আগরতলা, ৩০ নভেম্বর: বিদ্যুৎ নিগমের কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এদিন তিনি বলেন, পূজোর দিনগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবাকে স্বাভাবিক রাখতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্মীরা। বলেন সে কারণেই রাজ্যের পিএসইউ গুলোর মধ্যে খুব সম্ভবত বিদ্যুৎ নিগমই প্রথম পিএসইউ, যাদেরকে নভেম্বর মাসের বেতনের সঙ্গেই মহার্ঘ ভাতা প্রদান করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগমের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস ।এর জন্য প্রতি মাসে অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ৫৫ লক্ষ টাকা। টিপিটিএল এবং টিপিজিএল আলাদা পিএসইউ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এখনো যেহেতু টিএসইসিএল অর্থাৎ ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের ছাতার তলাতেই একসঙ্গে কাজ করছে এই সংস্থা সমূহ, টিএসইসিএল থেকে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মহার্ঘ ভাতা প্রদান একসঙ্গেই হবে । মন্ত্রী আরো বলেন কিছুদিন আগে বন্যার সময় এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, আধিকারিক এবং প্রকৌশলীরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, তা ধন্যবাদযোগ্য। এজন্য নিগম থেকে তাদেরকে এককালীন সামান্য উৎসাহ ভাতাও দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক ১১ লক্ষ ২৪ হাজার ৯১৮ জন । এর মধ্যে প্রিপেইড গ্রাহক ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৮৩ জন। পোস্টপেইড গ্রাহক ৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৩৫ জন। ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫৫ জন। রাজ্যে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ২৫০ মেগাওয়াট। রাজ্যে বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৬০০ মেগাওয়াট । এর মধ্যে রুকিয়া ১৮ মেগাওয়াট, রামচন্দ্রনগর ৪৫ মেগাওয়াট এবং পালাটানা ৫৩৭ মেগাওয়াট ।
তাঁর কোথায় , কেন্দ্রীয় সেক্টর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় —- লোকটাক ১১ মেগাওয়াট, কোপিলি ৮ মেগাওয়াট, কপিলী টু ২.২ মেগাওয়াট , এজি বি পি পি ১৪ মেগাওয়াট, এ জিটিপিপি ১২ মেগাওয়াট, ডিএইচইপি ৪ মেগাওয়াট ,আরএইচইপি ২৮ মেগাওয়াট, পালটানা ১১১ মেগাওয়াট , বিজি টিপিপি ৪৯ মেগাওয়াট, পিএআরই ৮ মেগাওয়াট, মনারচক ৬৫ মেগাওয়াট ( তবে বর্তমানে মনারচক বন্ধ আছে)।একমাত্র রুখিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে টিপিজিএল এর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৮ মেগা ওয়াট। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় ৬০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশের কাছে এই মুহূর্তে বকেয়া অর্থ ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে লেট পেমেন্ট সারচার্জ যুক্ত করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ করছে বলেও মন্ত্রী জানান।
বিদ্যুৎ মাশুল সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সর্বশেষ বিদ্যুতের ট্যারিফ বৃদ্ধি হয় ১ আগস্ট ২০২৪ থেকে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং আন্ত রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই ত্রিপুরা ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন এই ট্যারিফ বৃদ্ধি করে। আগে যেখানে গ্যাসের প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ২৩৮ টাকা ৩২ পয়সা, সেখানে বর্তমানে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য হয়েছে ৭০৪ টাকা ২৯ পয়সা। অর্থাৎ গ্যাসের মূল্য ১৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তরাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে আগে যেখানে প্রতিমাসে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পরিবহন খরচ হতো, সেখানে বর্তমানে প্রতিমাসে এই খরচ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি টাকায়। যা ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ আগস্ট ২০২৪ সালে ট্যারিফ বৃদ্ধি হওয়ার পর যা দাঁড়িয়েছে । সিঙ্গেল ফেজ ডোমেস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৩০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৬৮ জন । শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংখ্যা তিন লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। ৫১ ইউনিট থেকে ১৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৪৮ জন। ১৫১ ইউনিট থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংখ্যা ৬৬ হাজার ৩৪২ জন। ৩০০ ইউনিটের উপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৫৩ জন। হুকলাইন লাইন সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিত তথ্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ইং পর্যন্ত মোট ৫৪০ টি হুক লাইন বিরোধী অভিযান সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪১ টি হুকলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মিটার পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৮১০ টি। এর মধ্যে মিটারে বিদ্যুৎ চুরি ধরা পড়েছে ৫৪৯ টি ক্ষেত্রে।মোট জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৯৬ টাকা। এর মধ্য থেকে জরিমানা আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮৪২ টাকা ।এই অভিযানে গিয়ে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বকেয়া আদায় হয়েছে ১১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬১৩ টাকা।
পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় সরকারি ভর্তুকিতে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য মন্ত্রী এ দিন রাজ্যবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানান পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় এখন পর্যন্ত ৯৯৫৯ জন নাম নথিভূক্ত করেছেন। সমস্ত কাগজপত্র জমা করেছেন ৯৮৯ জন । এর মধ্যে ফিজিবিলিটি অ্যাপ্রুভাল পেয়েছেন ৯৮২ জন। আগরতলায় বিদ্যুৎ নিগমের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের আগে পর্যন্ত আগরতলায় আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন ছিল ২০৩ কিলোমিটার। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আগরতলায় এই আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের দৈর্ঘ্য ৪৭৭ কিলোমিটার। ২০২৪ ২৫ অর্থবছরে আগরতলার জন্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড পরিকল্পনা নিয়েছে,ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশন নং ১ এর আওতাধীন মোট ২১ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানো হবে । মোট তিনটি ১৫ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার ট্রান্সফর্মার বসানো হবে , যার ২ টি বসবে প্রগতি সাব স্টেশনে এবং ১ টি বসবে এন এস আর সি সি সাব স্টেশনে। ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশন নং ২ এর অধীনে মোট ২৪.৩ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর পরিকল্পনা আছে। ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স ডিভিশন এর অধীনে মোট ১১.১৫ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও মন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন।