয়৷ এনিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দেয়৷ তবে, নির্বাচন কমিশন এবিষয়ে তৎপরতা দেখানোয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়৷ ভোট যন্ত্রাংশ সারাই এবং বদল হওয়ার পর পুরোদমে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ তবে, দুপুর নাগাদ তেলিয়ামুড়া এবং আগরতলার কয়েকটি বুথ সহ অন্যান্য স্থানেও ফের  ভোট যন্ত্রাংশে গোলযোগ দেখা দেয়৷ অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে তা সারাই করে নেওয়াও হয়৷

রাজ্যে গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটের হার ৯০ শতাংশ অতিক্রম করেছিল৷ কিন্তু, এবারে ভোটের হার অনেকটাই কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানিয়েছেন, রাত ৯টা পর্যন্ত মোট ভোটের হার ৭৮.৫৬ শতাংস৷ আরো ১০০টি বুথে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে৷ ফলে, ভোটের হার আরো কিছু বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু, বিগত নির্বাচনগুলির ধারেকাছে পৌঁছাবেনা বলেই অনুমান করা যাচ্ছে৷

এদিন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানিয়েছেন, বিকেল চারটের মধ্যে ভোটাররা ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ালেই যত রাতই হোক তাঁদের ভোট নেওয়া হবে৷ এদিন রাত ৯টায় পশ্চিম জেলার জেলা শাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরণীকান্তি জানিয়েছেন, রাজ্যে ভোট গ্রহণ পর্ব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ সারা রাজ্যে ৩১৭৪টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়েছে৷ তাতে, রাত ৯টা পর্যন্ত মোট ৭৮৫৬ শতাংস ভোট হয়েছে৷ তিনি বলেন, সকালে ইভিএমে গোলযোগের কারণে ভোট গ্রহণে কিছুটা দেরি হয়েছে৷ তবে এই দেরি ইচ্ছাকৃত নয় বলে দাবি করেন তিনি৷ তাঁর কথায়, গতকাল রাতে ভোট যন্ত্রাংশগুলি পুনরায় পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সংকোচের কারণে তাতে ত্রুটিগুলি ধরা পড়েনি৷ তিনি জানান, ১৯১ টি ভিভিপ্যাট এবং ৭৯টি কন্ট্রোল ইউনিট ও ৬৯টি ব্যালট ইউনিটে গোলযোগ দেখা দিয়েছিল৷ সময়মত সেই ভোট যন্ত্রাংশগুলি বদল করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরো সন্তোষজনক হতে পারতো৷ প্রস্তুতি আরো নিখঁুতভাবে হওয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু, তাতে গলদ রয়েছে৷ তাই তিনি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, আরো নিখঁুতভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হলে ভুল ত্রুটিগুলি সহজেই এড়ানো যেত৷ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সমস্ত কাজে আরো যত্নবান হওয়া উচিত ছিল৷ এই নির্বাচনের শিক্ষা আগামীদিনে আরো নিখঁুতভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷

এদিন তিনি জানান, ২৩১৫টি স্থানে অনলাইন ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ কিন্তু দুর্বল সিগনালের জন্য ১৮৫৪ টি স্থানে অনলাইন ওয়েবকাস্টিং করা গেছে৷ বাকি জায়গাতে অফলাইন ওয়েবকাস্টিং হয়েছে৷ এদিন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরো জানিয়েছেন, সিপিএম ও বিজেপি দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বুথে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে৷ তবে, কেবল মাত্র করমছড়া বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বুথে পুনঃনির্বাচন হবে৷ কারণ, মকপল চলাকালিন ভোট মুছে ফেলা হয়নি৷ এই কারণে ঐ বুথে পুনঃনির্বাচন হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *