মুম্বই, ২ জানুয়ারী (হি.স. ): গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে আজ মঙ্গলবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল মহারাষ্ট্রের একাধিক এলাকায়। সোমবার পুণে জেলার কোরেগাঁও ভিমা এলাকায় দলিতদের কর্মসূচিতে এক যুবকের মৃত্যুর জেরে এদিন এই উত্তেজনা ছড়ায় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুম্বইয়ের বেশ কয়েকটি এলাকায় চারজনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিংসা যাতে না ছড়ায় তার জন্য গুজবে কান না দিতে বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করেছে মুম্বই পুলিশ। ওই মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফরনবিশ | বুধবার গোটা মহারাষ্ট্রে বন্ধের ডাক দিয়েছেন দলিত নেতা প্রকাশ অম্বেডকর।
সোমবার পুণে জেলার কোরেগাঁও ভিমা এলাকায় দলিতদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় এক দলিত যুবকের মৃত্যু হয়। তার জেরে পুণে উত্তপ্ত ছিল কাল থেকেই। আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মুম্বইতে। শহরের একাধিক এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বহু সরকারি বাসে। ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঠানেও। অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিয়েছে গোটা শহর।রাস্তায় বেরিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারন মানুষকে। ছড়িয়েছে উত্তেজনা চেম্বুর, নাকার পাশাপাশি মুলুন্দ, রামাবাই, আম্বেদকর নগর, নেহেরু নগর, কুরলাতেও । বিক্ষোভকারীরা জোর করে বেশ কিছু দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর। ঘটনার জেরে বুধবার গোটা মহারাষ্ট্রে বন্ধের ডাক দিয়েছেন দলিত নেতা প্রকাশ অম্বেডকর।
এদিনের ঘটনায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ট্রেন পরিষেবাতেও। বিভিন্ন এলাকায় দলিত বিক্ষোভকারীরা রেল অবরোধও করেছেন। ফলে অধিকাংশ রুটের লোকাল ট্রেন বন্ধ। সিএসএমটি-কুরলা এবং মনখুর্দের মধ্যে হারবার লাইন দিয়ে কিছু ট্রেন চালানো হচ্ছে। বিক্ষোভের আঁচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৩৪টি সরকারি বাস। মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হিংসার ঘটনার পর কিছুক্ষণের জন্য পুনে ও আহমেদনগর হাইওয়েতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় আরও পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের রিজার্ভ বাহিনী। উস্কানিমূলক মেসেজের আদানপ্রদান রুখতে কিছুক্ষণের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করা হয়।
কোরেগাঁও-এ গতকালের হিংসার ঘটনার বিচারবিভাগীয় হবে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের একজন বিচারপতি ওই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন। তিনি গুজবে কান না দেওয়ার এবং শান্তি বজায় রাখার আর্জিও জানিয়েছেন। গতকাল কোরেগাঁও-তে অশান্তির জেরে ১ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
হিংসা রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। একইসঙ্গে শান্তি বজায় রাখারও আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন কেন প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিল না। প্রশাসনের এই ত্রুটিতেই সংশয় ও গুজব ছড়ায়। এর ফলেই হিংসার ঘটনা ঘটে। তাঁর সন্দেহ, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে সমাজবিরোধী শক্তি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটাওয়ালে হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে দলিতদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কোরেগাঁওয়ের কাছে সানসওয়াড়িতে আসা দলিত গোষ্ঠীকে বাধা দেওয়া হয়। তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। দলিত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সুরক্ষার জন্য কোনও পুলিশি ব্যবস্থা ছিল না বলেও মন্তব্য করেছেন আটাওয়ালে। তিনি গ্রামে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তার বন্দোবস্তর আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।