বিশেষ্ব প্রতিনিধি, সাব্রুম, ১৭ জুলাই৷৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুমের লুধুয়া চা বাগানে এক মহিলা শ্রমিককে পিটিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহিলার মৃত্যু হয়৷ মৃত মহিলার দেহ অভিযুক্তরা হাসপাতাল থেকে এনে তার ছেলে ও আত্মীয় পরিজনদের না জানিয়েই চা বাগানের জঙ্গলে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে৷ এলাকাবাসী ঘটনা দেখে ফেলায় বিপত্তি দেখা দেয়৷ বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে মৃতদেহটি সেখান থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়৷ ঘটনাকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সাব্রুমের লুধুয়া চা বাগানের মহিলা শ্রমিক চঞ্চলা দাসকে প্রচন্ড মারধর করার পর হাসপাতালে মৃত্যু হয়৷ অভিযুক্তরাই মহিলার ছেলেকেও মারধর করে একটি ঘরে দুদিন ধরে বেঁধে রাখেন৷ চঞ্চলা দাসের মৃতদেহ তার ছেলেও আত্মীয়পরিজনদের না জানিয়েই হাসপাতাল থেকে এনে চা বাগানে মাটি চাপা দেয়৷ বাগানের অন্যান্য লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলেন৷ তার মৃতার ছেলে রুবেল দাসকে খোঁজে বের করে ঘটনাটি জানান৷ বিষয়টি সাব্রুম থানার পুলিশকেও জানানো হয়৷ খবর পেয়ে সাব্রুম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে৷
সেখান থেকে মহিলার মৃতদেহটি তুলে পুনরায় সাব্রুম হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ৷ ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনরা জানান, গত শুক্রবার চা বাগানের নাইট গার্ড ভোলা রায়ের বোনের সাথে চঞ্চলা দাসের ঝগড়া হয়৷ এদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ভোলার বোন দিপালি দাস তার ভাই চা বাগানের নাইট গার্ড ভোলা রায়কে ফোন করে আনে৷ দিপালি দাসের স্বামী রাজু দাস এবং ভোলা রায় চঞ্চলা দাসের ছেলে রুবেল দাসকে ঘর থেকে টেনে বের করে লাঠি দিয়ে প্রচন্ড মারধর করে৷ ছেলেকে মারধর করছে দেখে মা চঞ্চলা দাস ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন৷ দুই অভিযুক্ত মিলে চঞ্চলা দাসকে প্রচন্ড মারধর করেন৷ মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের পেছনে ফেলে চলে যায় হামলাকারীরা৷ মহিলার ছেলে রুবেল দাসকে মারধর করে ভোলার ঘরে দুদিন আবদ্ধ করে রাখা হয়৷ শনিবার সকালে চঞ্চলা দাসকে ঘরের পেছন থেকে তুলে নিয়ে সাব্রুম হাসপাতালে ভর্তি করায় ভোলা ও রাজু দাস৷ রবিবার ভোরে চঞ্চলা দাসের সাব্রুম হাসপাতালে মৃত্যু হয়৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহটি ভোলার হাতে তুলে দেয়৷ ভোলা এবং রাজু অন্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মৃতদেহটি চা বাগানের জঙ্গলে মাটি চাপা দেবার চেষ্টা করেন৷ তখনই চা বাগানের অন্যান্য শ্রমিকরা বিষয়টি দেখে ফেলেন৷ এলাকার লোকজন মহিলার ছেলেকে খোঁজে বের করে বিষয়টি জানান৷ খবর পাঠানো হয় সাব্রুম থানায়৷ চাঞ্চল্যকর খবর পেয়ে সাব্রুম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে৷ সেখান থেকে মহিলার মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুনরায় সাব্রুম হাসপাতালে নিয়ে যায় ময়না তদন্তের জন্য৷
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুধুয়া চা বাগানে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ এই ঘটনার খবর পেয়ে চা বাগান ম্যানেজার সহ অন্যান্যরাও ছুটে যান৷ তারাও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ৷ চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ঘিরেও নানা প্রশ্ণ দেখা দিয়েছে৷ হামলায় জখম মহিলার মৃত্যুর পর মৃতদেহটি ময়না তদন্ত না করেই কিভাবে হাসপাতাল থেকে ভোলা রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল সেই প্রশ্ণও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে৷ এর পেছনে বড় ধরনের চক্রান্তের ইঙ্গিত বহন করে চলেছে৷ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে এবং প্রকৃত অভিযুক্তরা সনাক্ত হবে৷
2016-07-18

