নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লী, ১৬ জুলাই৷৷ একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সাথে একজোট হয়ে চলার

পরামর্শ দিয়েছেন, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের অভিযোগ রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব করা হচ্ছে৷ কেন্দ্র রাজ্যের সমন্বয় নিয়ে এই চাপানউতোর উঠে এল শনিবার দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তঃরাজ্য পর্ষদের বৈঠকে৷ এদিন,
দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে রাজ্যগুলিকে গোয়েন্দা সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রের সঙ্গে বিনিময় করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ এই বিনিময়ের মাধ্যমে সচেতন ও আপডেটেড থেকে সুরক্ষা আঁটসাট করা যেতে পারে বলে জানান তিন৷ পাশাপশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজ্য কেন্দ্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি৷
রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠকে মোট ৩১ জনের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি৷ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলির বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীদের রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে অনুরোধ করেছেন তিনি৷ পড়ুয়াদের শুধুমাত্র পঁুথিগত বিদ্যায় সীমাবদ্ধ না রেখে সার্বিক বৃদ্ধির স্বার্থে তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি৷ গত দশ বছর পরে কেন্দ্র রাজ্য বৈঠক আয়োজন করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে গণতন্ত্র, সমাজ এবং শাসনব্যবস্থা উন্নত হবে৷ তিনি আরও বলেছেন, ১৪ তম অর্থ কমিশনের সুপারিশ মঞ্জুর হওয়ার ফলে রাজ্যগুলি কর বাবদ আরও বেশি অর্থ পাবে৷ পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলি ২ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা পাবে৷ কয়লা খনির নিলামের ফলে রাজ্যগুলি ৩৩৫ লক্ষ কোটি টাকা পাবে৷ এছাড়া অন্যান্য খনির নিলাম থেকে আরও ১৮ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে জানা গিয়েছে৷
এদিকে, এদিন রাষ্ট্রপতি ভবেন আন্তঃরাজ্য পর্ষদের এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, এখন থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক যেন বছরে কমপক্ষে একবার আয়োজন করা হয়৷ তিনি বলেন, এই বৈঠক দেশের অবস্থার উপর আলোকপাত করার, আলোচ্য বিষয় ও অসন্তোষ সম্পর্কে আলোচনা করার এবং এসবের সাফল্য ও অসাফল্যের উপর চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ করে দিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেন ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যকে অবহেলা করে রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ অর্থাৎ রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে৷ তাই রাজ্যগুলির কাছে আরো বেশি ক্ষমতা ও কতৃত্ব হস্তান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ বহু কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ায় ত্রিপুরার মত রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে৷ তিনি দাবী করেছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কর বন্টনের অনুপাত যেন কমপক্ষে ৫০ঃ৫০ হয়৷
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বলেন, দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি সমস্যা এখনো রয়েছে৷ রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে গোেেয়ন্দা তথ্য আদান প্রদানের ব্যাপারটিকে ত্রিপুরা সরকার স্বাগত জানাচ্ছে৷ তবে, আইন শৃঙ্খলা দেখাশোনার বিষয়টি রাজ্যের অন্তর্গত৷ এই প্রসঙ্গে মানিক সরকার বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে গিয়ে যেন রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করা না হয়৷ অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার ব্যাপারে পুঞ্চি কমিশনের সুপারিশগুলি যদি গৃহীত হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ সাধারণ আইন শৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে সংবিধান প্রদত্ত কোন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি রাজ্যগুলি কোন দিন মেনে নেবেনা৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পরামর্শ দিয়েছেন, কোন অজুহাতে রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার যেন পরিত্যাগ করে৷ এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, রাজ্যের কর্মসংস্থান, পরিকাঠামো উন্নয়ন, রেগা প্রকল্প সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন৷

