চিকিৎসায় গোলক ধাঁধা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি হওয়া সত্বেও সাধারণ মানুষ যেন গোলক ধাঁধায় পড়িয়া যাইতেছেন৷ দিনে দিনে চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ যেন সাধারণের আয়ত্বের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে৷ চিকিৎসায় বিপুল অগ্রগতির সুফল নিতে পারিতেছেন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা৷ গরীব অংশের মানুষের বা রোগীদের সামনে উন্নত চিকিৎসা এক অলীক স্বপ্ণ ছাড়া কিছুই নয়৷ ফলে, চিকিৎসার অভাবে কত রোগীকে যে অকালে ঝারিয়া পড়িতে হয় তাহার হিসাব কে রাখে? গরীব অংশের মানুষের সামনে কিছুটা আশার সঞ্চার করিয়াছিল আয়ুর্বেদ চিকিৎসা৷ সরকারী স্তরে তাহার প্রচারও করা হইয়ােেছ৷ কিন্তু মানুষের মনে এই চিকিৎসা তেমন আশা ও ভরসা দিতে পারিতেছে না৷ সাধারণ এলোপ্যাথি চিকিৎসার উপর বেশীর ভাগ রোগী নির্ভর করিতেছেন৷ কিন্তু চিকিৎসার বিপুল খরচ গরীব রোগীদের বিড়ম্বনার দিকে ঠেলিয়া দিতেছে৷ এই চিকিৎসার প্রাথমিক শর্ত হইতেছে রোগ যাচাই৷ আর রোগ নিরূপণ করিতে প্যাথলজি রিপোর্টের এত ব্যয় বহন করাও সাধারণ রোগীদের পক্ষে অসম্ভব৷ ইহা ছাড়াও ওষুধ ইত্যাদির দাম তো পাল্লা দিয়া বাড়িয়াই চলিয়াছে৷ সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতখানি সেই প্রশ্ণ উঠিয়াছে৷
সারা দেশে বাবা রামদেবের বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ওষুধ বাজারে চালু আছে৷ রামদেবের পতঞ্জলীর ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী হয়৷ কি নাই সেখানে৷ সারা দেশে রামদেবের প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস গড়িয়া উঠিয়াছিল তাহাই এখন বিরাট ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়াছে৷ বিশাল পঁুজির সন্নিবেশ ঘটিয়াছে৷ ইউপিএ সরকারের আমলে বাবা রামদেব স্বস্তিতে ছিলেন না৷ দিল্লীর সমাবেশে তাহাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করিয়াছিল৷ ছদ্মবেশ ধারণ করিয়াও পালাইতে পারেন নাই৷ কিন্তু জমানা বদল অর্থাৎ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর তো রামদেব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করিয়াছেন বলা যায়৷ তাঁহার বিশাল উদ্যোগে দেশবাসী প্রকৃত পক্ষে কতখানি উপকৃত হইতেছেন সেই প্রশ্ণ উঠিতেই পারে৷ বৃহস্পতিবার আগরতলায় জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী যে অভিযোগ তুলিয়াছেন তাহা যদি সত্যি হয় তাহা হইলে তো বিপজ্জনক পরিস্থিতিই আসিয়া দাঁড়াইয়াছে৷ আয়ুর্বেদকে ধর্মের মধ্যে টানিয়া আনা হইতেছে৷ ভারতের প্রাচীন, ঐতিহ্যশালী এই চিকিৎসা ব্যবস্থা আয়ুষ মন্ত্রকের হাতছাড়া হইয়া পঁুজিপতিদের দখলে চলিয়া যাইতেছে৷ আর এই ক্ষেত্রে ওষুধের গুণমান নিয়া প্রশ্ণ উঠিয়াছে বলিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোর গলায় দাবী করেন৷ আগরতলায় জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবসের অনুষ্ঠানে বিষ্ণু দেবতার ছবিতে মাল্যদান করা হয়৷ বিষ্ণুর অবতার নাকি ধন্যন্তরী যিনি আয়ুর্বেদের আবিস্কারক৷ এই ধন্যন্তরীর জন্মদিনকে আয়ুর্বেদ দিবস হিসাবে পালন করা হয়৷ ধর্মের সঙ্গে আয়ুর্বেদের কোথায় মিল রহিয়াছে তাহারও প্রশ্ণ তুলিয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাহসী ভূমিকা নিয়াছেন বলা যাইতে পারে৷ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট কথা ভারতের প্রাচীন এই চিকিৎসাশৈলী কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য এমনটা হইতে পারে না৷ যদি তাই হইয়া থাকে তাহা হইলে অন্য ধর্মের মানুষ এই চিকিৎসায় উপকারিতা কি করিয়া পাইবেন? এই প্রশ্ণ আজ খুব বেশী প্রাসঙ্গিক৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী সরাসরি রামদেবের পতঞ্জলী সংস্থার দিকে আঙুল তুলেন৷ দেশের আয়ুর্বেদ এখন রামদেবের কব্জায়৷ সারা দেশেই তাহাদের তৈরী আয়ুর্বেদ ওষুধ বিক্রি হইতেছে৷ এখানে মৌলিক প্রশ্ণ তুলিয়াছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ রামদেবের আয়ুর্বেদ ওষুধের গুণমান কে বিচার করিতেছে?
রামদেবের আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরীর প্রক্রিয়া ও গুণমান নিয়া গুরুতর প্রশ্ণ তুলিয়াছিলেন সিপিএম সাংসদ বৃন্দা কারাত৷ তখন দেশজুড়িয়া প্রশ্ণ উঠিয়াছিল৷ রামদেবের প্রচেষ্টা জনহিতার্থেই এই বিশ্বাস নির্ভর মানুষই পতঞ্জলী সংস্থার ওষুধ ব্যবহার করিতেছেন৷ আজ সময় আসিয়াছে, আয়ুর্বেদ ওষুধের গুণমান সম্পর্কে আরও বেশী নিশ্চিত হওয়ার৷ কেন্দ্রীয় সরকারকে এব্যাপারে উদ্যোগী হওয়াই সংগত৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির পরও সাধারণ মানুষের সামনে গভীর সংকটের হাতছানি৷ চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশী মূল্য দিতে হয়৷ যাহা সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলিয়া যাইতেছে৷ আয়ুর্বেদে বা হোমিওপ্যাথিতে অনেক দুরারোগ্য রোগীর যদি নিরাময় হয় তাহা হইলে সরকারী স্তরে জনস্বার্থে পদক্ষেপ নেওয়া যাইতে পারে৷ আজকের চিকিৎসা অগ্রগতির সুযোগ গরীব রোগীরা কিভাবে নিতে পারে তাহাই আজ গভীর প্রশ্ণ আনিয়া দিয়াছে৷