manikনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুলাই৷৷ আগরতলা পুর নিগম এলাকা সম্প্রসারিত হলেও এখনও পর্যন্ত নানা সমস্যা রয়ে গেছে৷ বিশেষ করে রাস্তাঘাট, পানীয় জল, বর্জ ব্যবস্থাপনা, ড্রেন ইত্যাদি৷ এই সব সমস্যা নিরসনে পুর নিগমের তরফে যতটুকু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ রয়েছে পুর নিগমের এলাকায় বসবাসকারী জনগণের৷ বিভিন্ন সময়ে পুরবাসীরা কাঠগড়ায় তুলেছেন নিগমকে৷ এই পরিস্থিতিতে আগরতলা পুর নিগম এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্ণিত করে সেগুলোর সমাধানের জন্য বছর ভিত্তিক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷
মঙ্গলবার মহাকরণে আগরতলার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এই নির্দেশিকা দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী মানিক দে, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা, মুখ্যসচিব যশপাল সিং, প্রধান সচিব এস কে রাকেশ ও লোকরঞ্জন, পুর নিগমের সি ই ও ডা মিলিন্দ রামটেকে এবং পূর্ত, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি, নগরোন্নয়ন, ত্রিপুরাহাউজিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন বোর্ড প্রভৃতি দপ্তর ও সংস্থার পদস্থ আধিকারিকবৃন্দ৷ সভায় ৪৯ টি ওয়ার্ড সম্বলিত আগরতলা পুর নিগম এলাকা প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোকে চিহ্ণিত করে সেগুলোর সমাধানের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে বছরভিত্তিক একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যে সমস্যাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি এই অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে বলেন সেগুলো হল, যেখানে জনপদ আছে সেখানেই সব ঋতুর উপযোগী রাস্তা তৈরি, বিজ্ঞানভিত্তিক পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও কবার ড্রেইন নির্মাণ, সংযোজিত এলাকা সহ যেখানে যেখানে প্রয়োজন বিদ্যুতের সংযোগ ও স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা করা, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ সুনিশ্চিত করা, বসবাসের উপযোগী স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সুনিশ্চিত করে হাউজিং ও স্যানিটেশন সহ সমস্ত সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে বস্তি এলাকার উন্নয়ন, আগরতলার সামগ্রিক স্যানিটেশন, গৃহহীনদের জন্য বাসগৃহ নির্মাণ, আগরতলার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, জৈব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রেখে এবং সৌন্দর্যায়নের মাধ্যমে আগরতলার জলাশয়গুলোর সার্বিক ম্যানেজমেন্ট, পুর নিগম এলাকার মধ্যে অবস্থিত বাজারগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ, রাস্তার পাশে ও জনবহুল এলাকায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, আগরতলা পুর নিগম এলাকাকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে ওয়েস্ট ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্টের আরো সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রভৃতি৷ এই সমস্যাগুলোকে চিহ্ণিত করে এবং এগুলোর সমাধানের জন্য অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলোকে বাদ দিয়ে আগরতলার সমস্যার সমাধান হবে কি করে৷ এজন্যই একটা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কাজ শুরু করতে হবে৷ এই অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার জন্য সভায় একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আগরতলা পুর নিগমের মুখ্য বাস্তুকারের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে রয়েচেন পূর্ত দপ্তরের রোড অ্যান্ড ব্রিজ এবং বিল্ডিং এর দুই মুখ্যবাস্তুকার পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার হাউজিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন বোর্ডের সি ই ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের ডিরেক্টর, বিদ্যুৎ নিগমের আগরতলা শাখার এজিএম পুর নিগমের ডেপুটি কমিশনার ও সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার৷ আগামীকাল থেকেই এই কমিটিকে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ চিহ্ণিত সমস্যাগুলোকে ভিত্তি করে আগামী এক মাসের মধ্যে যে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হবে তা নিয়ে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তারপরই তা চূড়ান্ত করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এমন নয় যে এই সমস্যাগুলো আজই চিহ্ণিত করা গেল৷ সমস্যাগুলো চিহ্ণিত করা হয়েছে আগেই এবং এগুলোর সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ চলছে৷ নগরোন্নয়ন দপ্তর ও আগরতলা পুর নিগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলার সামগ্রিক উন্নয়নে ইতিপূর্বে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের যে কাজগুলো যেমন চলেছে সেগুলো তেমন ভাবেই চলতে থাকবে৷ শুধু নতুন করে নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক আর একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে৷ তিনি বলেন, যে সমস্যাগুলো আগরতলার ক্ষেত্রে চিহ্ণিত করা হল, এমন সমস্যা রাজ্যের অন্যান্য পুরসভা ও নগর পঞ্চায়েত এলাকাতেও রয়েছে৷ সেখানেও স্থানীয়ভাবে সমস্যাগুলোকে চিহ্ণিত করে সমাধানের রাস্তা খঁুজতে হবে৷ আগরতলার জন্য অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়ে গেলে অন্যান্য পুরসভা ও নগর পঞ্চায়েতগুলোর জন্যও এধরনের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ সভায় কাটাখালের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়ন নিয়েও আলোচনা হয়৷ এই প্রসঙ্গে অবিলম্বে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পূর্ত দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *