নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ অক্টোবর৷৷ বাজল সাইরেন রাজধানী এক্সপ্রেসের৷ আগরতলা স্টেশনে উলুধবনী দিয়ে যাত্রা শুরু করা হল দেশের

সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন এই এক্সপ্রেস ট্রেনের৷ রাজ্যবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হল এইভাবে৷ আগরতলা থেকে সরাসরি রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি পাড়ি দিলেন রাজ্যবাসী৷ বিলাসবহুল এই ট্রেন যাত্রার সূচনা লগ্ণেই অনেক যাত্রী রাজধানী এক্সপ্রেস চড়ে শনিবার দিল্লি রওয়ানা দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই, রাজ্যপাল তথাগত রায়, পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, পরিবহন মন্ত্রী মানিক দে, সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী, সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত, স্থানীয় বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক দিলীপ সরকার এদিন সবুজ পতাকা দেখিয়ে রাজধানী এক্সপ্রেসের সূচনা করেন৷ আগরতলা থেকে সরাসরি দিল্লির আনন্দবিহার স্টেশনে যাবে দ্রুতগামী এই এক্সপ্রেস ট্রেন৷
এদিন সকাল থেকেই আগরতলা স্টেশনে উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা গেছে৷ বহু উৎসাহী মানুষ সকাল থেকেই স্টেশনে ভীড় জমাতে শুরু করেন৷ স্বপ্ণের রাজধানী এক্সপ্রেসকে ছুয়ে দেখে আস্বস্ত হয়েছেন, অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে৷ নবীন থেকে শুরু করে প্রবীনদের অনেকেই ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি নিতে দেখা গেছে৷ বেলা গড়াতেই ভীড়ও বাড়তে থাকে৷ একই সাথে যাত্রীরাও স্টেশনে এসে উপস্থিত হন৷ এদিন রাজধানী এক্সপ্রেসের সূচনাকে ঘিরে স্টেশন চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর ছিল৷
যাত্রার সময় যত নিকট আসছিল রাজধানী এক্সপ্রেসের কর্মীরা একে একে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন৷ যথাসময়ে ইঞ্জিন রেলের বগির সাথে যুক্ত করা হয়৷ সেই মুহুর্তকেও ক্যামেরাবন্দি করতে কোনরকম খামতি রাখছিলেন না স্টেশন উপস্থিত উৎসাহি জনগন৷ তবে, ওই সময় কোনধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে রেলওয়ে কর্মী এবং আরপিএফের জওয়ানরা সেদিকে কড়া নজর রেখেছিলেন৷
[vsw id=”w9d-F0JSku0″ source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]বেলা ১টায় রাজধানী এক্সপ্রেস রওয়ানা দেওয়ার কথা থাকলেও, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য কিছুটা সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়৷ প্ল্যাটফর্মে ডিসপ্লে বোর্ডে ট্রেন ছাড়ার সময় দেওয়া হয় ১টা ৫৪ মিনিট৷ সে মোতাবেক যাত্রীরাও মালপত্র নিয়ে ট্রেনের সামনে এসে উপস্থিত হন৷ এরই মধ্যে একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে এই ট্রেন সফরের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানা যায়৷ রাজ্যে কর্মরত জনৈক বিহার নিবাসী জানান, রাজধানী এক্সপ্রেস আগরতলা থেকে চালু হওয়ায় ভিষণ সুবিধা হয়েছে৷ তাঁর চোখে সন্তুষ্টির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে৷ তিনি জানান, পরিবার নিয়ে বিহারের বারৌনি যাচ্ছেন৷ যেদিন তিনি জানতে পারেন আগরতলা থেকে দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের পরিষেবা শুরু হচ্ছে তখনই বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা স্থির করে নেন৷ মাঝ বয়সী এক যুবক জানিয়েছেন, এখনই দিল্লি যাবার কোন পরিকল্পনা ছিল না৷ কিন্তু, রাজধানী চালু হওয়ায় চটজলদি স্থির করেন দিল্লি গিয়ে এখনই জরুরী কাজ আগাম সেরে রাখবেন৷ এদিন অনেক যাত্রীই প্রথমবার রেল সফর করছেন৷ ষাটোর্দ্ধ এক বৃদ্ধা জানান, স্বামীকে নিয়ে দিল্লিতে মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন৷ সাধারণত, এই মরশুমে দিল্লি আগে কখনো যাননি৷ কিন্তু, আগরতলা থেকে সরাসরি রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লি যাওয়া যাবে শুনার সাথে সাথেই মেয়ের সাথে দেখা করার পরিকল্পনা নেন৷ এমন বহু মানুষ রাজধানী এক্সপ্রেস সফর করবেন বলে উৎসাহে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন৷
আগরতলা থেকে আনন্দবিহার রাজধানী এক্সপ্রেসে মোট ১৪টি বগি রয়েছে৷ এই ট্রেন আনন্দবিহার পর্যন্ত ২৪৫৭ কিলোমিটার দূরত্ব ৪১ ঘন্টায় অতিক্রম করবে৷ যাত্রাপথে ১২টি স্টেশনে থামবে৷ ট্রেনটি প্রতি সোমবার ৬টা ৩০ মিনিটে আগরতলা থেকে ছেড়ে বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আনন্দবিহারে গিয়ে পৌঁছাবে৷ ফিরতি পথে প্রতি বুধবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে আনন্দবিহার থেকে ছেড়ে শুক্রবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আগরতলায় এসে পৌঁছাবে৷ শনিবার এই রাজধানী স্পেশাল ট্রেনটি দিল্লির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান চালক সুখেন দাস, সহ চালক পি কে সাহু এবং রক্ষী কৃষ্ণ প্রসাদ দেব৷
অবশেষে দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে সবুজ পতাকা দেখিয়ে যাত্রা শুরু হয় রাজধানী এক্সপ্রেসের৷ সঙ্গে সঙ্গেই স্টেশনে উপস্থিত মহিলারা উলুধবনি দিয়ে এই এক্সপ্রেস যাত্রার মঙ্গল কামনা করেন৷

