আগরতলা থেকে ব্যাঙ্গালুরু, যাত্রা শুরু হামসফর এক্সপ্রেসের, পুর্বোত্তরে রেলের বিকাশে অর্থের অভাব নেই, দ্রুতগামী ট্রেন চলবে আগরতলা-দেওঘর ঃ রাজেন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ জানুয়ারি৷৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলির সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে

আগরতলা-ব্যাঙ্গালুরু হামসফর এক্সপ্রেসের সূচনা

কাজে হাত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাছাড়া শীঘ্রই আগরতলা-দেওঘর ট্রেন চলাবে মন্ত্রক, জানিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁই৷ শুক্রবার হামসফর এক্সপ্রেস ট্রেনের সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল প্রকল্পের উন্নয়নে টাকার কোনও সমস্যা হবে না৷ রেল মন্ত্রক যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করেছে এই অঞ্চলের রেল প্রকল্পগুলির উন্নয়নে৷ তবে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা পুরোপুরি খরচই করতে পারছে না রাজ্যগুলি৷ নয়া ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর -পূর্বাঞ্চলকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তোলা৷ আর সে লক্ষ্যেই কাজ শুরু হয়েছে৷ বাংলাদেশ হয়ে মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের সঙ্গে ব্যবস্থা করে সমগ্র বিশ্বের কাছে উত্তর -পূর্বাঞ্চলের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র৷ মঞ্চে ত্রিপুরার পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে প্রদত্ত বক্তব্য খন্ডন করে রাজেনবাবু বলেন, ত্রিপুরার রেল পরিষেবার এত উন্নতি কোনও আন্দোলনের ফলে হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বদিচ্ছায় ফলে হয়েছে৷ এত কম সময়ে রেলের এত অগ্রগতি ইতোপূর্বে কোথাও হয়নি৷ তিনি জানান, মেঘালয় এবং সিকিমে জমি অধিগ্রহণ সমস্যা রয়েছে বলে রেল সম্প্রসারণের কাজ সঠিকভাবে এগোচ্ছে না৷ ত্রিপুরায় শেষ প্রান্ত বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা সাব্রুমে ২০১৯ এর মধ্যে রেল পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি৷  হামসফর এক্সপ্রেস বর্তমানে সপ্তাহে একদিন চলবে৷ পরবর্তীতে আরও একদিন বাড়ানোর চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছেন রাজেন গোঁহাই৷

শুক্রবার আগরতলা রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগরতলা-ব্যাঙ্গালুরু হামসফর এক্সপ্রেসের সূচনা করেন রেল মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই৷ ছবি নিজস্ব৷

এই সভায়ই মন্ত্রী রাজেন গোঁহাই বলেন, ত্রিপুরায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত ১৩ লক্ষ সংসঙ্গী রয়েছেন৷ তাঁদের গুরুগৃহ দেওঘরে যাতায়াতের জন্য কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক এক নতুন দ্রুতগামী রেল চালানোর অনুমোদন দিয়েছে৷ ইতিমধ্যে রেল মন্ত্রকের আধিকারিকদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী গোঁহাই৷ তিনি জানান, রাজ্য বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন৷ তাঁর আবেদনে মন্ত্রক সাড়া দিয়েছে৷ তিনি নিজে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান৷ রাজ্যে নির্বাচন দোরগোড়ায়৷ এর আগে এ ধরনের পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে৷

এদিকে, আগরতলা রেল স্টেশনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মানিক দে বলেন, রাজ্যে চালু রেল পরিষেবার মানোন্নয়ন করতে হবে৷ বিভিন্ন স্টেশনের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে৷ সেই সাথে রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানিক দে বলেন, রাজ্যে রাজধানী এক্সপ্রেস এবং ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস ১৫-২০ ঘন্টা বিলম্বে যাতায়াত করে৷ তাতে যাত্রী সাধারণকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ এই সব সমস্যাগুলি নিরসন করার জন্য দাবী জানান মানিক দে৷ পাশাপাশি তিনি রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজ্যে যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হচ্ছে তা ব্যবহার করে রেল চালানো যেতে পারের৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সর্বোতভাবে সহায়তা করবে বলে জানান মানিক দে৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত৷ তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে আরও রেল দাবী করেছেন রাজ্যের জন্য৷ তিনি পেসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেমকে আরও বেশী সময় আগরতলা স্টেশনে খোলা রাখার দাবী করেছেন৷ তাতে যাত্রীদের সুবিধা হবে৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বিধায়ক দিলীপ সরকার সহ রেলওয়ের আধিকারীক৷

এরপর অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত রেলমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই সহ অন্যান্যরা সবুজ পতাকা দেখিয়ে হামসফর এক্সপ্রেসের সূচনা করেন৷৯২ জন যাত্রী নিয়ে শুক্রবার হামসফর এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু করেছে আগরতলা থেকে৷ এই ট্রেনে একটি পেন্ট্রিকার, দুটি জেনেরেটার এবং ১১থ্রি টায়ার এসি কামরা রয়েছে৷ প্রথম অবস্থায় মোট ১৪টি কোচ নিয়ে হামসফর যাত্রা শুরু করেছে৷ বেঙ্গালুরু যেতে ৬৪ ঘন্টা এবং আগরতলায় আসতে ৬৫ ঘন্টা সময় লাগবে৷ হামসফর এক্সপ্রেস রাজ্যের আমবাসা ও ধর্মনগর, অসমের নিউ হাফলং, লামডিং, গুয়াহাটি, হাওড়া হয়ে বেঙ্গালুরুর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে গিয়ে পৌঁছার কথা৷ এর আগে ট্রেনটি গুয়াহাটি, কাম্যাখ্যা, নিউ বঙাইগাঁও, নিউ কোচবিহার, নিউ জলপাইগুড়ি, মালদা টাউন, রামপুরটাই জংশন, হাওড়া, খড়গপুর, কটক ভুবনেশ্বর, বিসাখাপত্তনম, বিজওয়াড়া এবং চেন্নাই -এর কাছাকাছি স্টেশন পেরুমপুদুরের মতো স্টেশনে বিরতি দেবে৷ হামসফর এক্সপ্রেসকে ব্যাঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে নিয়ে যান লুকো পাইলট সুসেন দাস এবং তার সহযোগি হিসেবে রযেছেন ডি বর্ধন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *