রণনীতির দরকার নেই, মানুষই আনবে পরিবর্তন ঃ অমিত শাহ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আমবাসা/উদয়পুর, ৭ জানুয়ারি৷৷ সরকার পরিবর্তনে রণনীতির দরকার নেই৷ রাজ্যের মানুষই সরকার পরিবর্তন করবেন৷ রবিবার বিজেপির মহা সংকল্প র্যালী উপলক্ষে উদয়পুর ও আমবাসায় জনসভায় দৃঢ়তার সাথে একথা জানান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ তাঁর কথায়, রাজ্যের মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই বিজেপি সরকার পরিবর্তন চাইছে৷ কারণ, কমিউনিস্টের শাসনে শুধুই গরীবি, বেকারত্ব, বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা জুটেছে রাজ্যবাসীর৷ সাথে যোগ করেন, রাজ্যের মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষা হচ্ছে না৷ তাঁরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন৷ তাই এদিন অমিত শাহ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট সরকারকে ধুঁয়ে মুছে সাফ করার হুংকার দিয়েছেন৷
অমিত শাহ বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম শাসনে রাজ্যের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি৷ তাঁর বক্তব্য, যেখানে কমিউনিস্ট সরকার শাসন করে সেখানেই গরীব মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলে৷ এরাজ্যেও গরীবের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যের মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই বিজেপি সরকার পরিবর্তন চাইছে৷
অমিত শাহের দাবি, পরিবর্তন শুধু কমিউনিস্টদের হটানোর জন্য নয়৷ এ রাজ্যের মানুষের কল্যাণে, কর্মসংস্থানে, মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষায় এবং রাজ্যের ধর্ষিতা ও অত্যাচারিতা মা বোনদের চোখের জল মুছে দেওয়ার জন্যই পরিবর্তন চাইছে বিজেপি৷ তাঁর মতে, অত্যাচারিত কমিউনিস্ট শাসন থেকে রাজ্যের মানুষের মুক্তির এখন সময় হয়েছে৷ কারণ, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন না হলে উন্নয়নের প্রশ্ণে এই রাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়বে৷
তিনি বলেন, সারা দেশে যেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে সেখানেই উন্নয়ন হয়েছে৷ কিন্তু এই রাজ্যের উন্নয়নের ইচ্ছে নেই মানিক সরকারের, তাই এ রাজ্যে কোন কিছুই নেই, তোপ দাগেন অমিত শাহ৷ তাঁর কথায়, এরাজ্যে রোজগার, শিল্প, মানুষের প্রতিবাদের অধিকার কোনটাই নেই৷ রয়েছে শুধু গুন্ডাগিরি, ক্যাডার সন্ত্রাস এবং ক্যাডার তোষণ৷ যা ২৫ বছর ধরে একইভাবে চলছে, কটাক্ষ করেন তিনি৷ অমিত শাহ বলেন, এরাজ্যে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে৷ তবুও সিপিএমের সমর্থকরা মানিকবাবুকে ভালো বলে থাকেন৷ যদি তিনি ভালো হয়ে থাকেন তাহলে এরাজ্যের ভালো কেন হচ্ছেনা, এর জবাব এখন এরাজ্যের মানুষ চাইছেন বলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি৷
অমিত শাহ বলেন, বেকারদের জন্য সিপিএম কোন কিছুই করেনি৷ কারণ, রাজ্যে বেকার থাকুক, মানুষ শিক্ষিত না হোক, তা চাইছে সিপিএম৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যের যুব সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে৷ সিপিএমের উদ্দেশ্য, অন্নের জন্য, কাজের জন্য অভাবের তাড়নায় রাজ্যের যুব সমাজ যেন ক্যাডারদের পেছনে ঘুরেন,কটাক্ষ করেন অমিত শাহ৷
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করলেন বিজেপি র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ একইসঙ্গে তিনি বাম নেতাদের বিরুদ্ধে ভ্রষ্টাচারের অভিযোগও তুলেন৷
বিজয় সংকল্প জমায়েতে অমিত শাহ বলেন, কেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অর্থ সাহায্য ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে৷ রাজ্য সরকার না চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকার স্ব-উদ্যোগী হয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য ১৩০ কোটি টাকা দিয়েছে৷ কিন্তু ভ্রষ্টাচারে গলা পর্যন্ত ডুবে গেছে এ রাজ্যের বাম নেতা-মন্ত্রীর৷ শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই নয় অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তর কেলেঙ্কারি হয়েছে৷ আর এ সবের তদন্ত হলে মানিক সরকারকেও জেলে যেতে হবে৷
তিনি বলেন, ত্রিপুরা ভিন্ন এমন কোনও রাজ্য নেই যেখানে ম্যালেরিয়ায় প্রতিবছর এত লোক মারা যাচ্ছেন৷ যেখানে হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাক্তার নেই৷ আবার যেখানে ডাক্তার আছে সেখানে প্রকাঠামো নেই৷ ২৫ বছরে এটাই মানিক সরকারের সাফল্য৷ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতো জনপরিষেবা সম্প্রসারিত করতে হলে এ রাজ্যের পরিবর্তন আবশ্যক৷
