নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জুলাই ৷৷ মায়ের শ্রাদ্ধ বাসরেই মৃত্যু হল পুত্রের৷ মৃত পুত্রের নাম নিতাই শীল৷ ঘটনা কল্যাণপুর থানাধীন দ্বারিকাপুর গাওসভায়৷ বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যু হয়েছিল মায়ের৷ শনিবার মৃত্যুর একাদশ তম দিনে বাড়িতে পারলৌকিক ক্রিয়ার আয়োজন করা হয়৷ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে শ্রাদ্ধ বাসরে ব্রাহ্মনের সঙ্গে গলায় গলা মিলিয়ে মায়ের সদ্গতি কামনায় মন্ত্র উচ্চারণ করছিলেন পুত্র নিতাই শীল৷ মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতেই বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন৷ এমনকি শ্রাদ্ধ বাসরেই লুটিয়ে পড়েন৷ লোকজনরা তাকে সেখান থেকে নিয়ে যান কল্যাণপুর হাসপাতালে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি৷ কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ মায়ের শ্রাদ্ধ বাসরে পুত্রের মৃত্যুর সংবাদে গোটা এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে৷ আত্মীয় পরিজন সহ এলাকাবাসী ছুটে আসেন ঐ বাড়িতে৷ মায়ের শ্রাদ্ধ বাসরে পুত্রের মৃত্যুতে আকাশ বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠে৷ কান্নার রোলে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ কায়েম হয়৷ কাতারে কাতারে মানুষজন জড়ো হন ঐ বাড়িতে৷ একদিকে সাজানো গোছানো শ্রাদ্ধ বাসর৷ অন্যদিকে পুত্রের মৃতদেহ৷ অনেকেই অবশ্য মন্তব্য করেছেন সৌভাগ্যবান পুত্র মায়ের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন জীবন উৎসর্গ করে৷ এর চেয়ে পুণ্যের মৃত্যু আর কিছু হতে পারে না বলেও তাদের অভিমত৷ তবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, একটানা ১১ দিন ফলমূল আধ পেটা খেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন শোকাহত পুত্র নিতাই শীল৷ এরইমধ্যে শ্রাদ্ধ বাসরে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে৷ ধর্মপ্রাণ মানুষের মন্তব্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মৃত্যুর কারণ যাই হোক না কেন, প্রয়াত নিতাই শীলের বাড়িতে বর্তমানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে৷ চারদিকে শুধুই শোকের ছায়া৷
উল্লেখ্য, প্রয়াত নিতাই শীল ছিলেন এক সময়ের গ্রাম প্রধান৷ এলাকায় তিনি সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত৷ সর্বদা সহাস্য নিতাই শীলের মৃত্যুতে এলাকার ছোট বড় সকলেই মর্মাহত৷ শুধু তার নিজ বাড়ি দ্বারিকাপুরেই নয়, কল্যাণপুর সহ আশপাশ এলাকার নিতাই শীলের মৃত্যুর সংবাদে রীতিমতো শোকের আবহ বিরাজ করছে৷ এধরনের মৃত্যু কালেভদ্রেই ঘটে থাকে৷ স্বাভাবিক কারণেই মায়ের শ্রাদ্ধ বাসরে শোকাহত পুত্রের মৃত্যুর ঘটনাটি এলাকার মানুষজনকে রীতিমতো স্তম্ভিত করে দিয়েছে৷ একদিকে মায়ের শ্রাদ্ধ বাসর পড়ে রয়েছে, অন্যদিকে এদিনই নিতাই শীলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এলাকার অগণিত মানুষের শেষ অশ্রুজলে৷ প্রসঙ্গত, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য বাড়িতে আত্মীয় পরিজন ও সমাজের লোকজনদের ভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল৷ সবকিছুই রইল পড়ে৷ দ্বারিকাপুরের এই হৃদয় বিদারক ঘটনা মাতৃ শোকে শোকাহত পুত্রের জীবন উৎসর্গের এক ইতিহাস রচনা করে গেল৷ এনিয়েই গুঞ্জন চলেছে গোটা এলাকায়৷
2016-07-24