রোয়ানুতে বিধবস্ত বাংলাদেশ, ধেয়ে আসছে ত্রিপুরাসহ পূর্বোত্তরে

phalin cycloneনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ঢাকা, ২১ মে৷৷ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বাংলাদেশ তেইশটি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে৷ শতাধিক মানুষ জখম হয়েছেন৷ সহস্রাধিক মানুষ বাড়ি-ঘর ছাড়া৷ প্রবল বাতাসে বহু গাছ ভেঙে পড়েছে এবং বাড়ি ঘর বিধবস্ত হয়েছে৷ এই ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বাংলাদেশে তান্ডব চালিয়ে এবার ক্রমশ ধেয়ে আসছে পূর্বোত্তর ভারতের দিকে৷ আবহাওয়া বিভাগের মতে পূর্বোত্তরের ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড এবং আসামের পূর্বাঞ্চল ও অরুণাচল প্রদেশে এই ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু প্রকোপে বহু ক্ষয়ক্ষতি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ ইতিমধ্যে আসামের বরাক উপত্যকায় জনজীবন বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণে বরাক নদীর জল বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে৷ রাতের মধ্যে বৃষ্টি না থামলে বরাকের জল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ তাতে বরাক উপত্যকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়বে ত্রিপুরাতেও৷
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু শনিবার দিনভর বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় তান্ডব চালিয়েছে৷ চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে শতাধিক মানুষ জখম হওয়ার পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ ঝড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছিল শনিবার ভোররাত থেকেই৷ সাথে ছিল বৃষ্টি৷ বেলা দেড়টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে৷ এরপর ঝড়ের দাপট চলে আরও কয়েক ঘন্টা৷ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে চট্টগ্রামে এগার জন, নোয়াখালির হাতিয়ার জোয়ারে ভেসে তিনজন ও ফেনির সোনগাজিতে এক জন, কক্সবাজারে কুতুবদিয়ায় চাপা পড়ে ও নৌকার ধাক্কায় তিনজন, ভোলার তজমুদ্দিন ও দৌলতখানে ঘর চাপা পড়ে তিনজন, পটুয়াখালির দশমিনায় এক বৃদ্ধা এবং লক্ষ্মীপুর সদরে গাছ উপড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ জানা গিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে গত তিন বছরের আঘাত হানা প্রায় একই শক্তির দুই ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও মহাসেন এ মৃতের সংখ্যাকেও৷
এদিকে ১৫ মিনিটের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে তছনছ হয়ে গিয়েছে হায়দ্রাবাদ৷ মৃত্যু হয়েছে দুইজনের৷ আহতের সংখ্যা বহু বলে জানা গিয়েছে৷ শনিবার এই শহরের উপর দিয়ে ঘন্টায় ৫০ কিমি গতিবেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে৷ এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ রাস্তায় বড় বড় গাছ পড়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে৷
এদিকে, ২০১৩ সালের মহাবিপর্য্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে উত্তরাখন্ডে৷ শনিবার রুদ্রপ্রয়াগে মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে৷ তাতে বন্যা এবং ভূমি ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ ২০১৩ সালে প্রাকৃতিক বিপর্য্যয়ে সহস্রাধিক মানুষ মারা গিয়েছিলেন৷ বহু বাড়ি ঘর ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গিয়েছিল৷ এদিনের মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ২০১৩ স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করছেন অনেকেই৷
উল্লেখ্য, বৃষ্টিপাতকে ঘিরে প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকার সাথে এখন পূর্বোত্তরে ভারী বর্ষণে এবং ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কবলে পড়ে মহাবিপর্য্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ গত চবিবশ ঘন্টায় ত্রিপুরায় ১১০এমএম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা গিয়েছে৷ রবিবারও দিনভর বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়া বিভাগের৷ রাজধানী আগরতলা শহর সহ রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা শহর ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে৷ নদীগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে৷ বিভিন্ন স্থানে নির্মীয়মান কাজের তীব্র ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে৷ রেল লাইনে বিভিন্ন স্থানে ধস পড়েছে৷ পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে রেল লাইনে পড়েছে৷ যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ধসে পড়া মাটি সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং রেল পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে৷ এদিকে বিমান পরিষেবাও এদিন বিঘ্নিত হয়েছে৷ বেশ কয়েকটি উড়ান বিলম্বিত হয়েছে৷ সবমিলিয়ে এদিন দিনভর রাজ্যের জনজীবন বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে৷