BRAKING NEWS

আসন্ন শারদোৎসব, তিথি স্বল্পতায় চিন্তার ভাঁজ পুরোহিত মহলে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর: চারিদিকে এখন দেবী দুর্গার আগমন বার্তা। কিন্তু এবার যেন মা তার বাপের বাড়ী আসতে কিছুটা হলেও রুষ্ঠা। একদিকে ত্রিপুরাতে কয়েকদিন আগে ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষ সর্বস্য খুইয়েছেন। অন্য দিকে বঙ্গে রাস্তা ঘাটে স্লোগান উঠছে বিচার পাবে তিলোত্তমা, এরপরে হবে মহালয়া।

সবমিলিয়ে পুজোর পরিবেশ যে এবার একদম অনুকূল এমনটা বলা যাবে না। এরমধ্যে তিথি স্বল্পতায় পুরোহিত দের টিকি খাড়া হয়ে গেছে। এতো স্বল্প তিথির মধ্যে কি করে মহাপূজা হবে তা নিয়ে পুরোহিত ঠাকুরদের মধ্যে শুরু হয়েছে শাস্ত্র নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ। কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ীতে তো রীতিমতো পুরোহিতদের প্রশিক্ষণও হয়েছে। এবার ষষ্ঠী থেকে সব পুজোই ভোর রাত থেকে শুরু করতে হবে বলে নিদান দিয়েছেন পন্ডিত সমাজ। নুতন ধুতি কিংবা পায়জামা পাঞ্জাবী, কুর্তা পরে আর মেয়েদের নুতন শাড়ি পরে এবার দেবী দুর্গা কে অঞ্জলি দিতে হবে রীতি অনুযায়ী সকাল সাতটা আটটার মধ্যে।

কোন পুরোহিত পুজো কমিটির চাপে নিরঘন্ট না মানলে সেটা হবে অশাস্ত্রীয়। মহা পুজো হয় মূলত সূর্য সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী। কেও কেও পঞ্জিকা বদলের কথা বলে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসরণ করার কথা বলছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ পন্ডিত সমাজের মতে এভাবে পঞ্জিকা বদলানো যায় না। কারন মাতৃ আরাধনা হয় কালিকা পুরান, দেবী পুরান ইত্যাদির প্রদর্শীত মত অনুযায়ী। তাই এবার মহা ফাপরে বাড়ির পুজো থেকে শুরু করে ক্লাব সার্বজনীন, বারোয়ারি যাই বলি না কেন, সব পুজো। এবারের দুর্গা পুজোর ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, সব গুলো তিথিই পড়েছে রাতে বলে জানালেন পুরোহিত স্বপন ভট্টাচাৰ্য। কিন্তু রাতে তো দুর্গা পূজার বিধান নেই।

রাতে হোম, যজ্ঞ, কল্পারম্ভ কিছুই করা যাবে না। তাই সকালের দিকে যেটুকু তিথি পরেছে তার মধ্যেই পুজো সারতে হবে। তবে কি মা এবার তার ভক্ত দের পুজো গ্রহণ করবেন না? কারণ বিশিষ্ট পুরোহিতরা বলছেন খুব ছোট্ট করে, স্বল্প সময়ে, যেটুকু না করলেই নয় এভাবে মায়ের পুজো করতে হবে। ছাড় দিতে হবে অনেক ক্রিয়া কর্মের। ষষ্ঠীর ভোর রাতেই প্রস্তুত করে রাখতে হবে ষষ্ঠী, সপ্তমী ও সন্ধিপুজোর সমস্ত জোগাড়। প্রত্যেক পুজো মণ্ডপে তাই মায়ের কাজ করার কর্মী বাড়াতে হবে। তা সে পুরুষই হোক কিংবা মহিলা। অন্যান্য বার যেমন দেখি ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন ও ষষ্ঠী পুজো হয় এবারের তিথি সেই রকম না।

এবার ষষ্ঠী পূজার বোধন পঞ্চমীর সন্ধ্যেতেই করে নিতে হবে। অর্থাৎ ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার। ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ ৯ অক্টোবর বুধবার সকাল ৭:৩২ মিনিটে ষষ্ঠী ছেড়ে দেবে। সেই কারণে ষষ্ঠীর দিন সকালে ভোর চারটে তে উঠে ষষ্ঠী পুজোয় বসতে হবে। এই দিনই সন্ধ্যে বেলা আমন্ত্রণ ও অধিবাস করতে হবে। সপ্তমী পুজোর ভোজ্য সামগ্রী ও মহাস্নান এর দ্রব্যদি ষষ্ঠীর ভোর রাতেই সব ঠিকঠাক করে রাখতে হবে কারণ ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহা সপ্তমী তিথি সকাল ৭:২৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ।

সপ্তমী পুজোয় বসতে হবে ব্রাহ্ম মুহূর্তে। সাড়ে চারটে থেকে পাঁচ টার মধ্যে নব পত্রিকা স্নান ও প্রবেশ স্থাপন করতে হবে। পুরোহিতরা বারবার বলছেন পুজো হবে এবার সংক্ষিপ্ত। এমন কি যারা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন তাদের হাতে বারবার ফুল বেলপাতা দেবার ও সময় থাকবে না। ১১ অক্টোবর শুক্রবার মহা অষ্টমী ও মহা নবমী তিথি একদিনে পরেছে। কেবল ভোর ৬:৪৮ মিনিট পর্যন্ত অষ্টমী। সকাল ৭:১২ এর মধ্যে সন্ধি পুজো ও শেষ করতে হবে।

তাতেই বুঝা যায় ভোরের কোন সময় পুজোয় বসতে হবে। এতো ভোরে এই রাজ্যের বেশিরভাগ মণ্ডপে কেও থাকেনই না। কিন্তু পুজো করতে হলে ভোর তিনটে থেকে মণ্ডপে সবাই কে থাকতে হবে। পুরোহিত একা তো সব কিছু করতে পারবেন না। সকাল ৬ টার মধ্যে অষ্টমী পুজো শেষ করে পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে। সকাল ৯:২৪ এ মহা নবমী লেগে যাবে। তাই নবমীর পুজো ও ভোর আরতি অষ্টমী দিনেই করে নিতে হবে। ১২ অক্টোবর শনিবার সকাল ৫:৪৪ মিনিট পর্যন্ত নবমী। এরপর ই দশমী তিথি। এবার দেবীর দোলায় আগমন। যার ফল মরক, মহামারী। আবার দেবীর গমন ঘোটকে। যার ফল ছত্রভঙ্গস্থূরঙ্গমে। সম্বৎসরে মা একবারই আসেন মর্ত্য বাসী দের কাছে। সব দুঃখ ভুলে এই কটা দিন মানুষ মা কে নিয়ে মেতে থাকতে চায়।

তাই তিথি স্বল্পতা যেন মানুষ এর উৎসব আনন্দে কোন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেটাই সবাই কামনা করে। হোক না অষ্টমীর অঞ্জলি ভোর বেলা। ভোর বেলাতেই নুতন কাপড় পরে ভক্ত রা অঞ্জলি দেবে। পাঁজির তিথি তো আর বদলানো যাবে না। শিউলি এখনো তেমন ভাবে না ফুটলেও বন্যা কবলিত নদী তীরে কাঁশ তো জানান দিচ্ছে মায়ের আগমনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *