নির্বাচনের দামামা বাজিয়েই দিলেন মমতা, সিপিএম হঠাতে বঙ্গের তৃণমল নেতা মন্ত্রীরা ঘাঁটি গড়বেন ত্রিপুরায়

MAMATA ASTABALনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ আগস্ট৷৷ রাজ্যে এসে ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়েই দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সিপিএম হঠানোর ডাক দিয়ে জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে নেতা মন্ত্রিরা বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে এরাজ্যে ঘাঁটি গড়বেন৷ শুধু তাই নয়, তিনি স্বয়ং একাধিকবার রাজ্যে আসবেন বলেও জানিয়ে গেলেন৷ পরিবর্তনের প্রশ্ণে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ব্যবসাক্ষেত্রে বাংলা ত্রিপুরার পাশে থাকবে বলে স্বপ্ণ দেখালেন৷ পাশাপাশি জোর গলায় দাবি করে বলেন, কিভাবে কর্মসংস্থান করতে হয় তা আমরা জানি৷ তৃণমূল নেত্রীর আরো দাবি, এরাজ্যে সিপিএম’র যাবার পালা এসে গেছে৷ তাই সিপিএমকে বিসর্জনের ডাক দিয়ে এরাজ্যে পরিবর্তন আসবেই বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷ এজন্য সকলে মিলে ঝাঁপাবেন বলে জানালেন৷ আর তাতে বাঁধা আসলে, অত্যাচারী সিপিএমকে ছেড়ে কথা বলবেন না বলেও তৃণমূল নেত্রী হুঙ্কার দিলেন৷ পাশাপাশি তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে চলতে ভোকাল টনিক দিলেন তিনি৷
পশ্চিমবঙ্গে বামেদের কোমড় ভেঙ্গে দিয়ে এবার মমতার পরবর্তী লক্ষ্য ত্রিপুরা৷ ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের পর ২০১৬তেও বামেদের চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করে এখন বঙ্গ নিয়ে নিশ্চিন্ত তৃণমূল নেত্রীর নজর পড়েছে এরাজ্যের দিকে৷ লক্ষ্য যেখানে সর্বভারতীয় তকমা অর্জন করা, সেক্ষেত্রে ত্রিপুরাকে দিয়ে যাত্রা শুরু করতে চাইছেন তিনি৷ সেই মোতাবেক কংগ্রেসত্যাগী বিধায়কদের কাঁধে ভর করে মঙ্গলবার বিবেকানন্দ ময়দানে জনসমাবেশে সিপিএমকে ত্রিপুরা ছাড়ার জন্য হুঙ্কার দিলেন৷ ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার আসনে বসার পর থেকেই তৃণমূল নেত্রী ত্রিপুরায় প্রভাব বিস্তার করার স্বপ্ণ দেখছিলেন৷ এদিন জনসমাবেশে অকপটে জানালেন, এতদিন এরাজ্যে তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারে নির্ভরতা পাচ্ছিলেন না৷ কংগ্রেসত্যাগী বিধায়ক সুদীপ বর্মণ সহ ছয় বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এখন তিনি এরাজ্যেও পালাবদল করতে পারবেন বলে আস্থা পেয়েছেন৷ তাই ত্রিপুরায় পরিবর্তনের জন্য সমতল থেকে পাহাড় সর্বত্র দলের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই ঝাঁপাবেন বলে জানালেন৷
চিটফান্ড প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের খন্ডন করে মমতা ব্যানার্জি জানান, ১৯৮০ সালে বাম আমলেই চিটফান্ড সংস্থা গড়ে উঠেছিল৷ আর এরাজ্যেও বাম আমলেই ১৪২টি চিটফান্ড সংস্থা গড়ে উঠেছিল৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকার কোন ব্যবস্থা কেন নেয়নি সে প্রশ্ণ তুলেন তিনি৷
এদিন সমাবেশের মঞ্চে জাতি উপজাতি উভয় অংশের মানুষের ভাবাবেগকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ বাংলা ভাষার পাশাপাশি তিনি কক্বরক ভাষাতেও কয়েক লাইন বক্তব্য রেখেছেন৷ শুধু তাই নয়, মানুষই এরাজ্যে পরিবর্তন আনবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷ তাঁর মতে, বাংলায় পরিবর্তন হয়েছে৷ ত্রিপুরাতেও তা সম্ভব৷ এজন্য নিজেদের কৃতিত্ব দেওয়ার বদলে তিনি মানুষকে সাথে নিয়ে এরাজ্যে পরিবর্তন করতে হবে বলে দাবি করেন৷
অবশ্য ত্রিপুরাবাসীর ভাবাবেগকে ছঁুতে গিয়ে রেল নিয়ে রাজনীতি করতেও কসুর রাখেননি তৃণমূল নেত্রী৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, রেল নিয়ে অনেক নাচানাচি হচ্ছে৷ সিপিএম কিংবা বিজেপি কাউকেই এরাজ্যে রেল পরিষেবা চালু করার জন্য কৃতিত্ব দিতে চাইছেন না তিনি৷ তাঁর দাবি, ২০১০ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ত্রিপুরায় ব্রডগেজ লাইনের অনুমোদন দিয়েছিলেন৷ পরবর্তী সময়ে মুকুল রায়কে দিয়ে ধর্মনগর-আগরতলার মধ্যে রেল চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন৷
এদিন, শুধু সিপিএম নয়, কংগ্রেসকেও সাঁড়াশি আক্রমণ করেছেন মমতা ব্যানার্জি৷ তাঁর দাবি, এরাজ্যে সিপিএম দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার পেছনে কংগ্রেসের মদত রয়েছে৷ পুরনো ইতিহাস তুলে ধরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ত্রিপুরায় বামেরা ক্ষমতায় এসেছিল৷ পশ্চিমবঙ্গেও এই কংগ্রেস বামেদের সাথে গাঁট বেঁধে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাস্ত করার জোর চেষ্টা করেছিল৷ তবে, মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে৷ আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, এক সময় আমিও কংগ্রেস করতাম৷ কিন্তু যখন দেখলাম কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম’র ‘বি’ টিমে পরিণত হয়েছে, তখন আর তাদের সাথে নিজেদের জড়িয়ে না রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করলাম৷ তিনি জোর গলায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস জন্ম না নিলে বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হত না৷ তাঁর দাবি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের গোপন সমঝোতা এরাজ্যেও আগামীদিনে প্রত্যাখাত হবে৷
এদিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী সুর চড়ালেও সিপিএম এবং কংগ্রেসকে যেভাবে সমালোচনার তীরে বিঁধেছেন ততটা আক্রমণ করেননি গেরুয়া শিবিরকে৷ কেবল দিল্লী বাংলা এবং ত্রিপুরার দুঃখ বুঝেনা সেই আক্ষেপ করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ সেজন্য তাঁর দাবি ত্রিপুরায় বিজেপি কিছুই করতে পারবে না৷
এদিন, উন্নয়নের প্রশ্ণে এরাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারকে এক হাত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷ তিনি বামেদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ণ ছঁুড়ে দিয়ে বলেন, পাহাড়ে কি করতে পেরেছেন৷ স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর প্রশ্ণ, কোন ভালো হাসপাতাল তৈরি করতে পেরেছেন? নিজের রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা পান না বলেই ত্রিপুরার মানুষ বর্হিরাজ্যে ছুটে যান৷
এদিন, সমাবেশের মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী দাবি করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন হয়েছে৷ এরাজ্যেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে৷ সুশাসন আসবে এই রাজ্যে৷ পাহাড়-সমতল সবখানেই পৌঁছাবে উন্নয়ন৷ আর এজন্য এখনই সিপিএমকে বিসর্জন দেওয়ার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷
এদিকে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপিকে সমানভাবে আক্রমণ করেছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী কংগ্রেস ও সিপিএমের মিতালীর প্রসঙ্গ টেনে নীতি ও আদর্শের প্রশ্ণে সুদীপ বর্মনকে বাহবা দিয়েছেন৷ এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী, সুদীপ রায় বর্মন ও বিশ্ববন্ধু সেন এবং দিবাচন্দ্র রাঙ্খল বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৮ এর বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