নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ ডিসেম্বর৷৷ শিল্পে স্বয়ম্ভরতা তাহলে আর হচ্ছে না এরাজ্যে৷ অন্তত শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে

সংশয় প্রকাশ করেন তাতে এটাই স্পষ্ট বলে মনে হয়েছে৷ কিন্তু শিল্পের পরিবর্তে বিকল্প অর্থনীতি হিসেবে কৃষিতে যেভাবে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার সাথে বাস্তবের ফারাক রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে৷ শনিবার আগরতলায় ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অনেকটা হতাশার সুরেই বলেন, আমাদের রাজ্যে শিল্পের বিকাশ হতে অনেক সময় লাগবে৷ কারণ তিনি মনে করেন না, বেসরকারী পুঁজি এই অঞ্চলে বিশেষ করে ত্রিপুরায় ঢালাওভাবে বিনিয়োগের কোন সম্ভাবনা রয়েছে৷ ফলে, এই রাজ্য আদৌ কোনদিন শিল্পে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠবে কিনা সেই প্রশ্ণ আজ খোদ মুখ্যমন্ত্রীই তুলে আনলেন৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যে কৃষিতে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন৷ কিন্তু সাথে এও বলেন, কৃষি যেখানে অর্থনীতির মূল ভিত্তি সেদিক দিয়ে আমরা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি৷ এখানেই বিকল্প অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাস্তবের সাথে ফারাকের বিষয়টি উঠে আসছে৷
তাঁর বক্তব্য, এখন অনেক কৃষিজ ফসল বাইরে পাঠানো হচ্ছে৷ কারণ, এমন অনেক ফসল রয়েছে যেগুলি রাজ্যে এখন উদ্বৃত্ত৷ তাই তিনি কৃষিতে জোর দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেন৷ তাঁর মতে, কৃষি হচ্ছে অর্থনীতির মূল ভিত্তি৷ শুধু রাজ্যের নয়, দেশীয় অর্থনীতিরও মূল ভিত্তি৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে কৃষিতে আমরা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি বলে আক্ষেপ করেন৷ ফলে, শিল্প যেখানে অনিশ্চিত, তাই বিকল্প অর্থনীতির প্রশ্ণে স্বাভাবিক কারণেই কৃষির উপর বেশি করে জোর দিতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন৷ পাশাপাশি, কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতির লক্ষ্যে তাঁর দাওয়াই, পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এক ফসল, দুই ফসল এবং পারলে তিন ফসল করা যায় কিনা সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ অবশ্য, কৃষিকে নির্ভর করে বিকল্প অর্থনীতি সম্ভব বলেই দৃঢ় বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর৷ তাঁর বক্তব্য, ৪৬ থেকে ৪৭ ভাগ জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষ্যে কতটা জায়গায় কৃষি সম্ভব সেই জায়গাকে সেচের আওতায় আনতে হবে৷ তার জন্য তিনি লক্ষ্য স্থির করে বলেন, ৬০ শতাংশ কৃষিযোগ্য জমি সেচের আওতায় আনতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী কৃষিযোগ্য জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করার জন্য রাজ্যের সমস্ত প্রকৌশলীদের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
শিল্প যেখানে অনিশ্চিত সেখানে কৃষিকে ভিত্তি করে বিকল্প অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু রাজ্যে যত বেকার রয়েছেন, শিল্প ছাড়া তত কর্মসংস্থান একা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ চাকুরী না জুটলে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে না৷ ফলে, উৎপাদিত ফসল বাইরে পাঠাতে হবে৷ তাতে রাজ্যবাসীর হেসেলে যে আগুন লেগে রয়েছে, তা নিভবে কিভাবে সেই প্রশ্ণই এখন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, অনেক ফসল এখন রাজ্যের বাইরে পাঠানো হচ্ছে৷ কিন্তু বাজারে কৃষিজ ফসলের দাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ অর্থনীতিবিদদের মতে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলে জিনিষের মূল্য হ্রাস পায়৷ কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে বিশেষ করে রাজধানী আগরতলায় ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, বেগুন ইত্যাদির দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ ন্যাশনাল প্রাইস ইন্ডেক্স মোতাবেক অন্যান্য রাজ্যের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, অনেক রাজ্যের তুলনায় এরাজ্যে কৃষিজ ফসলের দাম বেশি৷ ফলে, শুধু কৃষিকে ভিত্তি করে বিকল্প অর্থনীতি রাজ্যবাসীর হেঁসেলে কতটা প্রভাব ফেলবে সেই প্রশ্ণ থেকেই যাচ্ছে৷