নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর/বিলোনীয়া, ২ ফেব্রুয়ারি৷৷ কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগানোর পাশাপাশি বিজেপির
বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করলেন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত৷ মোদি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর দেশের জনগণের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন হয়নি৷ জনজীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার৷ মোদি সরকার দেশটাকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে সচেষ্ট৷ শুধু তাই নয় বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার যে সাধারণ বাজেট পেশ করেছে সংসদে সেই বাজেটে পুঁজিপতিদের সুবিধা করে দিয়েছে৷ শুক্রবার বিলোনীয়ায় বি কে আই মাঠে বামফ্রন্টের এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই সাঁড়াশি আক্রমণ করেছেন প্রকাশ কারাত৷
অন্যদিকে, সিপিএম পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যে বিজেপির কাজকর্মের তীব্র সমালোচনা করেন৷ তিনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন৷ পাশাপাশি একটি এশুভ শক্তির সাথে আঁতাত করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে বলে মানিক সরকার মন্তব্য করেছেন৷ মানিক সরকার উদয়পুরে কে বি আই মাঠে বামফ্রন্টের প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন৷
এদিকে, বিলোনীয়ায় সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রকাশ কারাত বলেন, মোদি সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর নয়বার জ্বালানী তেলের দাম বাড়িয়েছে৷ কর বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলির একটিও পূরণ করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ক্রমশ বাড়ছে৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই মোদি সরকারের৷ কর্পোরেট স্বার্থে মোদি সরকার কাজ করছে৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিজেপি হচ্ছে দাঙ্গা করার দল৷ এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আইপিএফটির সাথে জোট গড়েছে৷ এই আইপিএফটি পৃথক রাজ্যের দাবী তুলে রাজনীতি করছে৷ যা এরাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ কখনোই মেনে নেবেন না বলে কারাত মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার এরাজ্যের উপজাতি অংশের জনগণের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য কাজ করছে৷ ১ লক্ষ ২৪ হাজার উপজাতি অংশের জনগণকে বনাধিকার আইন মোতাবেক জমির পাট্টা দিয়েছে৷ যা গোটা দেশের মধ্যে বিরল৷ অনেক রাজ্যে উপজাতিদের জমির পাট্টা দেওয়া হয়নি৷ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আসন্ন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট বিপুল আসনে অষ্টম বারের মতো সরকার গঠন করবে৷
ধর্ম যার যার দেশ ও রাষ্ট্র সবার৷ শুক্রবার উদয়পুর কেবিআই ময়দানে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থনে আয়োতিত সমাবেশে বক্তব্যরাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ তিনি তার বক্তব্যে বিজেপিকেই উদ্দেশ্য করে একথা বলেন৷ বিজেপি সরকার গঠনের পর গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদের বাতাবরণ তৈরী করে চলছে৷ ইন্দোনেশিয়ার পর ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশী মুসলিমদের বসবাস৷তারাও ভারতবাসী৷ কিন্তু এই কথাটি সরকারে আসার পর থেকেই গোখাদ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি শুরু করে৷ সংবিধানের কোথাও কি লেখা আছে এই নিষেধাজ্ঞা৷ দলটির এটাই কাজ খাওয়াতে, পোশাকে, মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা৷ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন করার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আরএসএর এর ক্যাডার দিয়ে মুসলিমদের খুন করা হচ্ছে৷
সমাবেশের প্রধান বক্তা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে প্রথম দিক থেকেই উঠে আসে কেন্দ্র বিরোধী বক্তব্য৷ বিজেপি সরকারের মুখের কোন দাম নেই বলে তিনি জানান৷ বিজেপি সরকারের প্রতিষ্ঠার আগে জনগণকে দেওয়া সেই ১৫ লক্ষ টাকার কথা তিনি ভুলে গেলেন৷ জনগণকে বোকা বানিয়ে এই মিথ্যাবাদীর সরকার আজ কেন্দ্রে ক্ষমতায় বসেছে৷ বেকারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বছরে দুই কোটি চাকরির টোপ এখন কোথায়?
শ্রীসরকার বলেন, রাজ্যের জাতীয় সড়কে আইপিএফটিকে বসিয়ে রাজ্য ভাগের চক্রান্তের মূল কান্ডারী এই বিজেপি৷ কেন্দ্রের সরকার দিল্লিতে বসে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের মূল কান্ডারী বলে তিনি দাবি করেন৷ আর তা না হলে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী এন সি দেববর্মার পিঠে হাত বুলিয়েছেন কেন? চারটি বছর হয়ে গেল কেন্দ্র এই বিজেপীর সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও তার পরও দেশে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা কেন ঘটছে৷ কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য না পেয়ে আত্বহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে আর কেন্দ্রীয় সরকার উদাসিন৷ এই সরকার শ্রমিক, কৃষকদের কল্যাণে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে শ্রী সরকার দাবি করেন৷ তিপ্রাল্যান্ডের দাবী মেনে বিজেপি সরকার তাদের সাথে জোট করেছে৷ এখন রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে৷ তাই রাজ্যবাসীর যাতে তাদের চোখ কান খোলা রাখে এবং এরাজ্যের শান্তি সম্প্রীতি এবং উন্নয়নের ধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার আহ্বান জানান৷ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন নরেশ চন্দ্র জমাতিয়া, রতন ভৌমিক, মাধব সাহা, মানিক বিশ্বাস, শ্রীকান্ত দত্ত প্রমুখ৷