BRAKING NEWS

বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যে এখনও ৬৭টি ত্রাণ শিবির রয়েছে : সচিব

আগরতলা, ১১ সেপ্টেম্বর: বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখনও রাজ্যে ৬৭টি ত্রাণ শিবির রয়েছে। এই শিবিরগুলিতে ৩ হাজার ৮৭৩ জন মানুষ আশ্রিত রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পানীয় জল, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৩৬ জন বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ জন নিখোজ রয়েছেন। বন্যায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ২৬ জনের পরিবারকে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ এবং ৭ জনকে অন্তর্বতীকালীন আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকীদেরও শীঘ্রই প্রদান করা হবে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পান্ডে একথা জানান। তিনি জানান, সমগ্র রাজ্যে সম্পূর্ণ, মারাত্রাক এবং আংশিকভাবে ৬২ হাজার ২০৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪৮৩টি ঘরের জন্য ১১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার অন্তর্বতী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, রাজ্যের সমস্ত স্কুল ও কলেজগুলি চালু হয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক। রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রাছাত্রীদের প্রায় ২০ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে মিড-ডে-মিলও চালু আছে। খাদ্য দপ্তরের উদ্যোগে আগামী ২ মাস রেশন কার্ড প্রতি অতিরিক্ত ১০ কেজি চাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই চাল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সচিব জানান, রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার ৬৬৪টি রাস্তার মধ্যে ৮ ১টি রাস্তার পুনসংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮৭টির কাজ চলছে, ৫৫৩টির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন এবং ৮৪৩টি রাস্তা সংস্কারের এস্টিমেট করা হয়েছে।

পূর্ত দপ্তর রাজ্যের বন্যা ক্ষতিগ্রস্থ প্রধান রাস্তাগুলির পুনরুদ্ধার ও মেরামতের কাজ আগামী ৫ই অক্টোবর ২০২৪’র মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। জলসম্পদ দপ্তরের ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার ১৩৬টি এল আই প্রকল্পের মধ্যে ১৪০টি প্রকল্পের মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। ৪২৬টি কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২টি স্বাস্থ্য শিবিরে ১ লক্ষ ১০ হাজার ২৮৯ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের জলবাহিত রোগের খবর নেই। বিদ্যুৎ দপ্তর সমস্ত সাব-ডিভিশন এবং ডিভিশনগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। অমরপুর, শান্তিরবাজার, সাব্রুম এবং উদয়পুরে ৯৫-৯৮ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে ১০০ শতাংশ করা হবে বলে সচিব জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, আজ সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহার সভাপতিত্বে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনাসমূহ নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করা হয়। সভায় মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা, প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব সহ বিভিন্ন দপ্তরের সচিব এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি, বর্তমান অবস্থা এবং পুন:সংস্কারমূলক কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। সভায় রাজ্যের ৮টি জেলার জেলাশাসকগণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার বন্যা ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান, বর্তমান স্থিতি ও পুনরুদ্ধার কাজের চিত্র তুলে ধরেন। সচিব জানান, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার পূর্বে গত ২৭ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীকালে ৩০শে আগস্ট ২০২৪ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও সচিবগণ এই দাবি উত্থাপন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও অর্থ দপ্তরের পরামর্শক্রমে এই আর্থিক প্যাকেজ চূড়ান্ত হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব আরও জানান, আজ মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি দপ্তরের সচিবদের বন্যাকালীন সময়ে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ যেভাবে করা হয়েছিল ঠিক সেইভাবে একই গতিতে পুনরুদ্ধার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন বর্তমান ত্রাণ শিবিরগুলিতে গুণমান সম্পন্ন খাবার, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উপর। এই সপ্তাহের মধ্যে বন্যায় মৃত পরিবারগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ দ্রুত দেওয়ার কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস ও ত্রাণ, পুর্নবাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের অধিকর্তা জে ভি দোয়াতী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *