নয়াদিল্লি, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪: জয়পুরের জমজমাটপূর্ণ বাবারামদেব নগর বসতিতে একদল নারী নেত্রী স্যানিটেশনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় তৃণমূল স্তর থেকে। শত শত পরিবারের আবাসস্থল এই বসতিটি বছরের পর বছর ধরে অপর্যাপ্ত শৌচ ব্যবস্থার এর কারণে উত্তম পরিষেবার জন্য লড়াই করছিল। নর্দমা সংযোগের অভাব এবং দুর্বল পরিচালিত কমিউনিটি শৌচাগারের কারণে, বিশেষত মহিলারা নানা চ্যালেঞ্জ-এর শিকার হন। মঞ্জু রানা, সঞ্জু রানা, ছুটন বেগম এবং অন্যান্যদের মতো মহিলারা যখন স্যানিটেশন বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নেন তখন ধীরে ধীরে যেন সমস্ত কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে।
মৎস্যজীবী, বর্জ্য সংগ্রহকারী এবং গৃহকর্ত্রীর মতো বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা এই মহিলারা কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিএমসি) এবং একক উইন্ডো ফোরাম (এসডাব্লুএফ) গঠন করেন। তারা তাদের সমাজের নীচুতলা পর্যন্ত একটিই আওয়াজ গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তাদের প্রথম পদক্ষেপ ছিল স্যানিটেশন পরিচালনা এবং স্বচ্ছ ভারত মিশনের (এসবিএম) নির্দেশিকা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ। এই জ্ঞান নিয়ে তারা এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন যার মধ্যে সমাজকে জড়িত করা, প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং একটি স্থায়ী স্যানিটেশন মডেল তৈরি করা যায়৷
প্রত্যেকটা মহিলা নেত্রী আলোচনার মাধ্যমে এক একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপর নজর রেখে চলছিলেন এবং বয়স্ক, অবিবাহিত মহিলা, ভিন্নভাবে সক্ষম এবং বর্জ্য সংগ্রহকারীদের কাছেও তাঁরা পৌঁছেন। একসাথে, তারা সুরক্ষিত শৌচ ব্যবস্থার অনুশীলন এবং বর্জ্য পৃথকীকরণের বিষয়ে সচেতনতা প্রচারে অংশ নিতে ৪০০জনেরও বেশি বাসিন্দাকে একত্রিত করেন। এর ফল ছিল তাৎক্ষণিক। শৌচাগারবিহীন ১০০টি পরিবারের মধ্যে ২৫টি পরিবারে নতুন শৌচাগার নির্মিত হয়েছে, বাকি ৭৫টি শৌচাগার নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মহিলারা বিদ্যমান কমিউনিটি টয়লেটগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও গ্রহণ করেন, সেই সাথে সম্মিলিত দায়বদ্ধতা এবং মালিকানার অনুভূতি প্রত্যেকের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন।
স্যানিটেশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারীদের কণ্ঠস্বরের গুরুত্ব অনুধাবন করে নারী নেত্রীরা বস্তি উন্নয়ন কমিটির (এসডিসি) দ্বারস্থ হন, যেখানে প্রধানত পুরুষরা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন । তারা নারী এবং দুর্বল গোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট উদ্বেগের সমাধান নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী মহিলা প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তাদের প্রচেষ্টা কেবল স্যানিটেশন পরিকাঠামোর উন্নতিই করেনি বরং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে অবদান রাখতে শুরু করে, বসতির বাসিন্দাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনকে অনুঘটক করেছিল।
এই মহিলা নেতৃত্ব উন্নত স্যানিটেশনের প্রতি একটি বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলনের অংশ, যার উদাহরণ স্বভাব স্বচ্ছতা সংস্কার স্বচ্ছতা (৪এস) প্রচারাভিযান, যা স্বচ্ছ ভারত মিশনের দশম বার্ষিকী উপলক্ষে চালু হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর, ২০২৪ পর্যন্ত অব্যাহত এই প্রচারাভিযানটি বার্ষিক স্বচ্ছতাই সেবা উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে স্বচ্ছ ভারত দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এই প্রচারাভিযানটি শুধুমাত্র একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্যানিটেশনের মাধ্যমে মালিকানা, স্থায়িত্ব এবং মর্যাদার মূল মূল্যবোধের নীতিকে মূর্ত করে, যা বাবারামদেব নগরের মহিলাদের কাজের সাথে অনুরণিত হয়।
গত এক দশকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাফল্য নিজেই কথা বলে। হিসেবের খাতা দেখলে প্রকাশ হয় যে, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত, গ্রামীণ ভারতে ১১.৬৬ কোটি পরিবারে শৌচালয় নির্মিত হয়েছে, যা বিস্ময়কর ভাবে অগণিত গ্রামকে স্বাস্থ্যবিধির মানচিত্রে নিয়ে এসেছে। শহরাঞ্চলে, ৬৩.৬৩ লক্ষ স্বতন্ত্র গৃহস্থালি শৌচাগার (আইএইচএইচএল) নির্মিত হয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য স্যানিটেশনের উপলদ্ধতাকে উন্নত করেছে। এই সংখ্যাগুলি মিশনের ব্যাপকতার নিদর্শন। তবে বাবারামদেব নগরের মহিলাদের মতো ব্যক্তিগত সাফল্যের কাহিনীগুলো এই আন্দোলনের হৃদয়ের প্রকাশ।
তাদের প্রচেষ্টা দেখিয়েছে যে সমাজের যোগদান ছাড়া বিশেষত মহিলাদের ছাড়া সুস্থায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা অর্জন করা যায় না। দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে, এই মহিলারা কেবল তাদের বসতির স্যানিটেশন ব্যবস্থাকেই নতুন আকার দেননি, বরং তাদের সমাজ যেভাবে নারী নেতৃত্বকে উপলব্ধি করে তারও নতুন আকার দিয়েছেন। তাদের কাজ অনুরূপ সম্প্রদায়ের অন্যদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে, প্রমাণ করে যে স্থানীয় বাসিন্দারা নেতৃত্ব দিলে পরিবর্তন সম্ভব।
স্বচ্ছ ভারত মিশন যখন তার দশম বার্ষিকী উদযাপন করছে, তখন বাবারামদেব নগরের কাহিনী তৃণমূল স্তরের সক্রিয়তার শক্তির প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই বসতির মহিলারা দেখিয়েছেন যে একটি পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ভারত অর্জনের জন্য কেবল পরিকাঠামো নয়, এটি যে জনগণের সেবা করার জন্য তাঁদের অঙ্গীকার স্বরূপ, এবং যাতে নিজেদের জড়িত রাখাও প্রয়োজন। তাদের যাত্রা সাহস, স্থিতিস্থাপকতা এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা অগণিত মানুষকে তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের জন্য অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।