দুর্গাপুর,১৬ জুন (হি. স.) : ‘বামের ভোট রামে।’ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা হতেই শিল্পশহরের রাজনীততে জোর চর্চা উঠেছিল। ২০২৪ সালে সেটা যেন বুমেরাং হল সিপিএম থেকে বহিস্কারে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘাসফুল শিবিরে যোগ দুর্গাপুরের দাপুটে বাম নেতার যোগদানে। যদিও, সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। এবং আগের দাবীতেই অনড় ঘাসফুল শিবির।
দুর্গাপুরের দাপুটে সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। রবিবার সকালে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ। ক্রমাগত দলের লাইন বিরোধিতা। শঙ্খলাভঙ্গের জন্য তাকে বহিস্কার করে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। এদিন বিকেলে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর অরবিন্দ এভিনিউতে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার,বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের সদ্য বিজয়ী তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাত ধরেই তৃণমূলে যোগদান করলেন পঙ্কজ রায় সরকার। পঙ্কজ রায় সরকারকে গোলাপ ফুল দিয়ে তৃণমূলে বরণ করে নেন বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদ। তৃণমূলে যোগদানের পরেই পঙ্কজ রায় সরকার পুরোনো দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন,“ ছাত্র রাজনীতি থেকে সিপিএমের অনুগত সৈনিক ছিলাম। কোন আকাঙ্কা ছিল না। দলের জন্য চাকরি ছেড়েছি। ২০১৬ সাল থেকে দলের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়। তিনটি প্রশ্ন ছিল। যেটা রাজ্য কনফারেন্সে আলোচক হিসাবে
কেন্দ্রীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি,প্রকাশ কারাতের সামনে বলেছিলাম। প্রথমত: সিপিএমের ভোট বিজেপিতে যাচ্ছে কেন? সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যদি লড়াই হয়, এটা শুভ লক্ষন নয়। দ্বীতিয়ত, কংগ্রেস- আইএসএফ জোট বামপন্থার ভরসা করা মানুষ ভরসা করা ছেড়ে দিয়েছে। তৃতীয়ত: গরিব মানুষের কথা যদি বলা হয়। তাহলে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কটাক্ষ না করে ১০০০ টাকার ভাতা দেড় হাজার করার অনুরোধ তোলা হোক। তাতে গরিব মানুষ উপকৃত হবে। মানুষ আর সিপিএমকে বিশ্বাস করছে না। যদিও গরিব মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি সিপিএম। এসব কথার কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি দল। উল্টে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি বলা হয়েছিল। সেকারনে দলের মধ্যে বিতর্ক হয়।”
দলত্যাগের কারন হিসেবে পঙ্কজ আরও বলেন, “ দুর্গাপুরকে পুনরগঠনে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেবে বলে বিশ্বাস করি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে আমি অনুপ্রাণিত। পুরোনো দলে কখনই আকাঙ্খা ছিল না। তৃণমূলেও কোন আকাঙ্খা থাকবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাই তৃণমূলে যোগদান করেছি।” তৃণমূলে যোগদানের ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে রানীগঞ্জের সিপিএম কার্যালয়ে দল বিরোধী কাজের জন্য পঙ্কজকে যিনি বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেছিলেন সেই সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জী। তাঁর সাথে দিলীপ ঘোষের যোগ আছে বলেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন পঙ্কজবাবু। এদিকে সিপিএম নেতার তৃণমূল যোগ দেওয়াকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর ব্যানার্জী বলেন,” ২০১৯ লোকসভায় বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে বিজেপি জয়ী হওয়ায় তৃণমূল দাবী করে, বামের ভোট রামে গেছে। এখন ২০২৪ তৃণমূল এই আসনে ভালো ফল করেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে বামের ভোট তৃণমূলে গেছে। আজকের পঙ্কজ রায় সরকারের মতো সুবিধাভোগী নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেটা প্রমাণ করে।”
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুর সিটু শ্রমিক সংগঠনের দরুন বামেদের দূর্গ বলেই এক সময় পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামে। গত ২০১৯ সালে লোকসভায় দুর্গাপুরের দুই বিধানসভায় সিপিএম পেয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার ভোট। বিজেপি পেয়েছিল প্রায় দু লক্ষ ভোট। এবং তৃণমূল পেয়েছিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৩১০ ভোট। প্রায় ৭৬ হাজার ভোটে বিজেপি এগিয়েছিল। এবারে লোকসভা ফলাফলে দুর্গাপুর পুরসভা এলাকায় তৃণমূল ভোট পেয়েছে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১২, বিজেপি পেয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮৬৬, সিপিএম ৩৪ হাজার ৩১৩ টি ভোট। গতবারের থেকে তৃণমূলের ব্যাবধান অনেকটাই কমেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন,”মুখ্যমন্ত্রীর কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন পঙ্কজবাবু। পাশাপাশি ১২০০ জন সিপিএম শ্রমিক সংগঠনের কর্মী সমর্থক সামিল হয়েছে। তবে বামের ভোট তৃণমূলে যাওয়াকে উড়িয়ে পাল্টা তিনি বলেন,” এবারেও বামের ভোট রামে পড়েছে। বাংলায় মানুষ মমতা ব্যানার্জীকে চায়।”