ত্রিপুরায় এক সময় উপজাতি উগ্রপন্থীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ কোন্ রাজনৈতিক দলের ছিল তাহা বোধহয় প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিনহার হত্যাকান্ড প্রমাণ করিয়া দিল৷ সংবাদপত্রে ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট হিসাবে যাহা ফাঁস হইয়াছে তাহা যদি সত্যি হয় তাহা হইলে রাজ্যের উগ্রপন্থার ইতিহাসের অনেক প্রামাণ্য কাহিনীই জনসমক্ষে আসিবার কথা৷ বিমল সিন্হা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাপট দেখাইতেন না, তিনি জননেতা হিসাবেও যথেষ্ট শক্তির অধিকারী ছিলেন৷ রাজ্যে উপজাতি উগ্রপন্থীদের জন্মদাতা কাহারা, কাহারা এই বন্দুকধারীদের ক্ষমতা দখলের কাজে ব্যবহার করিতেন, কাহারা এই জঙ্গীদের বিরোধীদের জব্দ করিতে সচেষ্ট ছিলেন, মনে হয় ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট তাহারও আঁচ দিয়া দিবে৷ মন্ত্রী পদে আসীন হইয়া উপজাতি বন্দুকধারীদের সঙ্গে মাখামাখির পিছনে লক্ষ্য কি তাহা তো আর নতুন করিয়া বলিবার প্রয়োজন নাই৷ আজ অনেকটা উগ্রপন্থী মুক্ত রাজ্য ত্রিপুরা সারা ভারতের নজর কাড়িয়াছে৷ আজকের প্রজন্ম হয়তো জানেন না এই উপজাতি উগ্রপন্থীরা কি নিদারুন ভাবে গোটা রাজ্যকে সন্ত্রস্ত করিয়া তুলিয়াছিল, শ্মশান বানাইয়াছিল৷ একের পর এক গণহত্যা, অপহরণ, হামলা, চাঁদার জুলুম ইত্যাদি ঘটনায় রাজ্যের গ্রামপাহাড়ে স্বাভাবিক জীবন স্তব্দ হইয়া গিয়াছিল৷ একের পর এক উগ্রপন্থী দলের জন্ম হইয়াছে৷ কাতারে কাতারে আত্মসমর্পণের নাটকও হইয়াছে৷ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়া রাজ্যে শান্তি ফিরাইবার চেষ্টাও মানুষ দেখিয়াছে৷ রাজ্যবাসী ইহাও দেখিয়াছে যে, কিভাবে আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থী নেতারা ক্ষমতাসীন সিপিএম দলে যোগ দিয়া একেবারে নেতৃত্বস্তরে উপনীত হইয়াছেন৷ কথায় আছে ‘যে নালে উৎপত্তি সেই নালে বিনাশ’৷ বহু সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী নেতাকে জঙ্গীরা গুলিতে ঝাজরা করিয়া দিয়াছে৷ এই রকম ঘটনা বহুল বিভৎস ঘটনায় ত্রিপুরার মানুষকে অবর্ণনীয় আতংক ও যন্ত্রণাবিদ্ধ হইয়া কাটাইতে হইয়াছে৷
ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট এতকাল প্রকাশ না করিবার পিছনে কারণ হইতে পারে সেই ইতিহাসের পরিনাম ও জনমনে আসল রূপ প্রকাশ হইয়া পড়িবার ভয়৷ এরাজ্যে, বিভিন্ন দল উগ্রপন্থীদের নিয়া রাজনীতির পাশা খেলিয়াছেন৷ মৃতদেহের উপর দাঁড়াইয়া রাজনীতি করিয়াছেন৷ সেই নৃশংস রাজনীতির ইতিহাস তো ভুলিয়া যাওয়ার মতো নহে৷ কত শত শত মানুষ ওই নরখাদকদের গুলিতে প্রাণ হারাইয়াছে৷ কত গণহত্যার ঘটনা ঘটিয়াছে৷ সেই রাজনীতির ব্যবসায়ীরা এত রক্ত পান করিয়া আজ কিভাবে ঝাড়া হাত পা হইয়া গেলেন? শান্তির রাজ্যে সগর্ব ঘোষণায় দেশের অন্যান্য রাজ্যের প্রশংসা কুড়াইতেছে৷ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জানিতে চাহিয়াছেন রাজ্যের উগ্রপন্থী নির্মূলের আসল যাদু কি? ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট চাপা দিয়া রাখিবার মূল লক্ষ্যই ছিল সত্যিকে প্রকাশ না করা৷ হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার যখন বিধানসভায় এই রিপোর্ট প্রকাশের ঘোষণা দিয়াছে তখনই গোপনীয় রিপোর্ট ফাঁস হইয়া গেল কিভাবে? যদি সত্যি রিপোর্ট ফাঁস হইয়া যায় তাহা হইলে প্রশাসন যে কত ঢিলে ঢালা তাহাই আবার প্রমাণ করিয়া দিল৷ প্রমাণ করিয়া দিল সরকারের অভ্যন্তরে বিভিষণদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়াছে৷
ফাঁস হওয়া ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহা হইলে ইহাই স্পষ্ট হইয়া গেল যে, এরাজ্যে উপজাতি উগ্রপন্থীদের সঙ্গে মন্ত্রী বিমল সিনহার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল৷ এতথ্য জানা সত্বেও মুখ্যমন্ত্রী তাহা প্রতিরোধ করেন নাই৷ আর এই দায় তৎকালীন বাম সরকার এড়াইতে পারেন না৷ ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট রাজ্যে উগ্রপন্থার অনেক গোপন সম্পর্কের দরজা হয়তো খুলিয়া দিবে৷ যে উগ্রপন্থার কারণে ত্রিপুরা অনেক মূল্য দিয়াছে, যে প্রাণগুলি হরণ করা হইয়াছে, যেভাবে রাজপথ, গ্রাম গিরিকন্দর রক্তাক্ত হইয়াছে, গণহত্যার আগুনে ছারখার হইয়াছে, সেই দুঃস্বপ্ণের যাহারা নায়ক তাহারা কি জবাব দিবেন? দস্যু রত্নাকর বাল্মিকী হইয়াছিলেন৷ সেই ঘটনাই কি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিতে চালিয়াছে?
2016-03-22