৩১শে জুলাইয়ের জোর প্রস্তুতি চলছে রাজ্যে, একইদিনে দিল্লী থেকে আগরতলা যাত্রীরেলকে সবুজ পতাকা দেখাবেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি / আগরতলা, ২৩ জুলাই৷৷ বহু প্রতিক্ষার অবসান হচ্ছে ৩১শে জুলাই৷ ত্রিপুরাবাসীর স্বপ্ণের

শনিবার আগরতলা স্টেশন পরিদর্শন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন পরিবহণমন্ত্রী মানিক দে সহ অন্যান্যরা৷ ছবি নিজস্ব৷
শনিবার আগরতলা স্টেশন পরিদর্শন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন পরিবহণমন্ত্রী মানিক দে সহ অন্যান্যরা৷ ছবি নিজস্ব৷

দূরপাল্লার যাত্রীরেল সূচনার মূহুর্তটিকে এখন ভাগ করে নিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও৷ জাতীয় রাজধানী থেকে দিল্লি-আগরতলা রেলের ফ্ল্যাগ অফ করবেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী দপ্তর সূত্রে এমনটাই জানা গেছে৷ তাতে, একদিকে আগরতলা থেকে ৩১ জুলাই আগরতলা-দিল্লি যাত্রীরেলের সূচনা করবেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু৷ অন্যদিকে, একইদিনে দিল্লীতে বসে রাজ্যবাসীর বহু প্রতিক্ষিত মুহুর্তের সাক্ষি হবেন প্রধানমন্ত্রীও৷ সূত্রের দাবি, ৩১ জুলাই একই সময়ে দিল্লি-আগরতলা ট্রেনটিও নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে ছাড়বে৷ এনিয়ে রেল মন্ত্রকও ইতিমধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে৷ সূত্রের মতে, ব্যস্ততার কারণে প্রধানমন্ত্রী আগরতলায় ফ্ল্যাগ অফ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি৷ ত্রিপুরার দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী কিংবা রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই হতে হবে দূরপাল্লার যাত্রী রেলের সূচনা৷ ফলে, রেলমন্ত্রীই আগরতলা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীরেল ফ্ল্যাগ অফ করতে মত দেন৷ এখন ধারণা করা হচ্ছে, ত্রিপুরাবাসীকে বড় চমক দিতেই প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ সাথে এও চর্চা হচ্ছে, সেদিনই আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন কিনা৷ হয়তবা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে দুই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে হতে পারে এই রেল প্রকল্পের শিলান্যাস৷ এমন সম্ভাবনাও এখন দেখা দিয়েছে৷ তাতে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এদিকে, দূরপাল্লার যাত্রীরেল সূচনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে৷ শনিবার বিকালে সচিবালয়ে পরিবহণমন্ত্রী মানিক দে-র সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে মুখ্যসচিব যশপাল সিং, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ডঃ প্রফুল্লজিৎ সিনহা, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ দাস, পূর্ত দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারের প্রধান সচিব লোকরঞ্জন, পরিবহণ দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক, পশ্চিম জেলার জেলা শাসক, পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার ও এস পি ট্রাফিক, ডুকলী, মোহনপুর, বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান, বিশালগড়, মোহনপুর পুর পরিষদের চেয়ারম্যানগণ এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ রেলওয়ের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন এন এফ রেলের চীফ ইঞ্জিনীয়ার, ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনীয়ার, চীফ এডমিনিষ্ট্রিটিভ অফিসার প্রমুখ৷ বৈঠকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আগরতলা থেকে দিল্লির মধ্যে চলা এই যাত্রী রেলটি সম্ভবত এ সি এক্সপ্রেস হবে৷ প্রথমে হবে এর ট্রায়াল রান৷ এর সময়সূচী এবং কোন কোন ট্রেশনে ট্রেনটি থামবে তা চূড়ান্ত হবে সোমবার নাগাদ৷ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে রেলওয়ে বোর্ডের পাঁচ, ছয়জন আধিকারিক আগরতলা আসবেন৷ থাকবেন রেলওয়ের কনষ্ট্রাকশন এবং অপারেশন শাখার জেনারেল ম্যানেজার৷
বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী মানি দে জানান, ৩১ তারিখ দুপুর ১২ টায় আগরতলা রেলওয়ে ষ্ট্রেশন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে৷ এই ঐতিহাসিক অনুষ্টানের সাক্ষী থাকার জন্য আগরতলা পুর পরিষদ ছাড়াও মোহনপুর, জিরানীয়া ডুকলী, বিশালগড় থেকে ব্যাপক অংশের মানুষ জমায়েত হবেন৷ পরিবহণ মন্ত্রী জানান, জিরানীয়া মহকুমা থেকে লোকজন নিয়ে আস গাড়ীগুলি খয়েরপুর বাইপাস দিয়ে ঢুকবে৷ অনুরূপভাবে বিশালগড় এবং ডুকলী থেকে আসা গাড়ীগুলিও ঢুকবে বাইপাস দিয়ে৷ কেবলমাত্র সদর ও মোহনপুর থেকে আসা গাড়ীগুলি মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করবে৷ গাড়ীগুলি সিদ্দি আশ্রমে লোকজনদের নামিয়ে দিয়ে জুটমিল মেলা চত্বরের কাছে গিয়ে পার্ক করা থাকবে৷ এই অনুষ্ঠানটিকে সফল করে তোলার জন্য পরিবহণ মন্ত্রী সব অংশের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন৷
মুখ্যসচিব ওয়াই পি সিং বলেন, ৩০শে জুলাই’র মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে নিতে হবে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানকে সফল করে তোলার জন্য রেলওয়েকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে৷ এই অনুষ্ঠান ঘিরে আগরতলা শহরের বেশ কিছু জায়গায় তোরণ নির্মাণ করা হবে৷ সন্ধ্যায় সুকান্ত একাডেমীতে হবে সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷
এদিকে, পরিবহণ দপ্তরের মন্ত্রী মানিক দে, মুখ্যসচিব যশপাল সিং, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক কে নাগারাজ, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের বিশেষ সচিব এম এল দে, পরিবহণ দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক, পশ্চিম জেলার জেলা শাসক মিলিন্দ রামটেকে সহ পদস্থ আধিকারিকগণ আজ দুপুরে আগরতলা রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন৷ সে সময় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য বাস্তুকার হরপাল সিং সহ রেলওয়ের পদস্থ আধিকারিকগণও উপস্থিত ছিলেন৷ তারা আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্থান এবং প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আগরতলা রেলস্টেশনে সাজিয়ে তোলার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে৷