যারা সমগ্র বিশ্ব থেকে মুছে যাচ্ছে সেই কমিউনিস্টদের ত্রিপুরায় কোনও স্থান থাকতে পারে না৷ আর সমগ্র ভারত থেকে কংগ্রেসমুক্ত হয়ে যাচ্ছে সেখানে ত্রিপুরায় তাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, উল্লেখ করেছেন তিনি৷
নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর ত্রিপুরাকে যেভাবে সহায়তা করেছে তার কোনও ইতিবাচক পরিণাম দেখছেন না অমিত শাহ৷ তাই এদিন তিনি রাজ্য সরকারে চরম উদাসীনতা এবং অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন৷ কেন্দ্র দেয না বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগেরও তিনি করা ভাষায় জবাব দিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে রাজ্যকে চার (৪) হাজার কোটি দিয়েছেন অর্থ কমিশন থেকে৷ কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা করে দেয়৷ কিন্তু এতে কী লাভ হল তা বোঝা যাচ্ছে না৷ রাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি মোটেই৷ জনগণ যে অবস্থায় ছিলেন তা থেকে পরিত্রাণ পাননি৷ সমস্যা ইতোপূর্বে যা ছিল তারও কোনও সমাধান হয়নি৷
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থ কমিশন প্রদত্ত অর্থ বাদ দিলেও বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ ত্রিপুরা সরকার কেন্দ্র থেকে আরও ১৭ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে৷ কিন্তু একটি প্রকল্পও সাফল্যের মুখ দেখেনি৷ তাছাড়া সাড়ে তিন বছরে ত্রিপুরায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ যুবক-যুবতীকে মুদ্রাঋণের মাধ্যমে স্বনির্ভর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আট (৮) লক্ষ লোককে জনধন যোজনার আওতায় আনা হয়েছে৷ ২১ হাজার মহিলাকে রান্নার গ্যাসের সুবিধা দেওয়া হয়েছে৷ সাড়ে তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার এতসব ব্যবস্থা নিতে পারলেও রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার ২৫ বছরে কী সাফল্য এনে দিয়েছে জবাব মানিক সরকারকে দিতে হবে বলে তিনি উল্লেক করেন৷
এদিকে রাজ্যে সরকার গঠনের পরই সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন বলবৎ করার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি৷ তাছাড়া কর্মচারী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি৷
অমিত শাহ বলেন, রাজ্যে বামশাসনে তাদের ক্যাডার ছাড়া সবাই বঞ্চিতা৷ এই বঞ্চনার হাত থেকে সকল অংশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে৷ ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের দিনই সপ্তম বেতন কমিশনের ঘোষণা করা হবে৷ বিজেপি নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা যেদিন শপথ গ্রহণ করবে তার দুই দিন পর সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা পেয়ে যাবেন সর্বস্তরের কর্মচারীরা৷ তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরায় কর্মচারীদের বঞ্চিত করে আসছে বামফ্রন্ট সরকার৷ শুধু সরকারি কর্মচারীরই নন, অন্যান্য সবক্ষেত্রেই বঞ্চিত এ রাজ্যের মানুষ, কৃষক, শ্রমিক জনগণ, প্রাপ্য সাধারণ পরিষেবাগুলি থেকেও এ রাজ্যের জনগণ বঞ্চিত৷ ফলে রাজ্যবাসী এবার উচিত জবাব অবশ্যই দেবেন৷ বিজয় সংকল্প সমাবেশে অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে তাঁর ২৫ বছরের রাজত্বকালে সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, আইন শৃঙ্খলার অবনতি প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেন৷
এদিন জনসভার মঞ থেকে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ তাছাড়া বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে যুক্তদেরও জেলে পাঠাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
অমিত শাহ বলেন, রাজ্যের জনগণের টাকা যাঁরা লুটেপুটে খেয়েছেন তাদের রেহাই দেওয়া হবেনা৷ তাঁরা রাজ্যের মানুষকে গরিব বানিয়ে রেখে দিতেই তৎপর ছিল এত বছর ধরে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কারা লাভবান হয়েছে তা বিজেপি যেমন জানে, রাজ্যের মানুষও সে সম্পর্কে অবগত৷ এখন তাঁদের সময় শেষ হয়ে এসেছে৷ যাঁরা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তাঁদের খুঁজে বের করা হবে৷ মাটির নীচে থাকলেও তাঁরা রেহাই পাবেন না৷ জনগণের অর্থ ফিরিয়ে দিতেই হবে৷ তিনি আরও বলেন, শুধু চিটফান্ডই নয় রাজ্যে যে সব কেলেঙ্কারি হয়েছে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সবগুলি তদন্ত হবে৷ যারা দোষী তাঁদের প্রত্যেককে জেলে ঢোকানো হবে৷ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, চিটফান্ড সহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে যুক্তরা উল্টো গণনা শুরু করে দিতে পারেন৷ কারণ তাঁদের সময় শেষ হয়ে গেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *